জরিপ বলছে ট্রাম্পকে হারানো সহজ হবে না
সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর শাসনামলের সর্বোচ্চ জনসমর্থন পেয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসির করা জরিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ শতাংশ মানুষ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের কাজে সন্তুষ্ট। গত এপ্রিলে এই হার ছিল ৩৯ শতাংশ।
গতকাল রোববার প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পের কাজে সন্তুষ্ট নন। প্রতি দশজনের ছয়জন এখনো মনে করেন, ট্রাম্পের কথাবার্তা ও ব্যবহার মোটেই প্রেসিডেন্টসুলভ নয়।
গত আড়াই বছরের মধ্যে এটিই ট্রাম্পের সর্বোচ্চ জনসমর্থন। এই জরিপে তিনি যে আগের তুলনায় ৫ পয়েন্টে এগিয়ে গেলেন, তার প্রধান কারণ দেশের অর্থনীতি। ৫১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতি নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। মোট নয়টি ক্ষেত্রে গৃহীত এই জরিপে শুধু অর্থনীতির প্রশ্নেই ট্রাম্পের জনসমর্থন ৫০ শতাংশের ওপরে। সবচেয়ে কম সমর্থন তিনি পেয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে, মাত্র ২৯ শতাংশ মানুষ তাঁর কাজে সন্তুষ্ট। বৈদেশিক নীতি প্রশ্নে ৪০ শতাংশ মানুষ তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
একই জরিপে ডেমোক্রেটিক পার্টির যে সদস্যরা প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলের বাছাই পর্বে লড়ছেন, তাঁদের সঙ্গে ট্রাম্পের সমর্থনের তুলনামূলক একটা ছবিও বেরিয়ে এসেছে। এই দলের শীর্ষ পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র জো বাইডেনই ট্রাম্পকে অনায়াসে পরাজিত করতে সক্ষম। বাকি চারজন বার্নি স্যান্ডার্স, কমলা হ্যারিস, এলিজাবেথ ওয়ারেন ও পিট বুটিজিয়েজ। এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তাঁরা সবাই ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হবেন। তবে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের তুলনায় ১০ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন।
নির্বাচনী বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনীতির হাল ভালো থাকলে ট্রাম্পকে হারানো খুব কঠিন কাজ হবে। অর্থনীতি ভালো এবং কোনো বড় ধরনের বহির্গত সংকট নেই—এমন অবস্থায় কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচিত হননি, সে উদাহরণ হাতে গোনা। সে কথা উল্লেখ করে ডেমোক্রেটিক নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ ডাগ সসনিক ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এক উপসম্পাদকীয়তে খোলামেলাভাবেই বলেছেন, দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে চলেছেন ট্রাম্প।
ডেমোক্র্যাটদের জন্য অন্য সমস্যা—দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন মৌলিক প্রশ্নে অব্যাহত বিভক্তি। মধ্যপন্থা ও বাম পন্থা—এই দুই ভাগে দলের নেতারা আগে থেকেই বিভক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর ট্রাম্পবিরোধী নতুন যেসব সদস্য কংগ্রেসের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দলের পুরোনো নেতৃত্বের তুলনায় অনেক বেশি বামঘেঁষা।
দলের নেতৃত্বের সঙ্গে এই বামঘেঁষা অংশের সবচেয়ে বড় ফারাক অভিশংসনের প্রশ্নে। প্রায় ১০০ জন কংগ্রেস সদস্য অবিলম্বে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরুর পক্ষে। কিন্তু স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মনে করেন, পর্যাপ্ত প্রমাণ ছাড়া অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হলে তা ডেমোক্র্যাটদের জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হবে। সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন প্রশ্নেও দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বামপন্থীদের ফারাক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এক সপ্তাহ আগে বামপন্থীদের আপত্তি সত্ত্বেও পেলোসির জোরাজুরিতে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসী রক্ষণাবেক্ষণ প্রশ্নে একটি আইন গৃহীত হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পেলোসি এই আইনের বিরোধিতাকারীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে বলেন, মোটে চারজন কংগ্রেস সদস্য এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন।
পেলোসির এই মন্তব্যের পাল্টা সমালোচনা করে কংগ্রেস সদস্য রশিদা তালিব বলেছেন, ‘স্পিকার পেলোসি যেভাবে আমাদের ভিন্নমতকে খাটো করে দেখার চেষ্টা করছেন, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’