৫৫ বছর পর থামল কাঁচি
অবশেষে কাঁচিটি তুলে রাখলেন তিনি। তাঁকে বলা হতো ব্রাইটন বিচের নরসুন্দরদের রাজা। চুল কাটাছাঁটাই শুধু নয়, এর সজ্জায়ও তিনি অন্য অনেকের কাছেই অনুসরণীয়। তেমন পারদর্শী না হলে কী আর কেউ ৫৫ বছর ধরে নিজের জায়গা অক্ষুণ্ন রাখতে পারেন। নাম তাঁর জ্যাক স্কলনিক। জ্যাক’স বারবার শপের এ কর্ণধার অবশেষে ৭৬ বছর বয়সের সীমায় দাঁড়িয়ে বিদায় বলেছেন অর্ধশতাব্দীর পেশাকে। তুলে রেখেছেন চুল-সজ্জার সব সরঞ্জাম।
৫৫ বছর কম সময় নয়। কারও কারও এমনকি জীবনের দৈর্ঘ্যই তো এত হয় না। কিন্তু জ্যাক স্কলনিক এই এতটা দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন শুধু মানুষকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে। হ্যাঁ, এটা তাঁর পেশাই ছিল। কিন্তু এর সঙ্গে তাঁর আবেগও তো কম নয়। ব্রাইটন বিচের ১৩ স্ট্রিটে ১৯৬৪ সালে তিনি তাঁর সেলুনটি খোলেন। এর পর কেটে গেছে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়। মাঝে স্নায়ুযুদ্ধ তুঙ্গে উঠেছে, উঠতে উঠতে এক সময় থেমে গেছে। বিশ্ব দেখেছে দ্বিমেরুর বিশ্বকাঠামোর এক-মেরুতে রূপান্তর। আমেরিকার জনগণ দেখেছে নানা পরিবর্তন। কিন্তু জ্যাক স্কলনিকের কাঁচি থামেনি। জ্যাক স্কলনিক এতটাই জনপ্রিয় যে, তাঁর কাছে এখনো তাঁর শুরুর দিকের খদ্দররা আসেন। জ্যাক স্কলনিক এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে হাজির করেন ন্যাথানকে। ব্রুকলিন পেপারকে তিনি বলেন, ‘ন্যাথান যখন প্রথম আমার কাছে আসে, তখন তার বয়স মাত্র ১০ বছর। সে নিয়মিতই আসত। আর আমরা নিজেদের মধ্যে কমিক বই বিনিময় করতাম। সে এখনো আসে।’
বুঝতে বাকি থাকে না যে, কিশোর বয়সে নরসুন্দর পেশাকে বেছে নেওয়া জ্যাকের কাছে আসা ন্যাথানও এখন বৃদ্ধই। দীর্ঘ জীবনে তাঁরা এক চুল কাটার বদৌলতেই পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। এই সম্পর্ক শুধু পেশাগত নয়। এখানে আছে নানা বিনিময় ও আবেগের যোগ। এটা ঠিক, এত দীর্ঘ সময়ে জ্যাকের পক্ষে তাঁর সেলুন একই জায়গায় রাখা সম্ভব হয়নি। স্থান বদল করতে হয়েছে। বর্তমানে তাঁর দোকানটি রয়েছে ব্রাইটন ১৪ ও ১৫ স্ট্রিটের মধ্যবর্তী ব্রাইটন বিচ অ্যাভিনিউয়ে। নতুন জায়গায় এসে মানিয়ে নেওয়ার মতো করেই জ্যাককে আয়ত্ত করতে হয়েছে হাল-ফ্যাশনের নানা ছাঁট। বর্তমানে এমনকি তিনি বাজকাট নামে পরিচিত চুলের ছাঁটেও বেশ সড়গড়। সব বয়সী গ্রাহকদের মধ্যেই তিনি জনপ্রিয়।
শুধু চুল কাটার জন্যই নয়। জ্যাক’স বারবার শপ বরাবরই স্থানীয়দের আড্ডাস্থল হিসেবে কাজ করেছে। বিশেষত স্থানীয় কমিউনিটির বয়স্ক মানুষেরা তাঁদের অবসর সময় কাটাতে আসতেন এখানে। ফলে সামাজিক দিক থেকেও তাঁর দোকানটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শিপসহেড বের অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভ কিম্ব্রোইচের ভাষায়, ‘আমরা এখানে বসে কমিউনিটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলতাম। এখানে আমি ১৯৮০-এর দশক থেকে নিয়মিত আসি। আমি তাঁর পরিবার ও জীবন সম্পর্কে ধরতে গেলে অনেক কিছুই জানি। অনেক সমস্যার সমাধান এখানকার আলোচনাতেই উঠে আসত। বিশেষত জ্যাকের সঙ্গে এমন অনেক কিছু নিয়েই আলাপ হতো, যা নিয়ে হয়তো আমি আর কারও সঙ্গেই আলাপ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব না।’
জ্যাক স্কলনিক মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নরসুন্দর হিসেবে নিবন্ধিত হন। এত পেশা থাকতে কেন তিনি এ পেশা বেছে নিলেন? জ্যাকের ভাষায়, ‘যেহেতু আমি নাচতে বা গাইতে পারি না, তাই আমি নাপিত হয়েছি।’ এক কথায় শিল্পের টানেই তিনি এ পেশা বেছে নিয়েছেন। মানুষকে সাজানোটাও তো একটা শিল্পই। এত বছর পর এসে সে শিল্পের উপকরণগুলো তিনি তুলে রাখতে যাচ্ছেন।