হলুদ ক্যাব থেকে আয় কমেছে ৪৪%
গত কয়েক বছর ধরেই নিউইয়র্ক নগরীতে হলুদ ক্যাব ব্যবসায় ধস নেমেছে। বিশেষ করে লিমোজিন, ট্যাক্সি, উবার, লিফটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি রাস্তায় চলাচল শুরুর পর থেকেই যেন সব বদলে গেছে। ২০১৩ সাল থেকে ছয় বছরে হলুদ ক্যাব থেকে আয় ৪৪ শতাংশ কমেছে। নিউইয়র্ক নগরীর ট্যাক্সি অ্যান্ড লিমোজিন কমিশন (টিএলসি) গত ৩০ মে এ তথ্য জানিয়েছে।
টিএলসির তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ মাসে হলুদ ক্যাব থেকে আয় ২০১৩ সালের একই সময়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের মার্চে এ ক্যাব থেকে আয় হয়েছিল ১৯ কোটি ৩,৯ লাখ ৯১ হাজার ৭৮৬ ডলার, যা ২০১৯ সালের মার্চে কমে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
গত মার্চে হলুদ ক্যাবগুলো মাসে গড়ে ৯ হাজার ১০০ ডলার পর্যন্ত উপার্জন করেছে। মেডেলিয়ানপ্রতি ২০১৩ সালের মার্চে মাসিক ভাড়া ১৪ হাজার ৪৩২ ডলার আয় হতো। ২০১৯ সালের মার্চে এ আয় ৯ হাজার ১২৭ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ গত ছয় বছরে হলুদ ক্যাবে ভাড়া থেকে মাসিক আয় কমেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। এ অবস্থায় ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স ও চালকেরা আগামী মাসে আলবেনিতে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছেন। কয়েক মাস আগে চালু হওয়া আড়াই ডলারের কনজেশন চার্জটি বাদ দেওয়ার জন্য তাঁরা আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্যবসার এ ধস অনেক মেডেলিয়ান মালিকদের বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। রবিনসন এমনই একজন। ক্যাবচালক রবিনসন ২০১৬ সালে মেডেলিয়ান কিনে এখন তিনি ফোরক্লোজার ও দেউলিয়া ঘোষণার সম্মুখীন হয়েছেন। রবিনসন বলেন, ‘আমি এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় দেখছি না। আমি ডিফল্ট রায়ের অপেক্ষা করছি। মেডেলিয়ানটি আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার পরও তারা ১২ লাখ ডলার পাওনা থাকবে। অন্য মেডিলিয়ান মালিকদের সঙ্গেও একই রকম হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের মালিকানায় থাকা বাড়িও ফোরক্লোজ করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ হলুদ ক্যাবগুলো রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। উবার ও লিফটের মতো অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সির সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাঁরা ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।’
রবিনসন বলেন, ‘যখন ব্যয় আয়কে ছাড়িয়ে যায়, তা তাৎক্ষণিক ফোরক্লোজারের কথা বলে। আমাদের মর্টগেজ শোধ করতে হয়। আমাদের ব্যাংকঋণ রয়েছে, যা বাবদ মাসে ৪ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হয়। এসব খরচ ছাড়াও আমাদের কর, মেডেলিয়নের লাইসেন্স নবায়ন ফি, জরিমানাসহ অনেক ব্যয় থাকে, যা এখন চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সের সভাপতি ভৈরবী দেশাই হলুদ ক্যাব শিল্পকে সাহায্য করার জন্য আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এটি এমন এক সমস্যা, যা রাজনৈতিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। সঠিক বিধিনিষেধসহ আইন দ্বারাই এ সমস্যার নিরসন করা যেতে পারে। দেশাই বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে অস্তিত্বের লড়াইয়ে রয়েছি। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। দেউলিয়া ঘোষণার সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছে। ফোরক্লোজার ও অর্থনৈতিক হতাশার মাত্রার যথার্থ সাক্ষ্য রয়েছে নিউইয়র্কের সড়কে চলাচলকারী হলুদ ক্যাবের সংখ্যাতেই।’