'একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে…'
শেষ কবে নিজের পছন্দের গান শুনেছেন সব কাজ ফেলে? পছন্দের সিনেমাই বা কবে দেখেছেন শেষবার? বিবাহিত হয়ে থাকলে রুটিন জীবনের বাইরে শেষ কবে স্ত্রী-সন্তানের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েছেন অজানার উদ্দেশে? অথবা প্রিয়জনের সঙ্গে কবে শেষ রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে ভিজেছেন? মনে আছে? কত দিন ঘুরতে যান না নিজের পছন্দের জায়গাগুলো? কবেই বা একান্তে বসে ভেবেছেন ফেলে আসা জীবনের কথা অথবা ভবিষ্যতের কথা? জীবনের ঘানি টানতে টানতে এসবের কথা যে আপনার মনে থাকবে না, সেটা জানা কথা। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, আপনার পছন্দের কাজগুলো না করে আপনি ঠিক কত দূর এগিয়েছেন? একবার ভাবুন।
‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে/ থাকবে না সাথে কোনো ছাতা…’, অঞ্জন দত্তের মতো একদিন ছাতা ছাড়াই বেরিয়ে পড়ুন বৃষ্টির দিনে। ভিজে যান। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে ভিজুন। দেখবেন আপনার দেহ থেকে ক্লান্তি, বিষণ্নতা, অবসাদ সব খসে খসে পড়ছে বৃষ্টির জলের সঙ্গে। আমাদের দেশে বর্ষাকাল ভীষণ রোমান্টিক ঋতু। এ সময় আপনার যা মন চায় করুন। সবকিছু ছেড়ে একদিন ডুব দিন নিজের পছন্দের ভুবনে। ঝুম বৃষ্টিতে যখন বাইরে যেতে পারছেন না তখন গান শুনুন নিজের পছন্দের, সিনেমা দেখুন। এসব করতে এখন আর ৩০ বা ৫২ ইঞ্চির মনিটর বা দামি সাউন্ড সিস্টেমের প্রয়োজন হয় না। আপনার মোবাইলের স্ক্রিনই যথেষ্ট। আপনি শুধু ভাবুন, ভীষণ রোমান্টিক বৃষ্টিতে আপনি কী করতে চান। চাকরি করেন? কোনো সমস্যা নেই। ছুটির দিনটিকে কাজে লাগান। অথবা বৃষ্টি হলে ছুটি নিন। একদিন অফিস না করলে কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু এই একদিন অফিস না করাই হতে পারে আপনার দীর্ঘ সময় অফিস করার টনিক। ছুটি নিয়ে গান শুনুন, মুভি দেখুন, উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ান, কাছের মানুষদের সময় দিন। দেখবেন আপনি কখন যে ফুরফুরে হয়ে উঠেছেন, খেয়ালই করেননি।
আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। কুকিং শো দেখে রান্না করুন নিজের জন্য। কাউকে খাওয়াতে হবে না। নিজেই খান। তবে সঙ্গে বন্ধুবান্ধব থাকলে তো হয়েই গেল। ঘরে যা আছে তাই দিয়ে একটা কিছু রান্না করুন—একেবারে আপনার নিজের রেসিপিতে। পুরো সপ্তাহের যে মানসিক চাপ সেটা দূর হয়ে যাবে মুহূর্তেই।
ভালো লাগা পুরোনো মুভিগুলো আবার দেখতে পারেন। নতুন মুভিও দেখতে পারেন। ইউটিউব, অনলাইন পে চ্যানেল, টরেন্টের মতো ওপেন সোর্স, আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডারের নিজস্ব সার্ভার- মুভি দেখার এ রকম অনেক চ্যানেল আছে এখন। আপনাকে শুধু খুঁজে নিতে হবে। বিদেশি ভাষার মুভি দেখায় এখন কোনো সমস্যাই নেই। সাবটাইটেল নামিয়ে নিন। কমেডি, হরর, অ্যাকশন, সায়েন্স ফিকশন, বায়োপিক—যেকোনো জনরার মুভি দেখতে পারেন আপনি আপনার মুডের ওপর নির্ভর করে। সিরিয়াল বা খণ্ড নাটকও দেখতে পারেন।
আপনার বাসায় যদি বড় স্ক্রিন থাকে তাহলে পপকর্ন বা হালকা যেকোনো খাবার নিয়ে আয়েশ করে বসে পড়ুন। যদি সেটা না থাকে তাহলেও আয়েশ করতে আপনার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বিছানায় শুয়ে মোবাইল স্ক্রিনে মুভি দেখতে পারেন, দেখতে পারেন নাটক। নিদেনপক্ষে গান শুনতে পারেন। গানের সুর আপনাকে মুহূর্তেই নিয়ে যেতে পারে ভিন্ন জগতে। তবে মানসিক অবসাদ বা দূর করার জন্য ‘কুল’ টাইপ গান শুনুন। গান হতে পারে নিজের ভেতরের ‘আমিত্ব’কে জাগিয়ে তোলার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। শচীন টেন্ডুলকার তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যখন তিনি রান পেতেন না কিংবা কোনো কারণে ব্যাডপ্যাচে পড়ে যেতেন কিংবা ব্যক্তিগত কোনো কিছু নিয়ে যখন ভীষণ চিন্তিত থাকতেন, তখন তিনি গান শুনতেন। একই গান বারবার ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে শুনতেন। এই প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে তিনি মানসিকভাবে ‘ঠান্ডা’ হয়ে যেতেন।
সময় বের করে ঘুরতে যান। যাঁদের দুদিন ছুটি তাঁরা সঙ্গে আরও এক বা দুদিন ছুটি নিয়ে ঘুরে আসুন পছন্দের জায়গা থেকে। একান্তে কাটিয়ে আসুন প্রকৃতির সঙ্গে কিছু সময়। মোবাইল, ইন্টারনেট সবকিছু থেকে দূরে একেবারে একান্ত কিছু সময় কাটান একা অথবা প্রিয়জনের সঙ্গে। ভাবুন কী করা হয়নি এখনো, কেন করা হয়নি অথবা কীভাবে করবেন আপনার না হওয়া কাজগুলো—যেগুলো আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সামনের দিকে। সামনের দিকে যাওয়ার পথ আবিষ্কার করার জন্য আপনার নিজের সঙ্গে সময় দিতে হবে। সামনের ঈদে অনেক দিন ছুটি থাকবে। এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন।
পড়তে পারেন বই। খুব হালকা বই অথবা ভারী প্রবন্ধের বইও পড়তে পারেন। কিংবা আপনার পছন্দের বিষয়ের বইও পড়তে পারেন। এখন ঘরে বসে বই কেনার সুযোগ আছে। তাই ঘরে বসেই পছন্দের বইয়ের অর্ডার দিয়ে রাখতে পারেন। অনেক দিন পর শুধু একটা কবিতাও পড়তে পারেন। মনোযোগ দিয়ে একটা কবিতা পড়া আপনার সারা দিনকে একেবারে ভিন্নভাবে শুরু করিয়ে দিতে পারে। পড়ার অভ্যাস চলে গেছে বলে অনেকে দাবি করে থাকেন। এটি আসলে মনের ভ্রম। কোনো অভ্যাসই চলে যায় না। সুপ্ত থাকে। প্রয়োজনে জাগিয়ে নিতে হয়।
অথবা একটি দিন কিছুই করবেন না আপনি। একেবারে খাবেন আর ঘুমাবেন। ব্যাস। এটাও আপনার জন্য হয়ে উঠতে পারে জবরদস্ত টনিক।
মোদ্দা কথা, একটি দিন নিজের জন্য বরাদ্দ করুন। প্রতিদিনের রুটিন জীবনের বাইরে বেরিয়ে আসুন। দেখবেন নিজেকে ভীষণ তরতাজা লাগছে। আপনি কাজ করার প্রেরণা পাবেন আগের চেয়ে অনেক বেশি।