লেবুর গন্ধে সারা দিন
পূর্ণিমার রাতে লেবুর মন মাতাল করা ঘ্রাণ নিয়ে লিখতে বসা। জ্যোৎস্না কখনো কখনো অপার্থিব। সুঘ্রাণও বোধ হয় মাঝেমধ্যে জ্যোৎস্নার মতো অপার্থিব হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক ঘ্রাণের কাছে হার মানে কৃত্রিম ঘ্রাণ। প্রকৃতির প্রতি টান বুঝি মানুষের মজ্জাগত। তবে প্রাকৃতিক ঘ্রাণ সব সময় সব স্থানে সব পরিস্থিতিতে সব উপায়ে কাজে লাগানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই যেমন, শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে যদি টাটকা লেবু ব্যবহার করতে চান, সেটি তো অবাস্তব। তাই কৃত্রিমতার দ্বারস্থ হতে হয়। লেবুর রস নয়, লেবুর সুগন্ধি নিয়েই তাই এই লেখা।
সুগন্ধির ইতিহাসটাও অনেক পুরোনো। উইকিপিডিয়া বলছে, খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে মেসোপটেমিয়ায় এক নারী রসায়নবিদ সুগন্ধি তৈরি করতেন ফুল, তেল ও অন্যান্য উপকরণ থেকে। চার হাজার বছরের বেশি সময় আগে সাইপ্রাসে সুগন্ধি তৈরির প্রমাণ পাওয়া গেছে। নবম শতকের ইসলামি রসায়নবিদের বইয়ে রয়েছে সুগন্ধি তৈরির নানান উপায়ের বর্ণনা। ইবনে সিনা আবিষ্কার করেছিলেন ফুল থেকে তেলের নির্যাস বের করার এক প্রক্রিয়া, যা কিনা আধুনিক বিশ্বে সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। যুগে যুগে বদলেছে সুগন্ধির ধরন।
অষ্টাদশ শতকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে বিশ্ব ফ্যাশনে যেসব সুগন্ধির কথা এসেছে, সেখানেও রয়েছে এই ‘সাইট্রাস’ ছোঁয়া। আজকের দিনে ফ্যাশনের অনবদ্য এক অনুষঙ্গ সুগন্ধি। যদিও ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে মূলত শরীরের দুর্গন্ধ দূর করার জন্যই সুগন্ধির ব্যবহার বেশি প্রচলিত ছিল।
লেবুর সৌরভ কতটা মধুর, সে তো আর লিখে বোঝানোর জো নেই। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সব অনুভূতি যে লিখে প্রকাশ করার মতো নয়। তাই আর অন্য কথা নয়, বরং লেবুর সৌরভের সুগন্ধির ব্যবহারবিধি জেনে নেওয়া যাক।
পারফিউম ওয়ার্ল্ডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলমগীর জানালেন, মূলত গরমের সময়টার জন্যই লেবুর সৌরভসমৃদ্ধ পারফিউম। গরমে ঘামের সময়ে সতেজতা আনতেই লেবু সুরভিত সুগন্ধি। লেবুভিত্তিক সুগন্ধির আছে নানা রকমফের। লেবু বলতে শুধু লেবুই নয়, কমলালেবু, মাল্টা এসব তো রয়েছেই, নানান দেশের লেবুর ধরনও নানান রকম হয়। তাই এক ‘লেবুভিত্তিক’ শ্রেণিতেই পাবেন নানান সুঘ্রাণ। বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দমতো। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের জন্য তুলনামূলক কমই লেবুভিত্তিক সুগন্ধি থাকে।
দিনের জন্যই লেবুভিত্তিক সুগন্ধি। রাতের জন্য এ ধরনের সুগন্ধি তেমন উপযোগী নয় বলেই জানালেন মোহাম্মদ আলমগীর। দিনের বেলা অফিসে, বন্ধুদের আড্ডায় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে—যেখানেই যান, গরমের সময়টাতে এ ধরনের সুগন্ধি বেছে নিতে পারেন। এ দেশে গ্রীষ্মকাল দুই মাস নয়, বরং বছরের সিংহভাগ জুড়েই থাকে। গরম ও ঘামের সময়গুলোতে অনায়াসেই এ ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত হালকা ধরনের সুগন্ধিতে লেবু ব্যবহৃত হয়। স্পোর্টস সুগন্ধিও হালকা ও সতেজ প্রকৃতির হয়ে থাকে। এ ধরনের সুগন্ধিও লেবুভিত্তিক হতে পারে।