মা ও নবজাতকের যত্নে
আজ শীত, তো কাল উষ্ণ আবহাওয়া। এমনই সময় এখন। শীতপোশাক পরে বেরোলেন—একটু পরই হয়তো গরম লাগতে শুরু করল। আবার শীতপোশাক বাসায় ফেলে এসে হিম হাওয়ায় কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফেরার অভিজ্ঞতাও হতে পারে। আর অবুঝ শিশু? সে বোঝে না ঠান্ডা-গরমের অনুভূতি। তাই শিশুর সুস্থতার জন্য মায়ের সুস্থতাও জরুরি।
ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা কুতুবী বলেন, মা তো সদ্যোজাত শিশুর যত্ন নেবেনই, কিন্তু নিজের সুস্থতার দিকটাও যেন তিনি না ভোলেন। সন্তানের ভালোর জন্য হলেও নিজেকে ভালো থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, সময়ের খাবার সময়ে খেতে হবে। নিজের পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। নিজেকে সুস্থ থাকতে হবে।
আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনার সন্তানের যত্ন নিতেই বিঘ্ন ঘটবে। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খানিকটা কম থাকে। তাই বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। মায়ের শ্বাসনালির সংক্রমণ হলে তা খুব সহজেই শিশুর মধ্যে সংক্রমিত হয়। তাই মাকে সতর্ক থাকতে হবে। মায়ের কাছের মানুষদেরই মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে পরিবারের আদরের নবজাতকটিও সুস্থ থাকবে। মনে রাখতে হবে, সন্তান জন্ম নেওয়ার পর একজন মায়ের দেহে গর্ভধারণজনিত ঘাটতি পূরণ হতে ২ বছর সময় লাগে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জহির উদ্দীন বলেন, ‘শিশুর তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য একটু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন, বিশেষত এই সময়টাতে। জন্মের ৩০ মিনিটের মধ্যে মায়ের দুধ দিতে হবে। প্রথম ৬ মাস মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কিছুই দেওয়া যাবে না, এমনকি পানিও নয়। তবে একবার মায়ের দুধ দেওয়ার পর পরবর্তীবার দুধ দিতে সর্বোচ্চ ঘণ্টা দু-তিনেকের বেশি দেরি করা যাবে না। এমনকি শিশু ঘুমিয়ে গেলেও তাকে তুলে খাওয়াতে হবে।’
মায়ের ব্যায়াম
মায়ের জন্য প্রসব–পরবর্তী অন্যান্য ব্যায়ামের পাশাপাশি শ্বাসের ব্যায়াম খুবই জরুরি। নাক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিন, মুখ দিয়ে লম্বা করে শ্বাস ছাড়ুন। শোয়া, বসা বা যেকোনো দেহভঙ্গিতে থাকা অবস্থাতেই এ ব্যায়াম করা যায়। শ্বাসনালির সংক্রমণ প্রতিরোধে এ ব্যায়াম দারুণ কাজে দেবে। এ ছাড়া শ্বাসের ব্যায়ামের ফলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ হয় সঠিকভাবে, তাই কোনো কাটাছেঁড়া থাকলে (অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান হলে কিংবা স্বাভাবিক প্রসবের সময় যোনিপথের পাশে কাটা হলে) সেটির নিরাময়ও পরোক্ষভাবে ত্বরান্বিত হয়। ৩ বেলা ৮ বার করে এ ব্যায়াম অবশ্যই করুন অন্তত প্রথম ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত।
নবজাতকের যত্ন
- গোসল নিয়ে তাড়াহুড়া নয়। সুস্থ ও পূর্ণ গর্ভকাল পেরিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর জন্যও গোসলের আগে জন্মের অন্তত ৭২ ঘণ্টা পার হওয়া প্রয়োজন। এর আগে পানি লাগানোরই দরকার নেই শিশুর শরীরে। অপরিণত অবস্থায় বা কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুর জন্য প্রথম গোসলের সঠিক সময় চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। এটি একেক শিশুর জন্য একেক রকম হয়ে থাকে।
- মাথায় টুপি, হাতে ও পায়ে মোজা পরিয়ে দিন। ঠান্ডা হাওয়ার প্রকোপ থেকে শিশুকে বাঁচিয়ে রাখুন।
- শিশুকে সুতি কাপড় পরান। পোশাকের ওপর ২-৩টি বাড়তি পোশাকের স্তর প্রয়োজন হতে পারে। তবে ২-৩ ঘণ্টা পরপর অবশ্যই খেয়াল করুন শিশু ঘেমে যাচ্ছে কি না। ঘেমে গেলে অবশ্যই কাপড় কমিয়ে ফেলুন। নাহলে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।