ফ্রিজের যত্ন নিন

দৈনন্দিন জীবনে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ এখন অপরিহার্য অনুষঙ্গ। প্রচণ্ড তেষ্টায় ঠান্ডা পানি কিংবা খাবার সংরক্ষণে জীবনে এনে দেয় স্বস্তির পরশ। অনেক সময় দেখা যায় খুব অল্প দিন পরপর প্রিয় এই গৃহস্থালি পণ্যটি ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। প্রয়োজন হয় ঘন ঘন মেরামতের। নিয়ম মেনে যত্ন নিলে ফ্রিজ ভালো থাকে অনেক দিন। আর ভেতরের খাবারদাবারও থাকবে টাটকা। ফ্রিজ ভালো রাখতে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহায়ণ ও গৃহ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক রীনাত ফৌজিয়া।

১. সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে

ফ্রিজের ভেতরে তাপমাত্রা ঠিকঠাক রাখা ফ্রিজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রেগুলেটর সেট করে তাপমাত্রা রাখতে হবে ৩৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। এর ফলে খাদ্যগুণ নষ্ট হবে না। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার অনেক দিন ভালো থাকবে।

ফ্রিজের যত্ন জরুরি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

২. গ্যাসকেটে সচেতনতা

ফ্রিজের দরজায় যে রাবারের ফ্রেমের আস্তরণ থাকে, তাকে বলা হয় গ্যাসকেট। এটাই ফ্রিজের দরজাকে নিশ্ছিদ্রভাবে বন্ধ থাকতে সাহায্য করে। অনেক সময় গ্যাসকেটের সমস্যার জন্য ফ্রিজের দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয় না। লক্ষ রাখতে হবে, এটা যেন কোনোভাবেই ফ্রিজের দরজা থেকে আলগা না হয়ে যায়। বছরে অন্তত দুবার পানির সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়ে গ্যাসকেট পরিষ্কার করতে পারেন। গ্যাসকেটের সঙ্গে খাবারের টুকরা যেন আটকে না থাকে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. দরজা ঠিকমতো বন্ধ করতে হবে

এ সমস্যা সব পরিবারেই কমবেশি হয়ে থাকে। আমরা ফ্রিজ থেকে কিছু বের করা বা কিছু রাখার পর এর দরজা কেবল ছেড়ে দিই। কখনো তা বন্ধ হয় আবার কখনো কখনো এটি বন্ধ হয় না। ফলে ফ্রিজ এবং এর ভেতরে রাখা জিনিস দুটিরই মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই দরজা বন্ধ হয়েছে কি না সেটা নিশ্চিত হতে হবে।

আরও লক্ষণীয়...

• সপ্তাহে অন্তত এক দিন ফ্রিজের ভেতরটা পরিষ্কার করতে হবে। যেদিন আপনার ফ্রিজে অল্প পরিমাণে খাবার থাকে, সেদিন ফ্রিজটি পরিষ্কার করতে পারেন। সপ্তাহের শেষ দিন বা আপনার ছুটির বেছে নিতে পারেন ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য।
• মাসে একবার সাবান-পানি দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে হবে। এর জন্য শুরুতেই ফ্রিজের কানেকশন বন্ধ করে দিতে হবে। ফ্রিজের ভেতরের সব খাবার আর ট্রে বের করে নিন। এরপর লিকুইড সাবান ও স্পঞ্জ দিয়ে ফ্রিজের ভেতরটা ভালোভাবে মুছে নিন। তারপর কেবল পানিতে স্পঞ্জ ভিজিয়ে মুছে নিন।
• ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য হালকা গরম পানির সঙ্গে বেকিং সোডা বা ভিনেগার মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে পারেন।
• ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য ক্লোরিন ব্লিচ ও খসখসে কাপড় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। এর কারণে শেলফের প্লাস্টিকের আবরণ উঠে যেতে পারে।
• ফ্রিজের বাইরের অংশ পরিষ্কার করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। ফ্রিজের চারপাশের রাবারের অংশ নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, নাহলে ধুলাবালু জমে রাবার ফেটে যেতে পারে।

ফ্রিজের বাইরের অংশ পরিষ্কার করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

• রান্নাঘরে ফ্রিজ থাকলে ফ্রিজের ওপরের অংশ পাতলা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন, তাহলে ওপরের অংশ তেল চিটচিটে হবে না।
• মাসে একবার ফ্রিজের সিল পরীক্ষা করতে হবে। যদি কোথাও চিড় দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে মেরামত করে নিতে হবে।
• ছয় মাস পরপর ফ্রিজের বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে পেছনে বা নিচে থাকা কয়েল পরিষ্কার করতে হবে। নরম ঝাড়ু দিয়ে কয়েলের সঙ্গে লেগে থাকা ধুলা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
• ফ্রিজের ওপর ভারী জিনিস রাখলে ফ্রিজের ক্ষতি হয়।
• ফ্রিজ পরিষ্কার করার পর তাপমাত্রার সুইচ চালু করতে ভুলে যান অনেকেই। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সব সেটিং ঠিক আছে কি না দেখে নিতে হবে। লোডশেডিংয়ের সময় খেয়াল রাখতে হবে ফ্রিজ ঠিকমতো চালু হয়েছে কি না।
• ফ্রিজ কখনো ঘরের দেয়ালের সঙ্গে একদম লাগিয়ে রাখবেন না, কিছুটা দূরত্ব রাখতে হবে।
• চুলার কাছে বা খুব গরম স্থানে ফ্রিজ রাখবেন না। যে স্থানে ফ্রিজ রাখা, সেটি খুব গরম হলে মাঝেমধ্যেই ফ্যান ছেড়ে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন