শুরুটা হয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমে। ২০১৫ সালে। হর্নটা যে সমস্যা তৈরি করেছে, তা অনুভূত হওয়ার পর থেকেই উদ্যোগ নেন মমিনুর রহমান, যাঁকে সবাই চেনেন রয়েল নামে। হর্ন-বিরোধী ব্যানার নিয়ে রয়েল এরই মধ্যে অনেকবার দাঁড়িয়েছেন রাস্তায়।
২৭ ও ২৮ মার্চ দুই দফা কথা হয় রয়েলের সঙ্গে। তিনি তখন কলকাতার পথে। কথা বলার এই বিরতির সময়টাতে ঘুরে আসা গেল রয়েলের চালানো হর্ন-বিরোধী ফেসবুক পেজ থেকে। সেখানে নানা জায়গায় ক্যাম্পেইনের ছবি। তার সঙ্গে এই প্রচারণায় যোগ দেওয়া মানুষের ছবিও আছে পেজটিতে।
যেভাবে হর্ন হুদাই...
‘আমি আমার মোটরবাইকে ৭০০ কিলোমিটার পথ চলেছি, কোনো হর্ন বাজাইনি। ঢাকা এমন একটা শহর, যেখানে আসলে কোনো ধরনের হর্নের প্রয়োজনই হয় না। খুব জরুরি না হলে এটা না বাজানোই কি ভালো নয়?’ প্রশ্ন করেন রয়েল। একমত হলে কথা এগিয়ে যায় আমাদের।
‘আমি একজন চিত্রশিল্পী। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে স্নাতক শেষ করেছি। এখন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় শিল্পনির্দেশক হিসেবে কাজ করছি। একজন শিল্পী হিসেবে আমার তো কিছু দায়িত্ব আছে। কিছু দায়বদ্ধতা আছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে এটা শুরু করেছি ২০১৫ সালে। তারপর থেকে চলছে।’
এক ফাঁকে স্লোগান তৈরির গল্পটাও বললেন রয়েল। জানালেন, হর্ন তো লোকে অকারণে বাজায়। মানে ‘হুদাই’। আর হুদাই কাজটা কে করে, বোকারা। সেভাবে মিলিয়ে শ্লোগান তৈরি হয়েছে।
রয়েল বললেন, ‘শুরুতে অনেকে এই লেখা নিয়ে ব্যানার করে নিজ উদ্যোগে রাস্তায় দাঁড়াতেন। কিন্তু ঠিকঠাক নকশাটা করতে পারতেন না। এই কারণে আমি নিজেই ডিজাইন করে দিয়েছি। অনেকেই সেটা নিয়ে নিজের মতো করে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে যান। একটা স্লোগান এভাবে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। আমি নিজেও নিয়মিত রাস্তায় দাঁড়াই।’ এভাবেই ফেসবুক থেকে হর্ন-বিরোধী প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়।
যত ক্ষতি হর্নে?
শিশু, কিশোর, গৃহিণী, অফিসের বড়কর্তা এমনকি রাস্তার ট্রাফিক পুলিশ— কাকে হর্ন স্পর্শ করে না, বলুন? এই প্রশ্নের আদতে কোনো উত্তর নেই। রয়েলের ভাষায়, হর্নের প্রতি এই শহরের সবাই বিরক্ত। যিনি বাজান, তিনি যেমন বিরক্ত, যিনি বাজান না, তিনিও। তো এই মানুষদের একটু সচেতন করলেই সম্ভব হর্নমুক্ত শহর গড়া। দরকার শুধু ইচ্ছাশক্তি। আমি অনেক ট্রাফিক পুলিশকে চিনি, যাঁরা বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক শব্দে কিছু শুনতে পারেন না। টেলিভিশন দেখলেও উচ্চ শব্দে শোনেন, যেটা অন্য সবার জন্য বিরক্তিকর। শিশুদের কানে সমস্যা হয়। একটা নির্দিষ্ট সহশীলতার বাইরে কারও পক্ষেই শব্দ নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা মনের আনন্দে রাস্তায় বের হলেই হর্ন বাজিয়ে যাই।
নেই সংগঠন, নেই প্ল্যাটফর্ম
হর্ন বাজানোর বিরোধী স্লোগান লেখা ব্যানার, স্টিকার, গেঞ্জি সব সময় থাকে রয়েলের সঙ্গে। কিন্তু তাঁর কোনো সংগঠন নেই। যে কেউ চাইলেই নকশা পাঠিয়ে দেন রয়েল। ইচ্ছামতো ছেপে যে কেউ নেমে যেতে পারেন মাঠে। রয়েল বলেন, ‘শব্দদূষণের বিরুদ্ধে শব্দ না করে প্রতিবাদ করাটাই আমার প্রধান কাজ। অনেকেই সহযোগিতা করেছেন এই কাজে। আবার অনেকে টিটকারিও দিয়েছেনে। কিন্তু দিনে শেষে সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
সামনে আরও কিছু উদ্যোগ নেবেন। সেটা নতুন প্রজন্মের জন্য। বললেন,‘আমার সন্তানের বয়স ছয় মাস পার হয়েছে। ঘুমের মধ্যে শব্দ শুনলে বা হর্ন শুনলে কেঁপে ওঠে। এটা শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সেটা যদি মা-বাবা জানেন, তাহলে কখনোই আর হর্ন দেবেন না।’
রয়েলের প্রত্যাশা, হর্নমুক্ত, শব্দবিহীন একটা শহর পাক নতুন প্রজন্ম। এ কারণে নিয়মিত চেষ্টা করে যাবেন তিনি।