পূজা আয়োজন নিয়ে প্রতিযোগিতা

>
পাথরাইল গ্রামের এবারের পূজামণ্ডপ
পাথরাইল গ্রামের এবারের পূজামণ্ডপ
শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামে টাঙ্গাইলের পাথরাইল ও চণ্ডী গ্রামের মানুষ। তবে তাদের এ প্রতিযোগিতা কখনো প্রতিহিংসায় রূপ নেয় না। সুন্দর প্রতিমা, বর্ণিল সাজসজ্জা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের কারণে জেলার সেরা পূজামণ্ডপের স্বীকৃতিও উঠেছে দুই গ্রামের পূজারিদের হাতে।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দুই গ্রাম—পাথরাইল ও চণ্ডী। টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত এই গ্রাম দুটির প্রায় সবাই শাড়ি তৈরি ও শাড়ির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এই শাড়ির গ্রামেই প্রতিবছর দুর্গাপূজা নিয়ে হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা সুন্দর পূজা আয়োজনের।

পাথরাইল ও চণ্ডী গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই গ্রাম দুটিতে সর্বজনীন দুর্গাপূজা হতো। তবে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, সামাজিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে সত্তরের দশকে সর্বজনীন পূজা বন্ধ হয়ে যায়। তাঁতের তৈরি শাড়ির বাজার ফের চাঙা হয়ে উঠলে সর্বজনীন পূজা আয়োজন আবার শুরু হয়।

পাথরাইল সর্বজনীন পূজা কমিটির সদস্য অজয় বসু জানান, সেই শুরুটা হয় ১৯৯২ সালে। প্রথম দিকে আয়োজন হতো ছোট আকারে। কিন্তু দু–এক বছর পর থেকেই শুরু হয় পূজা নিয়ে প্রতিযোগিতা। কে কার থেকে ভালো আয়োজন করতে পারবে, এ নিয়েই লেগে পড়ে দুই গ্রামের পূজারিরা। এক বছর চণ্ডী গ্রাম ভালো আয়োজন করে তো পরের বছর পাথরাইল
গ্রাম আরও বেশি আয়োজন করে তাদের ওপরে চলে যায়।

চণ্ডী গ্রামের প্রতিমা সাজানোর কাজ এখনো চলছে
চণ্ডী গ্রামের প্রতিমা সাজানোর কাজ এখনো চলছে

এখন পাথরাইল গ্রামে পূজার সঙ্গে ৩০টি পরিবার যুক্ত আর চণ্ডী গ্রামে পূজায় যুক্ত রয়েছে প্রায় ৫০টি পরিবার। বছরের অন্য সময় নানা বিষয়ে কথা হলেও প্রতিমা তৈরি, সাজসজ্জার পরিকল্পনা—সব গোপনীয়তার সঙ্গে করে দুই গ্রামের মানুষ।
অজয় বসু বলেন, যাতে এক মণ্ডপের পরিকল্পনা অন্য মণ্ডপ জেনে না যায়, এ কারণেই এই গোপনীয়তা।

এবার পাথরাইল গ্রামে প্রতিমা তৈরি করতেই খরচ হচ্ছে আড়াই লাখ টাকা। সাজসজ্জাসহ তাদের আট লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে। অপরদিকে চণ্ডী গ্রামেও এ রকমই খরচ হবে বলে জানিয়েছেন পূজার আয়োজকেরা। চণ্ডী সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রঘুনাথ বসাক জানান, ‘আমরা দুই গ্রামের মধ্যে দুর্গাপূজা আয়োজন নিয়ে প্রতিযোগিতা করি বটে, তবে সেটা সুস্থ প্রতিযোগিতা। কে কার চেয়ে ভালো আয়োজন করবে, সেই প্রতিযোগিতা। আমাদের এই প্রতিযোগিতা কখনোই প্রতিহিংসায় রূপ নেয় না।’ পাথরাইল সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র বসাকের সুরেও সেই সম্প্রীতির সুর, পূজা নিয়ে এই প্রতিযোগিতা উৎসবকে আরও বেশি আনন্দময় করে তোলে।

এভাবে প্রতিযোগিতার কারণে পূজা আয়োজনের কয়েক বছরের মধ্যে দুই গ্রামের পূজাই জাঁকজমকপূর্ণ পূজামণ্ডপ হিসেবে পরিণত হয়। একসময় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলার পূজামণ্ডপগুলোর মধ্যে সেরা মণ্ডপ নির্বাচন করে পুরস্কার দেওয়া হতো। পাথরাইল ও চণ্ডী—দুই গ্রামই তিনবার করে জেলার সেরা মণ্ডপ হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। জেলা শুধু নয়, পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, গাজীপুর থেকেও মানুষ আসে এই পূজা দেখতে। এখানে আসা দর্শনার্থীদের প্রসাদ দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থাও করে দুই গ্রামের পূজা কমিটি।

টাঙ্গাইল পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি আনন্দ মোহন দে জানান, পাথরাইল ও চণ্ডী গ্রামের পূজা নিয়ে প্রতিযোগিতার কথা জেলার সব মানুষের জানা। তাই কে বেশি ভালো আয়োজন করল, তা দেখতে অনেক উৎসুক মানুষ ওই মণ্ডপ দুটি পরিদর্শনে যায়। তাদের এই প্রতিযোগিতার কারণেই উৎসবমুখর পরিবেশে সেখানে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।