>কোনো দল গ্রাম থেকে হটিয়ে দিয়েছে পাখিশিকারিদের, আরেক দল নতুন প্রজন্মকে শোনাচ্ছে একাত্তরের ইতিহাস, বেঁচে যাওয়া খাবার দিয়ে অনেক শিশুর পুষ্টি জোগাচ্ছে কেউ কেউ, নগর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রকৌশলবিদ্যার শিক্ষার্থীরা, আবার নিজেদের গরজে ছাদবাগান বানিয়ে দিচ্ছে অন্য একটি দল—তাঁরা সবাই তরুণপ্রাণ।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মতোই—এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে। স্বেচ্ছাশ্রমে সমাজের নানা কাজে এগিয়ে আসা পাঁচটি তরুণ-দলের কথা নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ দেখা মেলে একঝাঁক তরুণের। তাঁরা কখনো নিজেরাই পরিষ্কার করেন পথের ময়লা, কখনোবা লিফলেট হাতে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করেন পরিচ্ছন্নতার জন্য। এই তরুণেরা সবাই স্বপ্ন দেখছেন পরিচ্ছন্ন নগরীর। তাঁরা সবাই পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইইএ) সদস্য। এই তরুণেরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রকৌশলবিদ্যার শিক্ষার্থী।

কারওয়ান বাজারে ২১ অক্টোবর পথচারীদের দৃষ্টি কেড়েছিলেন এই উদ্যমী তরুণেরা। ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তার মোড়েই রয়েছে ‘মিনি ডাস্টবিন’। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অব্যবহৃত ও অযত্নে পড়ে থাকছে সেসব ডাস্টবিন, ওদিকে রাস্তাঘাটও হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন। মূলত রাস্তার ধারে বসানো সেই মিনি ডাস্টবিনগুলোর ব্যবহারে জনসচেতনতা তৈরি করতেই তাঁদের এ উদ্যোগ। প্রচারপত্র বিলি ও মৌখিকভাবে প্রচারের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মতো সরাসরি রাস্তা পরিষ্কারে স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেরাও হাত লাগিয়েছিলেন।
তাঁদের ‘চলো বদলাই’ কর্মসূচি ও সংগঠনের ব্যাপারে কথা বললেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক একরামুল হাসান। তিনি জানালেন, ‘“চলো বদলাই অভ্যাস, করি সুন্দর বসবাস”—স্লোগান সামনে রেখেই আমাদের এ কর্মসূচি। পরিবেশ রক্ষা ও জনসচেনতা বৃদ্ধির এই আন্দোলনে তারুণ্যের স্বতঃস্ফূর্ত শক্তিকে আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই সবার মাঝে।’
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মাহফুজ রূপমের কণ্ঠেও ধ্বনিত হলো একই কথা। ডাস্টবিনগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে সবার আন্তরিকতা চান তিনি। নির্ধারিত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে যাঁর যাঁর জায়গা থেকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করেছেন এই তরুণ।
২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি পরিবেশ রক্ষার কাজই শুধু নয়, পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উদ্ভাবনের কাজের সঙ্গেও যুক্ত। পরিবেশ প্রকৌশল শিক্ষা ও জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো এবং পরিবেশ প্রকৌশলীদের মানোন্নয়নেও কাজ করে সংগঠনটি। তাঁদের এমনই একটি প্রকল্প ‘ইয়াং এনভায়রনমেন্টাল অ্যাক্টিভিস্ট’। এর মাধ্যমে প্রায় ৩০ জন তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি প্রণব দেবনাথ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে পরিবেশ পরিচ্ছন্নতাসম্পর্কিত জনসচেতনতা নিয়ে কাজ করলেও পরিবেশসম্পর্কিত গবেষণাধর্মী কাজেও ভবিষ্যতে আমাদের সম্পৃক্ততা থাকবে। আমরা চাই, সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমরা সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেরাই পরিবর্তনের পথে অগ্রসর হই। সেটি করতে পারলে আমাদের প্রিয় ঢাকা আবারও ফিরে পাবে তার হারানো সৌন্দর্য।’
নগরায়ণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানী শহর যখন পরিবেশগত ভয়াবহ দূষণের সম্মুখীন, তখন এমন উদ্যোগ প্রশংসা করার মতোই। আত্মপ্রত্যয়ী এমন সব তরুণের হাত ধরেই পরিবর্তনের আশায় বুক বাঁধা যেতেই পারে। এ ধরনের কর্মসূচিতে তরুণদের আরও বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত, তবেই আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন, এমনটাই বলছেন অনেকে।