
‘অগ্রযাত্রার এক দশক’ পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পা রাখল একাদশ বছরে। ‘শিক্ষা, প্রগতি ও মুক্তির আলোয় প্রদীপ্ত’ স্লোগান নিয়ে তাই ২০ অক্টোবর পুরো ক্যাম্পাস মেতে উঠেছিল জন্মদিনের উৎসবে।
উৎসবের দিন দশেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ভবনের মহড়াকক্ষে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, চলছে নাচ-গান-আবৃত্তির জোর প্রস্তুতি। অন্যদিকে পিলে চমকানো হুংকার ভেসে আসছিল যাত্রার মহড়া থেকে! কেউ বা ব্যস্ত ছিলেন জন্মদিনের কেক, বাঁশি-ভুভুজেলা, পটকা-আতশবাজি সংগ্রহের কাজে।
পুরো ক্যাম্পাস সেজেছিল লাল, নীল, সবুজ আর হলদে মরিচা বাতির আলোয়। রাস্তার ধুলাবালির হামলায় মলিন হয়ে যাওয়া বাসগুলোর গাঁয়েও এই সুযোগে লেগেছে নতুন রঙের আঁচড় আর বর্ণিল কাগুজে ফুলের সাজ।
অবশেষে ২০ অক্টোবরের সকালবেলা। হইহই রইরই করে বাসভর্তি শিক্ষার্থীদের আগমনে মুহূর্তেই উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা তুলে, বর্ণিল বেলুন ও শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা উড়িয়ে উৎসবমুখর দিনটির উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান। এরপর শহীদ মিনার চত্বর থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। মূল ব্যানার ছাড়াও বিভাগভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন ব্যানার নিয়ে, মাথায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কাগুজে টোপর পরে শোভাযাত্রা অংশ নিয়েছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ড বাদকের বাজনার তালে হইহুল্লোড়ে মেতে, বাঁশি বাজিয়ে, রং ছিটিয়ে, ছবি আর সেলফি তুলে...তবেই না জমেছিল শোভাযাত্রা!
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের নতুন বিল্ডিং, কাঁঠালতলা, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ঝাউতলা, এমনকি শান্ত চত্বর অশান্ত হয়ে উঠেছিল শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উল্লাসে। ছাত্রছাত্রী সবাই নেচে-গেয়ে মেতে উঠেছেন নির্ভেজাল আনন্দে। যাঁরা নাচতে একেবারেই অনিচ্ছুক, নাচ দেখেই তাঁদের আনন্দ। ঝাউতলায় দাঁড়ানো ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী হ্যাপি যেমন বলছিলেন, ‘আমি নাচের ধারেকাছেও নাই। নেচে-গেয়ে অন্যদের আনন্দ করতে দেখেই বরং বেশি আনন্দ পাচ্ছি।’ একই ব্যাচের জনি, রবিউল, কানন, জাকারিয়া, তানিয়া, ফারিয়া, টুম্পা, সালমা, তৌহিদা আর রুহিও বেরিয়েছিলেন দলবেঁধে পুরোনো ক্যাম্পাসটা নতুন করে ঘুরে দেখতে।
বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে বসেছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে চলছিল রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও রক্তদান কর্মসূচি। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা অ্যান্ড মিউজিক বিভাগের শিক্ষার্থী, জবি সাংস্কৃতিক জোট, জবি আবৃত্তি সংসদ ও উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর পরিবেশনা। সন্ধ্যা নামতেই মঞ্চে দেখা গেল বৈচিত্র্যময় আদিবাসী মনিপুরী নৃত্য। খানিক বাদে সেই মঞ্চেই কোথাকার এক রাজা, তাঁর রাজ্যপাল নিয়ে আসন গেড়ে বসেন রাজসিংহাসনে। হ্যাঁ—যাত্রাপালা। সব শেষে পাওয়ার ভয়েজ খ্যাত সজল ও হৃদয় খানের গান শুনে সারা দিনের উৎসবের খুঁটিনাটি আলাপ করতে করতে ছোট-বড় দলবেঁধে বাড়ি ফেরেন শিক্ষার্থীরা।