২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দুনিয়াজুড়ে কিডনি ফেইলিওর বা কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে কিডনিকে বেশি বেশি কাজ করতে হয়। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে কিছু ক্ষতিকর অণু তৈরি হয়, যা কিডনির রক্তনালিগুলোর ক্ষতিসাধন করতে থাকে। কিডনি হচ্ছে আমাদের শরীরের ছাঁকনির মতো, যা রক্তের বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করে দেয়। ডায়াবেটিসজনিত কিডনি জটিলতায় এই ছাঁকনির কাজ ব্যাহত হয়, আমিষের ক্ষুদ্র কণা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসতে থাকে, যাকে মাইক্রো এলবুমিন বলে। এ অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে দ্রুত ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে কিডনি রক্ষা করা যায়, কিন্তু যখন বেশি করে আমিষ যেতে থাকে তখন কিডনিকে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব হয় না।

কিডনি বিকল হওয়ার লক্ষণগুলো কী?
ডায়াবেটিসজনিত কিডনি বিকল হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। ৭০-৮০ শতাংশ ক্ষতিসাধনের পরই কেবল উপসর্গগুলো দেখা দেয়। যেমন: মুখ ও শরীর ফুলে যাওয়া, শরীরে পানি জমা, অরুচি, ক্ষুধামান্দ্য, বমি ভাব, রক্তশূন্যতা, চুলকানি, বোধশক্তিতে সমস্যা ইত্যাদি। কখনো বুকে পানি জমে শ্বাসকষ্ট বা রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। কিডনি জটিলতার অনেক রোগী স্ট্রোক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, কেননা প্রস্রাবে আমিষ যেতে থাকলে এই রোগগুলোর ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়।

কীভাবে কিডনি ভালো রাখা যায়?
শুধু রক্তের শর্করা সুনিয়ন্ত্রিত রেখে ৭০-৮০ শতাংশ কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। এর সঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, ধূমপান বর্জন করা, লবণ ও ক্ষতিকর ওষুধ এড়িয়ে চলার মাধ্যমে কিডনির সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়। প্রস্রাবে মাইক্রোএলবুমিন পরীক্ষা করার মাধ্যমে কিডনি সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব এবং তখন এসিই ইনহিবিটর বা এআরবি গ্রুপের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। একজন ডায়াবেটিস রোগীর রোগ ধরা পড়ার শুরুতে এবং তারপর বছরে অন্তত একবার করে প্রস্রাবের এলবুমিনের পরিমাণ পরীক্ষা করা উচিত।

কিডনি বিকল হওয়ার চিকিৎসা কী?
কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার পর ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। এগুলো শুধু ব্যয়বহুলই নয়, ঝুঁকিপূর্ণও। তাই কিডনি যাতে বিকল না হয়, সেদিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। সুনিয়ন্ত্রিত শর্করা ও রক্তচাপ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে কিডনি বিকল হওয়া থেকে নিজেকে সুরক্ষা করা যায়।

* ডা. ইন্দ্রজিত প্রসাদ, সহযোগী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।