বেশ কয়েক বছর ধরেই অনলাইন কেনাকাটার সঙ্গে অভ্যস্ত মানুষ। তবে ২০২০ যেন অনলাইন ব্যবসার জন্য আশীর্বাদ। করোনার প্রভাবে বছরের শুরুর দিকে মানুষ যখন ঘরে ঢুকে গেল, তখনই জমজমাট হতে শুরু করে অনলাইন ব্যবসা।
তবে এভাবে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেকে আবার বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তাই অনলাইন কেনাকাটায় কিছু বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। প্রযুক্তির ভাষায় অনলাইনে এই বেচাকেনার বাণিজ্যটাকে বলা হয় ই-কমার্স (ইলেকট্রনিক কমার্স)। অনলাইনে বেচাকেনা ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। সেটি এফ-কমার্স নামে পরিচিত। নাম যা–ই হোক, অনলাইন কেনাকাটায় সচেতন না হলে ঠকে যাওয়ার কিংবা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রতারিত হলে করণীয়
কোনো অনলাইন বিক্রেতা এক পণ্যের কথা বলে যদি অন্য পণ্য সরবরাহ করে কিংবা যদি কোনো পণ্যের মান ঠিক না থাকে—তবে কেনার রশিদ, প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ করার নিয়ম, ফরম, ঠিকানা, ই–মেইল ও ফোন নম্বর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ওয়বেসাইটে আছে। ই–মেইলে অভিযোগ করতে পারবেন।
একই রকম ঘটনায় পুলিশকেও জানাতে পারেন। সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি, ঢাকা বা ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) সাইবার ইউনিট থেকে আপনি সহায়তা নিতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮–এর ২৩ ধারায় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করার শাস্তি ও ২৪ ধারায় প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করার শাস্তির বিধান রয়েছে।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন
আপনি যেখান থেকে পণ্য কিনতে যাচ্ছেন, খেয়াল রাখতে হবে, তা নির্ভরযোগ্য কোনো পেজ বা সাইট কি না।
প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা যাচাই করা।
অগ্রিম টাকা পরিশোধ করার বদলে ক্যাশ অন ডেলিভারি (পণ্য পাওয়ার সময় মূল্য পরিশোধ) পদ্ধতি অনুসরণ করা ভালো।
পণ্য পাঠানোর সুবিধা আছে কি না, তা আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন।
স্বাভাবিকের চেয়ে খুব কম মূল্যে কোনো পণ্য অফার করলে তা এড়িয়ে চলাই ভালো। এরূপ ক্ষেত্রে বেশির ভাগই প্রতারণামূলক হয়ে থাকে।
সাধারণত ফেসবুক পেজের চেয়ে ওয়েবসাইট কিংবা বাস্তবের দোকানভিত্তিক ই-কমার্স নির্ভরযোগ্য হয়ে থাকে। কারণ, একটি ফেসবুক পেজ যখন–তখন খোলা বা বন্ধ করা যায়। এ জন্য ওয়েবসাইট বেশি নির্ভরযোগ্য। তবে ওয়েবসাইটটি ক্লোন (অন্য ওয়েবসাইটের মতো একই চেহারার) করা কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ফেসবুক পেজে অর্ডার করার আগে রিভিউ, কমেন্ট ও পেজের অ্যাবাউট বিভাগ দেখে নিতে হবে। তার সঙ্গে পেজটি আগে অন্য কোনো নামে ছিল কি না, দেখে নিতে পারেন। কারণ, যে পেজগুলো থেকে প্রতারণা করা হয়, তারা সাধারণত নিয়মিত নাম পরিবর্তন করে থাকে।
বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রটি গতিশীল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে কাজ করছে ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব)। এই সংগঠনের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০। তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা আছে। অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা এড়াতে তারা নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করার জন্য উৎসাহিত করে থাকে, যাতে ক্রেতা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে সহজে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
লেখক: উপপুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা