ধারের টাকা ফেরত চাইবেন কীভাবে
ধারে টাকা দেওয়ার পর অনেকেই সেই টাকা ফিরে পেতে গলদঘর্ম হন। ধার নিয়ে কেউ কেউ বেমালুম ভুলে যাওয়ার ভানও করেন। টাকা ধার দিয়ে নিজেকেই যাতে ভুগতে না হয়, তার জন্য টাকা ধার দেওয়ার আগেই কিছু বিষয়ে উভয় পক্ষ পরিষ্কার হয়ে নেওয়া ভালো।
টাকাটা ধার না উপহার
টাকা লেনদেনের আগে প্রথমেই এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া উচিত। নয়তো সময় যেতে থাকবে আর সম্পর্কে তিক্ততা বাড়বে। বছর চারেক ধরে দাতা হয়তো ভাবছেন, আজ দেবে, কাল দেবে কিন্তু গ্রহীতা সেটাকে উপহার ভেবে বসে গেছেন। তাই টাকা দেওয়ার আগেই সম্ভব হলে ধারের প্রকৃতিটা পরিষ্কার করে নিন।
শর্ত ও সময় নির্ধারণ করুন
টাকা যদি ধার হিসেবে দিয়ে থাকেন, অবশ্যই সেটা পরিশোধের শর্ত থাকতে হবে। এখানে দুজনের মত অনুযায়ী চুক্তি করা জরুরি। সম্পর্কের খাতিরে হয়তো আপনি সেভাবে চুক্তি করতে চাইবেন না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যাতে সম্পর্ক খারাপ না হয়, তাই পরিশোধের সময় ও ধরন সম্পর্কে আগেই পরিষ্কার করে নিন।
পরিশোধ হবে কীভাবে
কী উপায়ে ধারের টাকা ফেরত দেওয়া হবে, সেটা জেনে নেওয়াও আপনার জন্য ভালো। ডেডলাইনের আগে ছোট একটা মেসেজ দিয়ে তাঁকে তারিখটা মনে করিয়ে দিতে পারেন। ব্যাংকে যাওয়ার বা অন্য কোথাও গিয়ে টাকা নিয়ে আসার ঝামেলা থাকলে আগেই এসব সমস্যা সম্বন্ধে কথা বলে নেওয়া উচিত।
ব্যক্তিত্বের ধরন বুঝে ঋণ দিন
আপনার বন্ধু বা স্বজন সবাই যে আপনার মতো ধ্যানধারণা বা নীতিতে বিশ্বাসী হবে, তা কিন্তু নয়। তাই ব্যক্তি বুঝে সাহায্য করুন। পরিবার বা আত্মীয় তো বটেই, আপনার বন্ধুদের মধ্যেও এমন কেউ থাকতে পারে, যিনি আপনার টাকাকে নিজের ভেবে খরচ করে ফেলাটাকে অপরাধ মনে করেন না। হতে পারে তাঁর ব্যক্তিত্বের ধরনটা এমন যে ঋণ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন। এমন ব্যক্তিকে টাকা ধার দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। ধার দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টাকা নেই বা আপনি নিজেই অন্য কারও কাছে ঋণী বলে তাঁদের এড়িয়ে যেতে পারেন।
কিন্তু জীবনে সবকিছু পরিকল্পিতভাবে হয় না। দেখা গেল হঠাৎ জরুরি প্রয়োজনেই কেউ আপনার কাছে টাকা ধার নিল। পরে টাকা কীভাবে ফেরত দেবে, সে বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগও পাওয়া গেল না। অনেক সময় গ্রহীতাও তাঁর বিপদ থেকে উত্তরণের পর টাকা ফেরত দিতে ভুলে যায়। ঋণগ্রহীতার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন—এ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আপনি পাওনা টাকা ফেরত পেতে যা করতে পারেন—
যিনি টাকা নিয়েছেন, তাঁকে একটা ছোট মেসেজ দিয়ে বা চিঠি লিখে মনে করিয়ে দিতে পারেন। সরাসরি ‘টাকাটা ফেরত দাও’ এমন কথা না লিখে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে পরে সেই বিপদের মুহূর্তের কথা তুলতে পারেন। এখন কী খবর, দিনকাল ভালো যাচ্ছে নাকি, এসব কথা বলার পর টাকার কথাটা স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন।
টাকার অঙ্ক বড় হলে ছোট ছোট ভাগ করে প্রতি মাসে কিছুটা করে দিতে বলুন। হয়তো আপনিও জানেন আপনার ঋণগ্রহীতা বন্ধু বা আত্মীয়ের আর্থিক অবস্থা এখনো পুরোপুরি ভালো হয়নি। তবে আপনারও টাকার প্রয়োজন। এমন মুহূর্তে আপনি তাঁকে পাওনা টাকাটা মাসে মাসে অল্প অল্প করে পরিশোধ করার পরামর্শ দিতে পারেন।
প্রথাগত টাকার বদলে টাকায় ঋণ শোধ না করে বিকল্প উপায়ও মনে করিয়ে দেওয়া যায়। আপনি হয়তো টাকা ধার দিয়েছেন কিন্তু গ্রহীতা শোধ করতে পারছেন না। অন্য কোনো সেবা গ্রহণের মাধ্যমে ঋণ শোধের প্রস্তাব দিতে পারেন। অনেকের নগদ টাকা হাতে থাকে না। সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে কাজ বা সেবা গ্রহণের মাধ্যমে ঋণ আদায় করে নিতে পারেন। যেমন যে বন্ধুকে ধার দিলেন, তাঁর কাছে হয়তো নগদ টাকা নেই। তবে সে খুব ভালো পেইন্টার বা গ্রাফিক বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। আর আপনিও বাসা বা অফিসে এ ধরনের কোনো কাজ করাতে চাইছেন। এ ক্ষেত্রে বন্ধুকে দিয়ে এসব কাজ করিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে ঋণ শোধ হতে পারে। তবে সেটাও পরিষ্কার আলোচনার মাধ্যমে করা ভালো। এতে সম্পর্কও ভালো থাকবে।
ব্যক্তিত্ব বুঝে আচরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার বন্ধু বা স্বজন ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার টাকা পরিশোধ না করে আপনাকে ভোগাচ্ছে, তাহলে সরাসরি কথা বলে টাকা চেয়ে নেওয়াই ভালো। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবশ্যই ফেরত দেওয়ার শেষ তারিখ উভয় পক্ষের পরিচিতজনকে জানিয়ে রাখবেন।
টাকাপয়সার কারণে অনেকেই সম্পর্ক খারাপ করতে চান না। আর খুব কাছের আত্মীয় বা বন্ধু হলে অনেকেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চান না। যদি টাকার পরিমাণ কম হয়, যাতে আপনার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না, আর গ্রহীতাও আপনার ভালোবাসার মানুষ, তাহলে সেটা উপহার হিসেবে তাঁকে দিয়ে দিন। উপহার হিসেবে টাকাটা দিলে অবশ্যই সেটা তাঁকে জানিয়ে রাখুন। এ সময়ে একটা ছোট মেসেজ বা চিঠি খুব কার্যকর। যেমন ‘প্রিয়, তোর কঠিন সময়ে কাছে থাকতে চাই। টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে একদম চিন্তা করিস না, এটা তোর জন্য উপহার। তোর সুসময় খুব কাছে, তখন সেটা একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নেব।’
সূত্র: ইকোনমিক টাইমস, অ্যাপার্টমেন্ট থেরাপি ও বোনা