জীবন বদলানো ৫ ভাবনা
জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই এমন কিছু ‘বোধোদয়’ হয়, যা আরও আগে হলে জীবনটা হয়তো আরও সুন্দর হতে পারত। অনেকে হয়তো জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে এটা উপলব্ধি করেন। কিন্তু তাতে তো আর ফেলে আসা দিনগুলো সুন্দর করে তোলা যায় না! মানুষের মন নিয়ে কাজ করেন যাঁরা, জীবন নিয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত হয় বহু ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতাও। তাই জীবনভাবনার পরিসরটাও তাঁদের অনেক বিস্তৃত। টাইম ম্যাগাজিনকে কয়েকজন মনোবিদ জানিয়েছেন মানুষের জীবন বদলে দেওয়া কিছু উপলব্ধির কথা। তেমনই পাঁচটি জীবনবোধের কথা জেনে নেওয়া যাক। দেখুন তো, এভাবে জীবনটাকে ভিন্ন চোখে দেখতে পারেন কি না।
১. প্রতিক্রিয়া দেখাতে সময় নিন
আমরা অনেকেই চট করে রেগে যাই। কেউ কোনো কটূক্তি করলে রীতিমতো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠি! পাল্টা জবাব দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্বের ধার দেখাতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেও নিজের প্রতিক্রিয়া দেখাতে অন্তত কয়েকটা সেকেন্ড সময় নেওয়া উচিত। গভীর করে একটা শ্বাস নিন, মনে মনে ধীরেসুস্থে এক থেকে দশ অবধি গুনুন। ভেবেচিন্তে জবাব দিন। জবাবটা ঠিক ‘সমানে সমান’ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ আপনাকে ‘খারাপ’ বললেই তো আর আপনি ‘খারাপ’ হয়ে যাচ্ছেন না যে নিজেকে ‘ভালো’ প্রমাণ করতে হবে!
২. বিরক্তিকর মানুষগুলো আসলে স্কুলে যাওয়ার বয়সেই পৌঁছেনি!
যেসব মানুষ আপনার জীবনে নানান অসুবিধার সৃষ্টি করছেন, আপনার খুঁত ধরছেন, সবেতেই নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, ভেবে নিন, তাঁরা আদতে ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ নন। তাঁরা অবুঝ শিশুর মতোই আচরণ করেন। আপনি তাঁদের ‘অবুঝ’ ধরে নিন। তাঁদের কথাকে ‘পাত্তা’ দেওয়ার কিছু নেই। এভাবে ভাবতে পারলে জীবনের অশান্তির বহু বিষবৃক্ষ সমূল উৎপাটিত হবে, সেটিও নীরবে। আর দারুণ শান্তিপূর্ণভাবে।
৩. কথা দেওয়ার আগে নিজের ক্লান্তি ‘মেপে’ নিন
পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে সপ্তাহান্তে ঘুরতে যাবেন? সে তো দারুণ ব্যাপার। কিন্তু সপ্তাহ পেরোতে পেরোতে আপনার ক্লান্তি হয়তো এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে সেখানে যাওয়ার উৎসাহই হারিয়ে ফেললেন। এমন হলে বন্ধুরা কষ্ট পেতেই পারেন। অথচ দেখুন, যাওয়ার জন্য আপনি নিজেই কত মুখিয়ে ছিলেন! যেকোনো বিষয়ে যুক্ত হওয়ার আগেই আসলে ভেবে দেখা উচিত, উদ্যমের সঙ্গে আমরা তাতে থাকতে পারব কি না। আপনার ভেতরের শক্তি আর উদ্যমের মাত্রা কেবল আপনিই ‘মাপতে’ পারবেন, অন্য কেউ নয়।
বহু বিষয় নিয়ে আমরা নিজে থেকেই চিন্তা করি। এসব চিন্তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার, না চাইতেই বহু চিন্তা আমাদের মনে হাজির হয়ে যায়। দুটো বিষয় কিন্তু একেবারেই আলাদা। কী হবে, কীভাবে চলবে, তারপর কী হবে ইত্যাদি দুশ্চিন্তার এই দুষ্টচক্রে ঢুকবেন না। শঙ্কা-ভাবনা আসতেই পারে মনে। কিন্তু সেই চিন্তার সূত্র ধরে নিজে থেকে বাকিটা চিন্তা করে নেওয়া যাবে না। মনে খারাপ চিন্তা এলেও ভালো চিন্তা করতে চেষ্টা করুন। সেটা কিন্তু আপনার নিয়ন্ত্রণেই।
৫. অন্যের সমস্যা নিয়ে অতিভাবনা নয়
পৃথিবীজুড়েই কত না সমস্যা! এর এই সমস্যা, তো ওর সেই সমস্যা। এত কিছু নিয়ে ভাবতে না যাওয়াই ভালো। অন্যের সমস্যা নিয়ে আপনি ভাবতে গিয়ে হয়তো তাঁর ভালোর জন্য এমন কোনো পরামর্শ দিয়ে বসলেন, যা তিনি ভালোভাবে গ্রহণ করলেন না। কিংবা হয়তো সমস্যাজর্জরিত পৃথিবীকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আপনি নিজেই হতাশায় ডুবে থাকলেন। অতিভাবনার কারণে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারস্যাপার ঘটতে পারে যেকোনো সময়। তাতে জীবনের ‘সীমিত’ সময়ের অনেকটাই কিন্তু অকারণ ব্যয় হয়ে যাবে।
সূত্র: টাইম