কীভাবে বুঝবেন আপনার পোষা বিড়াল বা কুকুরটির ওজন বেশি?
মানবদেহের জন্য যেমন, তেমনি অন্যান্য প্রাণীর জন্যও অতিরিক্ত ওজন ক্ষতিকর। একটি বিড়াল কিংবা একটি কুকুর বাড়তি ওজনের জন্য ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির রোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকে। গিরাব্যথার কারণও হয়ে দাঁড়ায় এই বাড়তি ওজন। কী ধরনের উপসর্গ দেখে বুঝবেন আপনার আদরের বিড়াল বা কুকুরটির ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি? জানাচ্ছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচিং অ্যান্ড ট্রেনিং পেট হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক ডা. অপর্না দত্ত
অলস হয়ে পড়া
অলস হিসেবে বিড়ালের খ্যাতি থাকলেও তারা কিন্তু দারুণ খেলাধুলা করে। আর কুকুরের আনন্দময় ছোটাছুটি, লাফালাফির কথা তো সবারই জানা। যখন একটি বিড়াল বা কুকুরের ওজন খুব বেশি হয়ে যায়, তখন সে আর খেলাধুলায় উৎসাহ পায় না। দৃশ্যমানভাবেই ‘অলস’ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আপনি তার সঙ্গে খেলতে গেলেও সে খেলাধুলা না করে চুপচাপ থাকতে পছন্দ করবে। মনে রাখবেন, অসুস্থ অবস্থাতেও বিড়াল-কুকুর খেলাধুলায় উৎসাহ হারায়।
অল্পতেই হাঁপিয়ে পড়া
অতিরিক্ত ওজনের বিড়াল বা কুকুর খেলাধুলা করলেও অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠবে। এমনকি স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে গিয়েও সে হাঁপাতে পারে। তবে এটাও খেয়াল রাখুন, প্রাণীটি কোনো কারণে ভীত হয়ে হাঁপাচ্ছে কি না কিংবা পানির তৃষ্ণায় হাঁপাচ্ছে কি না। অন্য কোনো রোগ কিংবা অন্য কোনো কারণ না থাকলে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার বিষয়টি ঘটতে পারে তার বাড়তি ওজনের কারণেই।
ছোটাছুটি-লাফালাফিতে কষ্ট
বিড়াল বা কুকুরের ওজন অতিরিক্ত হলে সে তার নিজস্ব স্বাভাবিক গতিতে ছুটতে পারে না। লাফিয়ে কোনো কিছু করতে গেলেও কষ্ট বোধ করে। বিড়াল উঁচু জায়গা পছন্দ করে। তবে অতিরিক্ত ওজন হয়ে গেলে লক্ষ করবেন, উঁচু জায়গায় উঠতে তার কষ্ট হচ্ছে।
পাঁজর হাতে না পাওয়া
বিড়াল বা কুকুরের পাঁজরে আলতোভাবে হাত দিয়ে দেখুন, পাঁজরের হাড়গুলোকে অনুভব করতে পারছেন কি না। যদি পারেন, তাহলে তা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি পাঁজরের হাড় অনুভব করতে না পারেন কিংবা অনুভব করার জন্য হাত দিয়ে বেশ চাপ দিতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে পাঁজরের হাড়ের কাছে অতিরিক্ত চর্বি জমেছে। অর্থাৎ, তার ওজন বেশি। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, সুস্থ-স্বাভাবিক বিড়াল-কুকুরের পাঁজরে হাত দিয়ে হাড় অনুভব করা স্বাভাবিক বিষয় হলেও কেবল চোখে দেখে তাদের হাড়ের অস্তিত্ব বোঝাটা স্বাভাবিক নয়। সে ক্ষেত্রে বুঝতে হবে সে অপুষ্টিতে ভুগছে।
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও ওজন বাড়তে থাকা
বাড়ন্ত বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট ওজনের কাছাকাছিই থাকে বিড়াল-কুকুর। মাঝেমধ্যে ওজন মাপলেই যদি ওজন বাড়তে দেখা যায়, তাহলে বুঝবেন, সে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজনের দিকে চলে যাচ্ছে। এভাবে মাঝেমধ্যে ওজন মাপাটা এমনিতেও ভালো। আপনার অজান্তে কোনো রোগের কারণে তার ওজন যদি কমতেও থাকে, সেটিও শনাক্ত করতে পারবেন।
শেষকথা
অতিরিক্ত ওজনের কিছু উপসর্গ তো জানলেন। এর যেকোনোটি দেখা দিলেই প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ নিন দ্রুত। এসব উপসর্গ যে কেবল ওজন বাড়ার কারণেই হয়, তা কিন্তু নয়। অন্য কোনো রোগের কারণেও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই প্রাণীটির কী হয়েছে, সে ব্যাপারে নিজ থেকে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। আর ওজন বেশি হয়ে থাকলে কমানোর ব্যাপারেও উদ্যোগ নিন পরামর্শমাফিক। প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে না খাইয়ে রাখাও যাবে না, জোর করে ছোটাছুটির জন্য বাধ্য করাও যাবে না। বরং প্রাণীটির প্রয়োজনীয় পুষ্টিচাহিদা মিটিয়ে সঠিকভাবে তার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে আপনাকে কী কী কাজ করতে হবে, তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন।