একজন শামসুজ্জোহা আজও অনুপ্রেরণা

দেশের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সেই ইতিহাস আজকের শিক্ষার্থীদের কীভাবে অনুপ্রাণিত করে? লিখেছেন শিক্ষার্থীরা। এখানে পড়ুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আনজুম তাসনিমের লেখা

সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহাছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল ১৯৬৯ সাল। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সারা দেশের ছাত্রসমাজ যখন বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সেই আন্দোলনে সামনের সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল ভাঙার দৃঢ়সংকল্পে তাঁরা রাজপথে নামেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে গুলি চালানোর হুমকি দেয়। কিন্তু সেই হুমকির সামনে সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা ছিলেন এক অনড় প্রাচীর। তিনি ছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক। প্রক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তানি সেনার বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ছাত্রদের গায়ে গুলি লাগার আগে সেই গুলি যেন আমার বুকে লাগে।’ পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হন এই দেশপ্রেমিক শিক্ষক।

আরও পড়ুন

ছাত্রদের জীবন রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা—এ এক অনুপম দৃষ্টান্ত, যা আজও দেশের তরুণদের ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস জোগায়। শহীদ জোহার আত্মত্যাগ শুধু ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে নয়, পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও আমাদের উজ্জীবিত করেছিল। এমনকি ২০২৪ সালেও আমরা দেখেছি, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ যখন রাজপথে নেমেছিল, তখনো শহীদ জোহাকে স্মরণ করে গত বছরের ১৫ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার, স্যার...’ এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পরদিনই তিনি গুলিতে নিহত হন। ফেসবুকে তাঁর সেই লেখাই জোহা স্যারকে মনে করিয়ে দেয় আরও একবার।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আনজুম তাসনিম
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে রয়েছে ‘শহীদ জোহা চত্বর’। হাজারো শিক্ষার্থী আজও সেখানে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন, শিক্ষকের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। শহীদ জোহার চেতনা, আত্মত্যাগের সাহস নিজের মধ্যে ধারণ করাই হতে পারে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সর্বোত্তম উপায়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও যখনই প্রতিবাদের সুর ওঠে, তখনই উঠে আসে একজন শামসুজ্জোহার নাম। এই চেতনাই যেন দেশের তরুণদের আলোকিত করে।

আরও পড়ুন