ছুটির দিনগুলো আনন্দময় করার পরিকল্পনা আছে?
স্কুল-কলেজ ছুটি হতে শুরু করেছে। সন্তানের সঙ্গে মিলিয়ে অনেক মা-বাবা অফিস থেকে ছুটি নেবেন। কাছে বা দূরে কয়েকটা দিন ঘুরে বেড়াবেন মনের আনন্দে। কেউ যাবেন পাহাড় বা সমুদ্রের ধারে। কেউ শীত উপভোগ করতে ছুটবেন গ্রামের বাড়ি। পিঠা-পায়েসের স্বাদ নিতে নিতে স্মৃতি রোমন্থন চলবে পোড়োবাড়ি, শেওলা জমা পুকুরঘাট আর নদীর ধারে দাঁড়িয়ে। অনেকে পরিবার নিয়ে ছুটিটা হয়তো বাসাতেই কাটিয়ে দেবেন। যে যা-ই করুন না কেন, ছুটি শেষে যেন মনে না হয়, ‘ধুর ছাই, পুরো ছুটি মাটি হয়ে গেল!’
যাঁর যেমন সামর্থ্য, সেভাবেই ছুটির আগে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা সাজানো ভালো বলে মনে করেন ভ্রমণ আয়োজক প্রতিষ্ঠান ট্যুর গ্রুপ বিডির কর্ণধার ইমরানুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই বেড়ানোর মৌসুম এটা। শীতকাল, বড়দিন, ইংরেজি নতুন বছর—সব মিলিয়ে মানুষ লম্বা ছুটিতে থাকে। আমাদের দেশে আবার তার সঙ্গে যুক্ত হয় বার্ষিক পরীক্ষার পরের স্কুল ছুটি। তাই বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে কিছু বিষয়ে আগেই বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। কোনো দর্শনীয় স্থানে যেতে চাইলে সেখানকার থাকার জায়গা, যাতায়াতের টিকিট ইত্যাদি আগেই বুক করে নেওয়া ভালো।’
অনেক সময় পত্রিকায়ও খবর হয়, ‘সাজেকে পর্যটকের ঢল, হোটেল না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে পর্যটক’ কিংবা ‘কক্ষ নেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলে’।
শেষ মুহূর্তে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে বসলে নানাভাবে সময় শেষ হয়ে যেতে থাকে। বেড়াতে গিয়ে আয়েশ করার বদলে তাই ট্যুর শেষ হওয়ার পর মনে হয়, উফ্ হাঁপিয়ে গেছি। বিশ্রাম দরকার। এটা মোটেও কাম্য নয়। কোনো দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে গেলে তাই কিছু বিষয় আগেই ঠিক করে নেওয়া ভালো। ছুটি নিয়ে যদি নিছক ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গে দিনগুলো কাটাতে চান, সেখানেও একটা পরিকল্পনা থাকা জরুরি। ঢাকা শহরের একজন ব্যস্ত গাইনি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ছুটির পরিকল্পনা নিয়ে। তিনি জানালেন, ‘সারা বছর হাসপাতাল আর রোগী নিয়ে এমন ব্যস্ত থাকতে হয় যে সন্তানদের ছুটি থাকলেও আমি ছুটি পাই না। তাই ওরাই আমার সঙ্গে সমন্বয় করে বেড়াতে যায়। আমি হয়তো বছরের মাঝামাঝি কোনো কনফারেন্সে দেশের বাইরে যাচ্ছি, তিন দিনের ছুটি হলে তার সঙ্গে আরও কয়েক দিন অতিরিক্ত ছুটি নিই। স্বামী-সন্তানদের বলি, ওই সময়ে তারা যেতে পারবে কি না। সাধারণত পরীক্ষা না থাকলে ওদের নিয়ে কাজের পর কয়েক দিন বেড়িয়ে আসি। তবে এবার সেপ্টেম্বর মাসেই ঠিক করে রেখেছিলাম, ডিসেম্বরে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাব। সেভাবেই রোগীর চাপ কমিয়ে এনেছি। ১০ দিনের ছুটিতে বাসায় থেকেই আমরা কী কী করব, সেই তালিকা করছে সন্তানেরা। সেভাবেই এবার আমাদের ছুটি কাটবে ঢাকা শহর ও এর আশপাশে।’
ছুটি কাটুক পরিকল্পিতভাবে
সব মিলিয়ে কারও ছুটি হয়তো এক সপ্তাহের। এর মধ্যে বেড়াতে গেলেন হয়তো উত্তরের কোনো জেলায়। সেখানে কোথায় কোথায় ঘুরবেন, আগে থেকে তালিকা করে নিন। অনেক সময় কোনো একটি জেলার প্রচলিত দু-তিনটি দর্শনীয় জায়গার বাইরে সেখানকার লোকেরাও কোনো নতুন জায়গার খোঁজ দিতে পারেন না। এসব ক্ষেত্রে ব্লগ খুব উপকারী। অনেকেই আজকাল ঘোরার নতুন নতুন জায়গার সন্ধান দিচ্ছেন ইউটিউব ভিডিও বা রিলসে। উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গেলে সেখানকার শীত সম্বন্ধে ধারণা নিয়ে রাখুন। সেভাবে গরম কাপড়, ওষুধপত্রসহ জরুরি জিনিস গুছিয়ে রাখুন যাওয়ার আগে। বান্দরবানে ট্রেকিং করতে গিয়ে যাতে জুতা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, সেভাবে পাহাড়ে চলাচলের উপযোগী জুতা কিনে নিন। পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেলে বাকি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই জায়গা ঠিক করুন। আপনি হয়তো যেতে চান সুন্দরবন, এদিকে সন্তানের মন টানছে কুয়াকাটার সৈকত। জোর করে তাকে সুন্দরবনে হয়তো নিয়ে গেলেন, কিন্তু পুরোটা সময় সে থাকল মুখ ভোঁতা করে, এতে ঘোরার মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। বেড়াতে যাওয়ার আগে কখন রওনা হচ্ছেন, কোথায় কখন খাবেন, কোথায় থাকবেন—সবই আগে থেকে ঠিক করে রাখার চেষ্টা করুন। দরকার পড়লে স্থানীয় কারও সাহায্য নিন।
যাঁরা গ্রামে বা মফস্সলে থাকেন, এ সময় অনেকে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। অল্প কিছু দরকারি কাজ সেরে ছোটদের ঘুরিয়ে দেখান ঢাকা শহর। সে ক্ষেত্রে স্মৃতিসৌধ, জাদুঘর, সামরিক জাদুঘর, ভাসানী নভোথিয়েটার, বিমানবাহিনী জাদুঘর, মেট্রোরেল, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি ঘুরিয়ে দেখাতে পারেন।
ছুটির দিনগুলো যদি বাসায় কাটে
কেউ যদি মনে করেন ছুটির দিনগুলো বাসায় কাটাবেন, সেটাও আনন্দময় করে তোলা সম্ভব। একদিন হয়তো নিজেরা মিলে বাসার ছাদে পিকনিক করলেন। বারান্দায় সবজি বা ফুলের চারা লাগাতে পারেন সন্তানদের নিয়ে। প্রতিদিন সেসব পরিচর্যা করে ভালো সময় কাটবে। এ ছাড়া চোখের সামনে একটা ছোট গাছ কীভাবে বেড়ে ওঠে, সেই আনন্দও শিশুদের উদ্বেলিত করবে। ডিসেম্বর মাসজুড়ে নানা রকম নতুন নতুন সিনেমা ও সিরিজ রিলিজ পায়। একদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারেন। বাসায় বসেও মুভি নাইট হতে পারে চরকি বা নেটফ্লিক্সে। কারও বিশেষ দিবস থাকলে উদ্যাপন করতে পারেন গুছিয়ে। সন্তানদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন চিড়িয়াখানা, জাদুঘর কিংবা ঢাকার অদূরে কোনো গ্রাম থেকে। অনেক গ্রামেই আজকাল কমিউনিটি ট্যুরিজম হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে সেখানে সারা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন। সকালে রওনা হয়ে খেজুরের রস, হাঁসের মাংস, ছিটা রুটির মতো খাবারগুলো খেয়ে, গ্রামীণ পরিবেশে থেকে সবার মধ্যেই একধরনের পরিবর্তন আসবে।
কয়েকটা দিন শুধুই বাসায়ও থাকতে পারেন। ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় সন্তান যে বড় হয়ে যাচ্ছে, সেটা খেয়াল করি না আমরা। ওদের বেড়ে ওঠা খেয়াল করা ও ওদের মন বোঝার জন্যও বরাদ্দ রাখতে পারেন আপনার ছুটির দিনগুলো। এতে নিজেদের মধ্যে বন্ধনও বাড়বে।
মোটকথা, যেভাবেই ছুটি কাটাবেন বলে ঠিক করে থাকুন না কেন, সেটা যেন আফসোসের না হয়ে আনন্দের হয়। ছুটি শেষে যেন রিচার্জ হয়েই ফিরতে পারেন।