খাবারের অপচয় ও ব্যয় কমাবেন যেভাবে
খাবারের অপচয় করতে নেই—খুবই সহজ, সাদামাটা এই কথা সবাই জানেন। তবে বাস্তবতা হলো, নামীদামি বুফে রেস্তোরাঁর টেবিল থেকে শুরু করে সাধারণ পরিবারের ডাইনিং টেবিল—সব জায়গাতেই খাবারদাবারের অপচয় হয়। কেবল এই দিকটা খেয়াল না রাখার জন্য কতটা বাড়তি খরচ যে আপনার হচ্ছে, সে হিসাব হয়তো আপনি নিজেও রাখছেন না। খাবারের অপচয় কিন্তু কেবল অর্থের অপব্যয়ই নয়; বরং নষ্ট করা খাবার প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপরও ফেলে নেতিবাচক প্রভাব। বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের ৮ শতাংশের জন্য দায়ী কেবল খাবারের অপচয়। খাবারের অপচয় এড়াতে এবং খাবারের ব্যয় কমাতে খেয়াল রাখুন এসব বিষয়—
‘স্মার্ট’ হোন
বাড়িতে কী আছে, তা জেনে নিন বাজার করার আগেই। যা প্রয়োজন, কেবল ততটুকুই কিনুন। বিশেষ করে পচনশীল খাবার কেনার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রয়োজনের তালিকা করে নিয়ে বাজারে যাওয়া ভালো। প্রায়ই বাইরে খেতে না গিয়ে বরং বাড়িতে ভিন্ন ধারার, মজাদার পদ তৈরির রেসিপি শিখে নিতে পারেন। রোজ কতটা খাবার বা খাদ্য উপকরণ ফেলে দিচ্ছেন, সেটিরও খেয়াল রাখুন। তাহলে বুঝতে পারবেন, কতটা অপচয় রোধ করার সুযোগ আছে আপনার। খাওয়ার সময় প্লেটে ততটুকুই খাবার নেবেন, যতটা আপনি খেতে পারবেন। বুফে খেতে গেলেও এ অভ্যাস বজায় রাখুন।
পুষ্টির হিসাব-নিকাশ
আপনার পরিবারে কতজন সদস্য আছেন, তাঁদের কার কতটা খাবার প্রয়োজন, কার কোনো ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন, তা মাথায় রাখুন। রোজ সবার পুষ্টির চাহিদা মেটাতে কী কী খাবারের ব্যবস্থা করবেন, তার একটি তালিকা করতে পারেন। পুরো সপ্তাহের তালিকা করা থাকলে আপনার বাজার করতেও সুবিধা হবে। দামি উপকরণ মানেই যে পুষ্টিকর খাবার, তা কিন্তু নয়। তুলনামূলক কম খরচে কোন কোন পুষ্টিকর উপকরণ কেনা সম্ভব, তা ভেবে দেখুন। মাছ-মাংস ছাড়াও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা করে ফেলা সম্ভব। তাতে পরিবেশের ওপরও চাপ কমে।
খাবার সংরক্ষণ
খাবার সংরক্ষণ করুন সঠিক নিয়মে, সঠিক তাপমাত্রায়। ফ্রিজ ও ডিপফ্রিজ নিয়মমাফিক পরিষ্কার রাখুন অবশ্যই। পচনশীল খাবার ডিপফ্রিজে রাখতে পারেন। তবে একসঙ্গে অনেক খাবার ফ্রিজে বা ডিপফ্রিজে রাখা হলে আপনি হয়তো খেয়ালই রাখতে পারবেন না, কোনটা কখন পচে যাচ্ছে। তাই অতিরিক্ত খাবার সংরক্ষণ করবেন না। আর ফ্রিজে বা ডিপফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করার সময়েও সেসবই সামনের দিকে রাখবেন, যেসব সহজে পচে যেতে পারে।
কোনটা কত দিন?
কোন খাবার কত দিন ভালো থাকতে পারে, তা জেনে রাখুন। অনেক খাবার বা খাদ্য উপকরণেরই মেয়াদ উল্লেখ করা থাকে। এসব কেনার সময় ভেবে দেখুন, মেয়াদের মধ্যে তা ব্যবহার করার সম্ভাবনা আছে কি না। অনেক সময় মূল্যহ্রাসের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা অনেক জিনিস কিনে ফেলি। এটি ভালো অভ্যাস নয়। ব্যবহার করার সম্ভাবনা না থাকলে কোনো জিনিস কম দামেও কেনা উচিত নয়।
বেঁচে যাওয়া উপকরণ
সবজির খোসা, কাণ্ড, পাতা—এ রকম অনেক কিছুই ফেলে দেওয়া হয়, যা আসলে খাওয়া সম্ভব। কোন খাবারের কোন অংশ দিয়ে কী পদ করা যায়, সেটাও খুঁজে বের করতে পারেন। যেমন লাউয়ের খোসা দিয়ে ভাজি করা যায়, মিষ্টিকুমড়ার খোসা দিয়ে ভর্তা করা যায়, কপির কাণ্ড দিয়ে স্যুপ করা যায়। রান্নাবান্না তো হলো। প্রয়োজনমাফিক রান্নার পরও খাওয়াদাওয়ার পালা শেষে অল্প কিছু খাবার অবশ্য থেকে যেতে পারে। সম্ভব হলে সেটি সংরক্ষণ করে পর দিন কাজে লাগান। না হলে দুস্থ মানুষকে দিয়ে দিন। আর খাবারের উচ্ছিষ্ট দিয়ে দিন পথের প্রাণীদের।
ছাদবাগানে বিনিয়োগ
ছাদবাগানে একটু মনোযোগী হলে সেখান থেকেও বেশ কিছু জিনিস পেয়ে যেতে পারেন আপনি। এতে কিছুটা হলেও খরচ কমবে। আবার রান্নাঘরের অনেক উচ্ছিষ্ট দিয়ে গাছের পরিচর্যাও করা সম্ভব। এতে অপচয়ও এড়ানো যাবে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট