টিকটকে ভাইরাল এই ‘ফয়েল পেপার হ্যাক’ কি বাসন মাজতে কার্যকর?

ডিশওয়াশারে ফয়েল পেপার রেখে বাসন ধুয়ে চকচকে করার একাধিক ভিডিও দেখতে পাওয়া যায় টিকটকে। থালা, বাটি, চামচ সব ওয়াশারে সাজিয়ে তার ভেতর ফয়েল পেপার হাতে মুড়ে বানানো বল দেওয়া হচ্ছে। এরপর যন্ত্রটি চালু করে কয়েক মিনিট রাখা হয়। তারপর যখন ওয়াশার খোলা হচ্ছে, সব তৈজসপত্র একদম নতুনের মতো ঝকঝক করছে! অনেকের মনেই তাই প্রশ্ন, এই বুদ্ধি কি আসলেই কাজ করে?

ঘরবাড়ি ও জীবনযাপন নিয়ে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে লেখালেখি করছেন রিডার্স ডাইজেস্টের লেখক বারবারা বেলেসি জিটো। তিনি নিজেও টিকটকের ভাইরাল ভিডিও দেখে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করে বাসন পরিষ্কারের চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতাটাই তুলে ধরা হলো।

বাসনকোসন হাতে ঘষে পরিষ্কার করতে গেলে সময় লাগে অনেক। তাই এই সহজ পদ্ধতি দেখে সেটা নিজে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন বারবারা। তবে সেটা করতে গিয়ে বেশ দ্বিধার মধ্যেই ছিলেন তিনি। ভাবছিলেন, শুধু টিকটকের ভিডিও দেখে বাড়ির এমন জরুরি একটি যন্ত্রের ওপর নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে শেষে যন্ত্রটিই না বিগড়ে যায়। তারপরও সেটা করে দেখেছেন বারবারা।

ভিডিও দেখে কী কী করবেন

এভাবে দলা পাকিয়ে ফয়েল পেপার দিতে দেখা যায় টিকটকে
ছবি: রিডার্স ডাইজেস্ট

কাজটি বেশ সহজ। ডিশওয়াশারের ভেতর সব থালাবাটি রাখার পর, কিছু অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের বল তৈরি করে সেগুলোকে চামচ বা থালাবাটির ট্রেতে রাখুন। বারবারা নিজের মেশিনের ভেতর বাসনপাত্র রাখার বড় জায়গাটিতে রেখেছিলেন বলগুলো। এবার যন্ত্রটি চালু করে বারবারা বেশ অস্থিরভাবে পায়চারি করতে থাকেন ফলাফল দেখার জন্য। নির্ধারিত সময়ের পর যখন যন্ত্রটি খোলা হলো, বারবারার মন খারাপ হলো। কারণ বাসনকোসনের ওপরে এই ফয়েল হ্যাক খুব একটা কাজে আসেনি। মানে সেগুলো চকচকে হয়নি।

তবে বারবারা হাল ছাড়লেন না। তিনি উপায় বের করার চেষ্টা করলেন। কারণ, অভিজ্ঞ ডিশওয়াশার মেকানিকও তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে এই পদ্ধতি কার্যকর হওয়া সম্ভব। যুক্তরাজ্যের অনলাইনভিত্তিক দোকান র‍্যানসম স্পেয়ার্সের প্রতিষ্ঠাতা লি গিলবার্টের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন বারবারা। ডিশওয়াশার রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের পরামর্শদাতা হিসেবে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে গিলবার্টের। তিনি জানান, এটি সম্ভব। এই হ্যাকের পেছনে কাজ করছে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। আয়ন বিনিময় নামে পরিচিত এই পদ্ধতিতে গরম পানি, ডিটারজেন্ট ও ডিশওয়াশারের ভেতর থাকা বাসনকোসন একে অপরের সংস্পর্শে আসে। ফলে সব দাগ, ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

তবে এখানে একটি বিষয় জানিয়ে রাখা জরুরি, এই প্রক্রিয়া শুধু আপনার সিলভার বাসনকোসনেই কাজ করবে। আপনার চামচ-বাটি স্টেইনলেস স্টিল বা অন্য কোনো ধাতু দিয়ে তৈরি হলে, তাতে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটবে না।

এবার তাই অন্য বুদ্ধিতে গেলেন বারবারা। তাঁর মতে, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল সিলভারে থাকা কঠিন দাগও দূর করতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে ডিশওয়াশারে একটি বল ছুড়ে ফেললেই হবে না। এখানে আরও কিছু বিষয় যোগ-বিয়োগ করতে হবে। এটা ভেবেই বারবারা ধোয়ার প্রক্রিয়ায় এবার বাড়তি যোগ করলেন বেকিং সোডা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো, দ্বিতীয় পদ্ধতিটি ডিশওয়াশার ছাড়া বালতি বা বড় পাত্রেও ব্যবহার করতে পারবেন।

যেভাবে পরিষ্কার করবেন

বারবারার নির্দেশনা এমন—প্রতিটি পাত্র (যা ধুতে চান) ফয়েলে মুড়ে ফেলুন। এ ক্ষেত্রে ফয়েল পেপারের চকচকে দিকটি ভেতরের দিকে রাখতে হবে। এমনভাবে মুড়তে হবে, যাতে সিলভারের উপকরণটি পুরোপুরি ঢেকে যায়। এবার বাসনকোসনগুলো বালতি বা ওয়াশারারের সিঙ্কে রাখুন। বাসনগুলোর ওপরে ধীরে ধীরে পর্যাপ্ত গরম পানি ঢালুন। প্রতি গ্যালন পানিতে ১ কাপ হিসাবে বেকিং সোডা যোগ করুন। এবার সেখানে বাসনকোসন বা কাটলারিগুলো ৩০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন। এরপর দেখার পালা। পানি গরম থাকলে বাসনকোসন তুলতে চিমটা বা তাপপ্রতিরোধক গ্লাভস ব্যবহার করুন। ফয়েলপেপার সরান। পরিষ্কার, নরম কাপড় দিয়ে থালাবাটি মুছে নিন। দাগ থাকা জায়গাগুলো খেয়াল করুন। আমার মনে হয় এবার আপনি খুশি হবেন। কারণ, এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর।

শেষমেশ বারবারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে বেকিং সোডা হলো এখানকার মূল উপাদান, যা রুপা ও ফয়েলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এই পদ্ধতিতে গেলে খেয়াল রাখতে হবে, রুপায় যেন ফয়েল স্পর্শ করে এবং তৈজসগুলো অবশ্যই ডুবিয়ে রাখতে হবে গরম পানির ভেতর।