কিছু খাবার কেন শিশুর সহ্য হয় না

খাবারের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণ ফুড অ্যালার্জি বা ফুড ইনটলারেন্স। শিশু কোনো কোনো খাবার সহ্য করতে পারে না এ ফুড অ্যালার্জির কারণে। খাবারে অ্যালার্জি সাধারণত দেহের ইমিউন প্রক্রিয়ার অতিসংবেদনশীলতা থেকে হয়। তবে খাবারে এ বিরূপ প্রতিক্রিয়া অ-ইমিউন ধারাতেও ঘটতে পারে।

বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণ

  • প্রথমত, ‘সাইকোলজিক্যাল ফুড ইনটলারেন্স’। নির্দিষ্ট খাবার দেখামাত্রই শিশুর প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। খাবার চিনে ফেললে বিপদ। কিন্তু অন্যরূপে, অন্যভাবে যদি পরিবেশন করা যায়, তবে এসব লক্ষণ থাকে না। বিষয়টি মানসিক।

  • দ্বিতীয়ত, এনজাইমের ঘাটতি। খাবার হজমে নির্দিষ্ট এনজাইম আছে। নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদানের জন্য নির্দিষ্ট বিপাক রস কাজ করে। যদি দেখা যায়, দুধ খেলেই শিশুর বদহজম হচ্ছে, তবে হতে পারে শিশুটির দেহে ওই নির্দিষ্ট জারক রসের অনুপস্থিতি বা স্বল্পতা আছে। অ্যামিনো অ্যাসিড ও কার্বোহাইড্রেট বিপাকে সমস্যা হওয়ার মতো কিছু জন্মগত এনজাইমের ঘাটতি থাকতে পারে।

অন্যান্য কারণ

  • অনেক শিশু ‘লো প্রোটিন ডায়েট’ বেছে নেয়। দুধ, ডিম, মাংস, মাছ খেতে তাদের অনাগ্রহ। ভাত, সুজি, পায়েস—এমন শর্করার প্রতি আগ্রহ বেশি থাকা।

  • কিছু খাবার আছে, যা দেহে প্রবেশের পর এমন কিছু রাসায়নিক তৈরি করে, যেমন হিস্টামিন; যে কারণে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ঘটে। চা বা কফি, টিনজাত নানা দ্রব্যে এমন হতে পারে।

  • সব ধরনের অ্যালার্জিজনিত সমস্যার পেছনে জেনেটিক কারণ গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে বুঝবেন ফুড অ্যালার্জি

খাবার সহ্য না হওয়ার চিহ্নিত উপসর্গগুলো হলো কোনো নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণের পর এসব লক্ষণ:

  • ত্বকে চাকা দাগ, যেমন আরটিকেরিয়া, একজিমা।

  • শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ, সর্দি, শ্বাসকষ্ট।

  • পেটে ব্যথা বা মোচড় দেওয়া।

  • রক্তস্বল্পতা, মাইগ্রেন, আচরণে গরমিল।

  • বিপজ্জনক ‘এনাফাইলেকসিস শক’।

করণীয়

  • রোগনির্ণয়ে নানা ল্যাবরেটরি পরীক্ষার কথা বলা হয়, কিন্তু তাতে সাহায্য আসে সামান্যই। অ্যালার্জিজনিত খাবারের পরিচয় জানা গেলে সেই নির্দিষ্ট খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ রেখে উপসর্গাদি লোপ পেলে বোঝা গেল, সেই খাবার শিশুটির সহ্য হয় না। তবে তা খুঁজে পেতে ধৈর্য লাগে। সাধারণভাবে দু-তিন সপ্তাহ খাদ্যটি না খাওয়ালে উপসর্গ চলে যেতে পারে।

  • হাইপো অ্যালার্জি ডায়েটের একটা তালিকা করা যেতে পারে। এমন তালিকায় কিছু খাবার বর্জনের কথা বলা হয়, যেমন গরুর দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার, ছাগদুগ্ধ, সয়া ও সয়াজাত খাবার, গরুর মাংস, ডিম, কিছু নির্দিষ্ট মাছ, গম, চকলেট, কৃত্রিম কালারিং এজেন্টস, প্রিজারভেটিভ।

  • শিশুর খাবারের অ্যালার্জির ঝুঁকি কমাতে জীবনের প্রথম ৬ মাস শুধু বুকের দুধ পান করানো দরকার।