ডায়েট নিয়ে মানুষ যা ভেবেছে গত বছর
দুই দশক আগেও আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে পুষ্টি, স্বাস্থ্যকর খাবারের মতো বিষয়গুলো ছিল অবহেলিত। অধিকাংশ মানুষ ভাবতেন, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে শুধু পথ্যের প্রয়োজন হয়। আর শুধু ডায়াবেটিস হলেই কেবল সময়মতো মেপে মেপে খেতে হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব বিষয়ে বেড়েছে সচেতনতা। করোনার সময়ের পর থেকে মানুষের মধ্যে খাবার, ডায়েট, পুষ্টি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাবিষয়ক সচেতনতা বেড়েছে। ২০২৩ সালে এসে দেশের পুষ্টি সেক্টরের অগ্রগতি প্রায় বিশ্বমানের বলা যায়।
সাধারণ একজন মানুষও এখন খাবার নিয়ে সচেতন। বছরজুড়ে মানুষ জানতে চেয়েছেন, কোন বয়সে কেমন খাবার জরুরি। মানুষ বুঝতে চেয়েছেন, কোন রোগে কী খাবার। গর্ভকালীন পুষ্টির চাহিদার ওপর যে শিশুর সুস্থতাসহ শারীরিক, মানসিক বৃদ্ধি নির্ভর করে; সেটা এখনকার মায়েরা জানেন। ওজনাধিক্যের ক্ষতি কতটা, কীভাবে বাড়তি ওজন কমানো যায়—এসব প্রশ্ন নিয়ে সারা বছর পুষ্টিবিদের কাছে এসেছেন মানুষ। অধুনায় আমি ডায়েট ও পুষ্টি নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, সেসবেও মানুষের সচেতনতার লক্ষণ বোঝা যায়। সুদূর দিনাজপুর, পঞ্চগড় বা পটুয়াখালী থেকে মানুষ চিঠি লিখেছেন, জানতে চেয়েছেন, উচ্চতা বাড়াতে কী খাবেন। কেউ জানতে চেয়েছেন বয়স্ক মানুষদের খাবারদাবার নিয়েও।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখন একজন রোগী কিংবা সাধারণ মানুষ তাঁর পুষ্টি পরামর্শের জন্য সরাসরি একজন পুষ্টিবিদের চেম্বারে দেখা করতে যাচ্ছেন, পরামর্শ নিচ্ছেন। পুষ্টিবিষয়ক চিকিৎসা মেনে চলে অনাগত রোগপ্রতিরোধ করে সুস্থ, কর্মক্ষম জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের সব পুষ্টিবিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এটা সম্ভব হয়েছে। আমি অ্যাসোসিয়েশন অব নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান ফর সোশ্যাল সার্ভিসেসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সারা দেশের পুষ্টিবিদদের সঙ্গেই যুক্ত আছি। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা শুনেছি। সবাই দারুণভাবে সাধারণ মানুষকে ডায়েটবিষয়ক সেবা দিচ্ছেন। তাই দেশের সব পুষ্টিবিদকে এই সুযোগে একটা ধন্যবাদও দিতে চাই।
ভাত-মাছের বাঙালি এখন নানা রকম বিদেশি খাবারে অভ্যস্ত। বাড়িতে রান্না করার বদলে অনেকে রেস্তোরাঁর খাবার খেতে ভালোবাসেন। বাইরের খাবার বাড়ির তুলনায় কম স্বাস্থ্যকর। তাই বাইরে খেলে কোন ধরনের খাবারে পুষ্টি মিলবে, সেটাও জানতে চান মানুষ। নতুন বছরেও মানুষের পুষ্টি অভ্যাসের ধারা চলমান থাকবে আশা করি।
২০২৩ সালে ওজন কমানোর জন্য কিছু কিছু মানুষ বিশেষজ্ঞের সুপরামর্শের বদলে অস্বাভাবিক ও অস্বাস্থ্যকর (কিটো ডায়েট, কার্ব বাদে খাবার খাওয়া ইত্যাদি) পরামর্শের শিকার হয়ে ভুগেছেন। বিশেষ করে অনলাইনে এটা বেশি ঘটেছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নতুন বছরে তাই প্রত্যাশা থাকবে, সেবাগ্রহীতারা যাতে সঠিক পরামর্শ পান। তবে অনলাইনে ভুল তথ্য ও ভিডিও দেখে ওজন কমানো বা বাড়ানোর মতো ঝুঁকিতে না গিয়ে সরাসরি পরামর্শ নিতে হবে।
আশা করি ২০২৪ সালে আমরা আরও অনেক জনসচেতনতা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে পারব। একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে সব ধরনের অপ-পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ প্রতিরোধে সরকারি সহযোগিতার আশা করি। ২০২৪ সাল হোক প্রত্যেক মানুষের সুষম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার। এবার আমাদের সবার স্লোগান হোক, ‘খাবারের কথা ভাবলেই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাব, সুস্থ-সবল জাতি গড়ায় সচেষ্ট হব’।