ফ্যানশিল্পের বর্তমান অবস্থা কী?
বাংলাদেশে সিলিং ফ্যানশিল্পের বর্তমান অবস্থা বেশ সম্ভাবনাময় এবং ক্রমাগত বিকাশমান। গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, আবাসন খাতের সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ–সুবিধার উন্নতি, ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধি ও ভোক্তার চাহিদার ধরন পরিবর্তনের ফলে এই খাতে প্রবৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলো নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজে ফ্যান রপ্তানি করায় এই শিল্পে নতুন গতি যোগ হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফ্যানের বাজার কেমন?
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রেতাদের চাহিদাগুলো বহুমুখী হওয়ায় বাজারে বিভিন্ন ধরন, আকার ও রঙের ফ্যান এসেছে। ক্রেতার রুচির পরিবর্তন হয়ে এখন ফ্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘরের অন্দরসজ্জার সঙ্গে মানানসই ফ্যানের চাহিদা আসছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মে অসহনীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে রিচার্জেবল টেবিল ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে প্রচুর। আগে এই সব ফ্যানের চাহিদা চীন ও ভারতনির্ভর আমদানি দিয়ে পূরণ করা হলেও বর্তমানে দেশি ব্র্যান্ডগুলো গুণগতমানে উন্নত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে এগিয়ে থাকছে। এসব দিক বিবেচনায় ওয়ালটন স্থানীয় বাজারে শীর্ষ অবস্থান তৈরির পাশাপাশি এখন বৈশ্বিক বাজার দখলে কাজ করে যাচ্ছে।
কী ধরনের নতুন প্রযুক্তি বা ফিচার গ্রাহকেরা বেশি পছন্দ করছেন?
বর্তমানে সিলিং ফ্যান বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বিএলডিসি প্রযুক্তি, স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচার (রিমোট কন্ট্রোল, মোবাইল অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ) ইত্যাদির দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওয়ালটন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাজারে মাত্র ৩৫ ওয়াটের বিএলডিসি (ব্রাশলেস ডিসি মোটর) ফ্যানের বিভিন্ন মডেল নিয়ে এসেছে। সাধারণ ফ্যানের তুলনায় এই ফ্যান ৬৫ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এবং আধুনিক রিমোট কন্ট্রোল থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে ভালো সাড়া ও চাহিদা পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া ওয়ালটন সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে প্রথমবারের মতো নিয়ে এসেছে রিচার্জেবল সিলিং ফ্যান। পাশাপাশি আমদানিনির্ভর ওয়ারেন্টিবিহীন নিম্নমানের সোলার ফ্যানের বাজারে গ্রাহককে উন্নত সেবা প্রদানের জন্য ‘সেইফ’ ব্র্যান্ডে ওয়ারেন্টিসহ সোলার ফ্যান বিক্রি করছে ওয়ালটন।
বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বা স্মার্ট প্রযুক্তির ফ্যানের বাজার কেমন?
বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বা স্মার্ট প্রযুক্তির ফ্যানের বাজার আশাব্যাঞ্জক, প্রতিনিয়ত এসব প্রযুক্তির ফ্যানের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে কলকারখানায় যেখানে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়ে থাকে, সেখানে শিল্পকারখানাসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিএলডিসি ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্যানের দিকে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিএলডিসি প্রযুক্তির ফ্যান, রিমোট-অ্যাপ কন্ট্রোল ফ্যান, উন্নত কপার মোটরের ফ্যানের চাহিদা থাকলেও এই সব পণ্য উৎপাদনের খরচ বেশি হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিতরণ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও স্মার্ট প্রযুক্তির ফ্যানের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকারের বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা কি এই খাতে কোনো প্রভাব ফেলেছে?
কাঁচামালের উচ্চমূল্য ও ডলার রেটের ওঠানামা ব্যবসার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয়ভাবে ফ্যান উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও এর কাঁচামাল যেমন কপার ও অ্যালুমিনিয়াম আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হয়। ডলার রেটের ওঠানামা ও কাঁচামালের দামের পরিবর্তন ফ্যানশিল্পকে সরাসরি প্রভাবিত করে। ফলে অনেক ব্র্যান্ড কস্ট অপটিমাইজেশন করতে হয় এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বিনিয়োগ উৎসাহ হ্রাস পায়। দ্বিতীয়ত, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবাসন ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা থাকায় ফ্যানশিল্পের আকাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব পণ্য নিয়ে আপনাদের উদ্যোগ কী?
পরিবেশবান্ধব পণ্য বা টেকসই প্রযুক্তির ফ্যান নিয়ে ওয়ালটন ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে ওয়ালটন নের্তৃত্ব প্রদান করতে চায়। সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের বিএলডিসি ও সোলার ফ্যান উৎপাদনের ক্ষেত্রে ওয়ালটন নিজস্ব হাই-টেক ফ্যাক্টরিতে নতুন করে বিনিয়োগ করেছে এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য বা টেকসই প্রযুক্তির পাখার বাজার সৃষ্টি ও চাহিদা তৈরিতে ব্যাপক প্রসার ও প্রচারণা করে যাচ্ছে। টেকসই পরিবেশ এবং জ্বালানি নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্যান হবে অন্যতম সহায়ক।
আপনার কোম্পানির বাজার শেয়ার বর্তমানে কতটুকু?
দেশে ফ্যান পণ্যের বার্ষিক বাজার ৬ হাজার কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ৮ থেকে ১২ শতাংশ। ওয়ালটন ব্র্যান্ডের হিস্যা ১৫ শতাংশ যা প্রতিযোগী নামী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
আপনার কোম্পানির মূল সুবিধা কী?
নিজস্ব উৎপাদনসক্ষমতা, কাঁচামাল সংগ্রহ, পণ্য উৎপাদন ও বিতরণে শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওর্য়াড লিংকেজ, চৌকস গবেষণা ও উদ্ভাবন, মান নিয়ন্ত্রণ দল যারা নিরলসভাবে সর্বোচ্চ মানের ফ্যান উৎপাদন করে যাচ্ছে। নিজস্ব উৎপাদনসক্ষমতা থাকায় ভোক্তাদের ভালো পণ্যটি সেরা দামে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রয়েছে বিশাল সেলস টিম আর স্থানীয় ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে আমাদের সম্মানিত ডিলার ও নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র।
আগামী পাঁচ বছরে সিলিং ফ্যান বাজারের কী ধরনের পরিবর্তন আশা করা যায়?
আগামী পাঁচ বছরে সিলিং ফ্যানের বাজারে বেশ কিছু পরিবর্তন আশা করা যাচ্ছে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্যানের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে আধুনিক ডিজাইনের ফ্যানের চাহিদা বাড়বে। রিমোট কন্ট্রোল ও অ্যাপভিত্তিক ফ্যানের ভোক্তা তৈরি হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্যানের চাহিদা পূরণের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সিলিং ফ্যানগুলোকে সম্পূর্ণ বিএলডিসি প্রযুক্তিতে স্থানান্তর করা আমাদের একটি বড় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আমরা এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি রিচার্জেবল সিলিং ফ্যান, এলইডি লাইটযুক্ত সিলিং ফ্যান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিলিং ফ্যান নিয়েও কাজ করছি।
এই শিল্পের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ কী কী এবং সেগুলো মোকাবিলায় আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
ফ্যানশিল্পের সামনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা ব্যবসার ধারাবাহিক উন্নতি ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য মোকাবিলা করা অপরিহার্য। ওয়ালটনের ফ্যানের ব্যবসা এসব চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে। যেমন মূল্যস্ফীতি ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, বৈশ্বিক ও স্থানীয় প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ব্যয়, নিয়ন্ত্রক নীতিমালা ও মানদণ্ড—বিএসটিআই, স্টার রেটিং মেনে চলায় বাধ্যবাধকতা, পরিবেশন খরচ বেড়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছি, তা হচ্ছে—উৎপাদন দক্ষতা ও খরচ নিয়ন্ত্রণ, উন্নত প্রযুক্তির ফ্যান বাজারজাতকরণ, ব্র্যান্ডিং ও বিপণন কার্যক্রম জোরদার করা, মানসম্মত ও সাশ্রয়ী পণ্য উদ্ভাবন, ডিস্ট্রিবিউশন ও সার্ভিস নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে সার্ভিস সেন্টার বৃদ্ধি এবং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ প্রদান। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ওয়ালটন ফ্যানবাজারে নেতৃত্ব ধরে রাখার পাশাপাশি ভোক্তাদের জন্য আরও উদ্ভাবনী ও মানসম্মত পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।