প্যারালিম্পিকে আমার মূল দায়িত্ব ডোপ টেস্টের কাজে সহায়তা করা

গত ২৮ আগস্ট শুরু হওয়া গ্রীষ্মকালীন প্যারালিম্পিকের পর্দা নামছে কাল রোববার। এতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশের বিজয় বড়ুয়া চৌধুরী। তাঁর গল্প শুনেছেন সজীব মিয়া

প্যারালিম্পিক স্টেডিয়ামে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

প্যারিসে আছি এক দশক। এই শহরেই বসেছে এবারের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আসর। কয়েক বছর ধরেই চলছিল মহাযজ্ঞের তোড়জোড়। দিনকে দিন শহরের নানা পরিবর্তনও চোখে পড়ছিল। বাংলাদেশ অলিম্পিকের কোনো আসরে সোনা জেতেনি সত্যি, কিন্তু অলিম্পিক নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। আমারও সেই ছোটবেলা থেকে অলিম্পিক নিয়ে আগ্রহ। তাই প্যারিসে যখন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল, তখনই ভাবছিলাম, কোনোভাবে যুক্ত হতে পারলে গল্প করার মতো একটা উপলক্ষ পেতাম।

সেই সুযোগ তৈরি হলো গত বছরের সেপ্টেম্বরে। প্যারিস অলিম্পিকে স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হবে, এমন একটা বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই আবেদন করে ফেলি। এরপর নানা তথ্য-উপাত্ত দিতে হলো। গত ফেব্রুয়ারিতে ভার্চ্যুয়াল সাক্ষাৎকারও নিল। এরপরই নিশ্চিত করে, আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। জুনে স্বেচ্ছাসেবকের পোশাক-আশাক বুঝিয়ে দেয়। এরপর জুলাইয়ে শুরু হলো চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ।

আরও পড়ুন
ডোপ টেস্টে সহায়তার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্টেডিয়ামেও দায়িত্ব পালন করেন বিজয় বড়ুয়া
ছবি: সংগৃহীত

আমার মূল দায়িত্ব ডোপ টেস্টের কাজে সহায়তা করা। অ্যাথলেটরা নিষিদ্ধ কিছু সেবন করেছেন সন্দেহ হলে কিংবা কেউ কারও নামে অভিযোগ আনলে এই টেস্টের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা হয়। এবারের আসরে সেই অভিজ্ঞতা হলো ২৯ আগস্ট। একটি দেশের একজন অ্যাথলেট বিজয়ী হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো। তাঁকে সুইমিংপুল থেকে নিয়ে গেলাম চিকিৎসকের কাছে। সেখানে কাগজপত্র পূরণ করতে হয়। সেসব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে অভিযুক্ত অ্যাথলেটের নমুনা নেওয়া হলো। এর পরের কার্যক্রমে অবশ্য আমাদের অংশগ্রহণ থাকে না।

ডোপ টেস্টের ডিউটিতে প্রতিদিন কাজ থাকে না। তখন আমরা ডোপ টেস্টিং দলের ৯ জন অন্য স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই। প্রতিদিন আমাদের দুটি করে পালা। প্রতি পালায় ৯৭০ জন দায়িত্ব পালন করে। আমি বিকেলের পালায় কাজ করি। বেলা পৌনে তিনটায় হাজির হয়ে দায়িত্ব বুঝে নিই। কাজ করতে হয় রাত ১১টা পর্যন্ত। অলিম্পিক কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অ্যাপে প্রতিনিয়তই আমাদের আলোচনা চলতে থাকে।

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিয়ে বানানো কোট পিন সঙ্গে রেখেছিলাম। অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের উপহার দিয়েছি। বিষয়টা আমার কাছে দারুণ লেগেছে। অন্যরাও আমাকে উপহার দিয়েছে। ১৭টি দেশের কোট পিন এখন আমার সংগ্রহে। এই কাজে কোনো অর্থকড়ি প্রাপ্তির সুযোগ নেই। তবে যেসব উপহার অলিম্পিক কমিটির কাছ থেকে পেয়েছি, সেসব নিয়ে তো সারা জীবন গল্প করতে পারব।