অন্যের বিপদে বারবার ফোন করে বিড়ম্বনা বাড়াচ্ছেন না তো?
বিপদ কখনো বলেকয়ে আসে না। তবে বিপদ এলে আমরা অনেক কথাই বলি, অনেক কাজই করি। বিপদে যেমন মুঠোফোনে সাহায্য চাওয়া এবং পাওয়া যায়, তেমনি অনেক সময় মুশকিলের কারণও হয়ে ওঠে। এই ধরুন, কেউ তাঁর আপনজনকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন। সেই মুহূর্তে বারবার বেজে উঠতে থাকল তাঁর ফোন। বিপদের খবর পেয়েই শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফোন করছেন, উৎকণ্ঠিত হয়ে জানতে চাইছেন পরিস্থিতি। কিন্তু সেই মুহূর্তে তিনি ফোন ধরবেন, নাকি আপনজনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন!
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক বলেন, ‘কারও বিপদের খবর শুনে ফোন করার আগে কিছু জিনিস বিবেচনায় নিন। যাঁকে ফোন করতে চাচ্ছেন, তিনি সেই মুহূর্তে কোথায় থাকতে পারেন, ঠিক কী পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে পারেন, উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়ান তাঁর প্রয়োজন বুঝে। যিনি সামনে থেকে বিপদটা সামলাচ্ছেন, তাঁর সঙ্গে সেই সময় এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়, যাতে আপনার অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায়।’
আপনজন দুর্ঘটনায় পড়লেও প্রাথমিক চিকিৎসা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ, নিজের কর্মস্থলে যোগাযোগসহ নানা কিছুই করতে হয়। কেউ মারা গেলেও তাঁর সৎকারের ব্যবস্থাসহ নানান দিক মাথায় রাখতে হয়। এমন কোনো এক বিপদে আপনি হয়তো নিজে যেতে পারছেন না, কিন্তু ভাবছেন, ফোনে খোঁজখবর নেবেন। কিন্তু আপনার মতো আরও কতজন যে তাঁকে ফোন করছেন, সেটাও একবার ভেবে দেখুন। কারও বিপদের সময় আচরণের এই ভুলগুলো করবেন না—
কেউ ফোন না ধরলে বারবার ফোন করবেন না।
ফোন ধরলেও একটু পরপর ‘আপডেট’ জানতে চাইবেন না।
তিনি নিজে হয়তো আপনাকে বিপদের সংবাদ দিতে পারেননি, আপনি অন্য কারও কাছে শুনেছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁকে দোষারোপ করবেন না কিংবা আপনার অভিমানের ফিরিস্তি শোনাবেন না।
এমন কিছু বলবেন না, যাতে তিনি মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েন। যেমন এটা করলে ওটা হতো না কিংবা ওখানে না গেলে এটা হতো না।
চিকিৎসা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। এমন প্রশ্ন করবেন না যে রোগীকে আরও নামকরা, ব্যয়বহুল হাসপাতালে নেওয়া হলো না কেন।
কারও মৃত্যুর খবর পেয়ে মৃত্যুর কারণ নিয়ে তখনই ফোনে বিশ্লেষণ শুরু করবেন না।
বরং বিপদে পড়া মানুষটি যেখানে রয়েছেন, সেখানে যেতে চেষ্টা করতে পারেন। পরিস্থিতি বুঝে সেইমতো সাহায্য করুন। রক্তের প্রয়োজন হলে রক্তদাতার খোঁজ করুন। কেউ দীর্ঘ সময় দৌড়ঝাঁপ করলে তাঁর খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করতে পারেন। হাসপাতালে কেউ ভর্তি থাকলে তাঁর সঙ্গে পালাক্রমে থাকার মতো কেউ আছেন কি না, জানতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে নিজে থাকুন, কিংবা যাঁদের পক্ষে থাকা সম্ভব, তাঁদের খবর দিন। আর্থিক সমর্থন প্রয়োজন কি না, বুঝতে চেষ্টা করুন। আর নিজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে ফোন করতে পারেন, যিনি বিপদ সামলানো মানুষটির কাছাকাছি আছেন। তাঁর কাছে সংক্ষেপে খবর নিন এবং সেখানকার পরিস্থিতি বুঝে একইভাবে এমন কিছু একটা করতে চেষ্টা করুন, যা বিপদে পড়া মানুষগুলোর কাজে লাগে। কেউ ফোন না ধরলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে রাখতে পারেন। আর অবশ্যই মনে রাখবেন, বিপদের ধকল সামলে উঠতে প্রত্যেকেরই কিছুটা সময় প্রয়োজন হয়।