সাঁতার কেটে ব্রহ্মপুত্র প্রবেশমুখ থেকে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছেন রফিকুল
কুড়িগ্রামের ঝুনকার চর সীমান্তে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। গত ২১ ফেব্রুয়ারি নদের এই প্রবেশমুখ থেকেই সাঁতার কাটতে শুরু করেছেন মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম। তাঁর লক্ষ্য নদীপথে সাঁতরে পৌঁছাবেন বঙ্গোপসাগরে। এরই মধ্যে দীর্ঘ ৫৫০ কিলোমিটার এই নৌপথের প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর এই অভিযানের নাম ‘দ্য গ্রেট ডেলটা সুইম’।
২২ মার্চ সাঁতারের ১৯তম দিনে শরীয়তপুরের চরআত্রা থেকে প্রায় ২২ কিলোমটার সাঁতার কেটে চাঁদপুরে মোহনায় (পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল) পৌঁছান রফিকুল। আজ থেকে তিন দিনের বিরতি নিয়েছেন। এরপর ২৬ মার্চ আবার চাঁদপুরের একই জায়গা থেকে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে সাঁতার শুরু করবেন।
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল ২৬ মার্চের মধ্যে সাঁতার-অভিযান শেষ করব। কিন্তু কিছু অসুবিধার কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। গতকাল চাঁদপুর থেকে ঢাকায় চলে এসেছি। আশা করছি, ২৬ মার্চ থেকে আবার সাঁতার শুরু করে ৪ কি ৫ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে যাব।’
ঝুনকার চর থেকে প্রথম দিন ২১ কিলোমিটার সাঁতার কেটে গুজিমারি চরে পৌঁছান রফিকুল ইসলাম। এভাবে গাইবান্ধার বালাসিঘাট, বগুড়ার পাকুল্লা হয়ে নবম দিনে যমুনা সেতুর পূর্ব পাড়ে পৌঁছান। তিন দিন বিরতি দিয়ে ১৩ মার্চ থেকে আবার সাঁতার শুরু করে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, শরীয়তপুর হয়ে চাঁদপুরে পৌঁছান। নৌপথে তিনি পাড়ি দিয়েছেন দুধকুমার নদের মিলনস্থল, তিস্তা নদীর মিলনস্থল, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলনস্থল, পদ্মা ও যমুনার মিলনস্থল এবং পদ্মা ও মেঘনার মিলনস্থল।
মুহম্মদ রফিকুল ইসলামের এই সাঁতার–অভিযানের আয়োজক রোমাঞ্চপ্রিয়দের সংগঠন ‘অভিযাত্রী’। নদীমাত্রিক এই দেশে নদী ও সমুদ্রের রূপলাবণ্য উপভোগ ও অ্যাডভেঞ্চারের উদ্দেশ্যেই সংগঠনটি ২০১৮ সাল থেকে সাঁতারকেন্দ্রিক নানা আয়োজন করে আসছে। রফিফুলের সঙ্গে একটি কায়াক ও একটি ট্রলারে অভিযাত্রী দলের সদস্যরাও সার্বক্ষণিক থাকছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ। এর আগে বাংলা চ্যানেলে সাঁতার কেটেছেন। অংশ নিয়েছেন ওশানম্যান দুবাই প্রতিযোগিতায়। গত বছর গিয়েছিলেন অ্যান্টার্কটিকা অভিযানে, সেখানকার হিমশীতল পানিতেও সাঁতার কেটেছেন।
দ্য গ্রেট ডেলটা সুইম অভিযানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদী নিয়ে মানুষের কৌতূহল, বিস্ময়, ভালোবাসা টের পেয়েছি এবার সাঁতার শুরু করে। পথে অনেক মানুষের আতিথেয়তা পেয়েছি, তাঁরা নিজেদের বাড়িতে রাতে থাকার ব্যবস্থা করেছেন, রান্না করে খাইয়েছেন। নদী যে পারস্পরিক সম্পর্কের কত বড় মাধ্যম, সেটাও নতুন করে অনুভব করেছি।’