হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে এলেন?
আমি তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ি। এক সিনিয়র ভাই প্যান প্যাসিফিকে কাজ করতেন। তাঁর মাধ্যমেই সে সময়ের শেরাটন হোটেলের ব্যাংকুয়েট সার্ভিসে অনিয়মিত কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করি। মানে, যেদিন ডাক পড়ত, সেদিন এসে কাজ করে যেতাম। ঘণ্টাপ্রতি ২০ টাকা দেওয়া হতো। এই কাজ করতে করতেই পাঁচ তারকা হোটেলের জৌলুশ আমাকে আকৃষ্ট করে। তখনকার জেনারেল ম্যানেজার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, কীভাবে তিনি স্টুয়ার্ড (খাদ্য পরিবেশনকারী) হিসেবে যোগ দিয়ে এই পজিশনে এসেছেন। মানে ভদ্রলোক বোঝাতে চেয়েছেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি যে পজিশনেই যোগ দেন না কেন, প্রয়োজনীয় পড়াশোনা আর দক্ষতা অর্জন করতে পারলে টপ বস হতে পারবেন।
প্রথম আলো :
তাঁর কথাগুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত করল?
তাঁর কথা আমাকে আকৃষ্ট করল। জানার চেষ্টা করলাম, টপ বসদের সুযোগ-সুবিধা কী। তারপরও ভোলার এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মনে তো দোলাচল থাকেই। প্লেট ধোয়া, খাবার পরিবেশন করার কাজ করলে মানুষ কী বলবে ভেবে আবার থমকে যাই। তাই অনার্স শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিলাম। ভাইভা পর্যন্ত গিয়ে বাদ পড়লাম।
এরপর?
ভাবলাম, আর সময় নষ্ট করা যাবে না। করপোরেট সেক্টরে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সে ক্ষেত্রে আমার প্রথম পছন্দ ছিল দূতাবাস কিংবা পাঁচ তারকা হোটেল। তারকা হোটেলে কাজ করতে হলে এ বিষয়ে পড়াশোনা করা দরকার। পর্যটন করপোরেশনে খোঁজ করলাম। ২০০১ সালে আইএলও, ইউএনডিপির সহযোগিতায় তারা একটা ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে। পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পেলাম। প্রশিক্ষকেরা দারুণ অনুপ্রাণিত করল। পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজও করতে থাকলাম। তবে বিপত্তি কিন্তু থেকেই গেল, আত্মীয়স্বজন জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারি না কী করি। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলি, পড়াশোনা করি।
প্রথম আলো :
স্থায়ী চাকরি কবে হলো?
২০০৭ সালে ওয়েস্টিন ঢাকা প্রতিষ্ঠিত হলো। তত দিনে আমার ডিপ্লোমা শেষ, মাস্টার্স শেষ। তখন সেখানে ফুলটাইম চাকরি পেয়ে যাই। এখানে যোগ দিয়ে ধাপে ধাপে হাউসকিপিং থেকে ফ্রন্ট ডেস্কসহ সব অপারেশনাল ডিপার্টমেন্টে কাজ করেছি। পরবর্তী সময়ে ডিপার্টমেন্ট হেড হয়েছি। সেখান থেকে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পাই।
পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। হসপিটালিটির ওপর এমফিল শেষ করে এখন পিএইচডি করছি।
এখন তো সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন?
জি, আমি এখন ইউনিক হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টের সিইও হিসেবে ওয়েস্টিন, শেরাটন আর হানসা—এই তিনটি অপারেশনাল হোটেলের দেখভাল করি। এ ছাড়া আরও চারটা ইনকামিং হোটেল নিয়ে আমরা কাজ করছি।
প্রথম আলো :
হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম খাত এখন নতুনদের অপেক্ষায় আছে। এখানে তরুণদের অনেক কিছু করার আছে। তবে অপরচুনিটি নিতে চাইলে নিজেকে তৈরি করতে হবে, দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি লেগেও থাকতে হবে। হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম নিয়ে পড়াশোনা করতে পারলে আন্তর্জাতিকভাবেও কাজ করার সুযোগ আছে। আবার আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়।