মরক্কোর এই প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষে মিশে আছে রোমানদের সমৃদ্ধ অতীত
রোমান সাম্রাজ্যের সময় গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠেছিল মরক্কোর ভলুবিলিস। এ শহরের স্থাপনায় এখনো রয়ে গেছে রোমানদের ছাপ। ঘুরতে গিয়েছিলেন ফেরদৌস আহমেদ
মরক্কোর রাবাত শহর থেকে ভলুবিলিসে যাব। গাড়িতে যেতে লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। হোটেলেই সকালের নাশতা করে রওনা দিলাম। মরক্কোর মহাসড়ক বেশ প্রশস্ত ও পরিষ্কার। কাসাব্লাঙ্কা থেকে রাবাতে আসার সময় জোরে গাড়ি চালানোর দায়ে জরিমানা গুনেছি। তাই এবার গতিসীমা দেখছি বারবার। রাবাত থেকে মেকনেস শহর পর্যন্ত মহাসড়ক। এরপর জাতীয় সড়ক। একটু আঁকাবাঁকা, তাই সাবধানে চালাতে হয়। সতর্ক দৃষ্টি রেখেই পৌঁছে গেলাম ভলুবিলিসে।
কাউন্টারে আরবি ভাষায় টিকিট চাইব, বেশ কয়েকবার অনুশীলন করেছি। সেটা কাজে দিল মনে হলো। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। স্থানীয় লোকজন এখানে গাইড হিসেবে কাজ করেন। এমনই একজন এসে আমাদের গাইড হতে চাইলেন। আমরাও সানন্দে রাজি হয়ে তাঁকে অনুসরণ করে হাঁটা শুরু করলাম।
উত্তর আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর একটি এই ভলুবিলিস। ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে। শহরটি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে মরক্কোর আদিবাসী বারবার সম্প্রদায়ের বসতি হিসেবে বিকশিত হয়। রোমানদের আওতায় আসার পর এটি রোমান সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল হয়ে ওঠে। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে এটি রোমান মৌরিতানিয়া অঞ্চলের রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মানুষজনের জীবনযাত্রা তখন কেমন ছিল, তা এখানকার ঘরবাড়ি, বাজারের ধ্বংসাবশেষ দেখে অনুমান করা যায়।
একটি বাড়িতে রোমান মোজাইকের অংশবিশেষ টিকে আছে। দেখে বোঝা যায়, এটি অবস্থাপন্ন কোনো মানুষের বাড়ি। হাঁটতে হাঁটতে আমরা ডেকুম্যানাস ম্যাক্সিমাস বা পূর্ব-পশ্চিমমুখী সড়কে উঠে এলাম। এটি এ শহরের মূল সড়ক। এ সড়কের নিচ দিয়ে অ্যাকুডাক্ট (রোমানদের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা) চলে গেছে শহরের বিভিন্ন স্থানে। এখানে একটি সর্বজনীন গোসলখানা চোখে পড়ল। প্রাচীনকালের এই গোসলখানায় ঠান্ডা আর গরম পানির ব্যবস্থা ছিল। রাস্তার দিকে সোজা তাকালে চোখে পড়ে ট্রায়াম্ফাল আর্চ বা বিজয়তোরণ। এত বছর আগে তৈরি এই রাস্তা এখনো টিকে আছে। হেঁটে সামনে গেলাম। ট্রায়াম্ফাল আর্চের ওপরে রোমান ভাষায় কী যেন লেখা। গাইড জানালেন, রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস আন্তোনিনাসকে এটি উৎসর্গ করা হয়েছিল। তারই বর্ণনা লেখা। আরও কিছু বাড়িতে আরও কিছু রোমান মোজাইক দেখলাম, যা এত বছর ধরে এখনো টিকে আছে। এরপর পাশাপাশি চোখে পড়ল ক্যাপিটোলিন মন্দির আর বাসিলিকা। এগুলো কিছুটা পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
অষ্টম শতাব্দীতে আরবরা এ শহরের নাম বদলে রাখে ওয়ালিলি। ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ ছিলেন ইদ্রিসি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং মরক্কোর প্রথম মুসলিম শাসক। তিনি ৭৮৮ থেকে ৭৯১ সাল পর্যন্ত শাসন করেছেন। ১১ শতাব্দীতে এটি পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হয়।
শহর থেকে ফিরে যাওয়ার পথে বেশ কিছু জলপাইগাছ চোখে পড়ল। দু–একটা জলপাই খেয়ে দেখলাম। দেশে আমরা যে ধরনের জলপাই খাই, এগুলো সে রকম নয়। আমাদের জলপাই খাওয়া দেখে গাইড কোথা থেকে যেন জলপাইয়ের ভর্তা নিয়ে এলেন। এ ভর্তা আমাদের দেশের ভর্তার মতো নয়, খেতে বেশ মজা। গাইডকে বিদায় দিয়ে রওনা দিলাম ১৫ মিনিট দূরে অবস্থিত শহরমূলে ইদ্রিস জেরহাউনে।