যেভাবে এক টিকিটে দুই দেশ ভ্রমণ করে এলাম
১৬ দিনের সফরে দলবল নিয়ে শ্রীলঙ্কা আর মালদ্বীপ। সাশ্রয়ী খরচে দুটি দেশে কীভাবে ভ্রমণ করলেন, সেই ফিরিস্তি দিলেন শাহাদাত হোসেন
ভারত, নেপাল, ভুটান আগেই ভ্রমণ করেছি। নতুন দেশ হিসেবে অনেক দিন ধরেই মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা যাওয়ার ইচ্ছা। পরিকল্পনা করতে গিয়ে জানতে পারলাম, একই এয়ারলাইনসের প্যাকেজে দুটি দেশ ভ্রমণ করা যায়। এতে আলাদা করে দেশ দুটিতে যেতে যে যাতায়াত খরচ লাগত, তা অর্ধেকে নেমে আসে। দূর দেশ ভ্রমণের অন্যতম প্রধান খরচ বিমানভাড়া, সেটাই অর্ধেকে নেমে এলে আর কী লাগে!
পরিকল্পনা পাকা করে ছয়জন ভ্রমণসঙ্গী জুটিয়ে নিলাম। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ৫৪ হাজার টাকায় শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের ইকোনমি ক্লাসের টিকিট বুকিং দিলাম। মনে মনে ভাবি, আহা শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে আলাদাভাবে যেতে যাতায়াতেই তো চলে যেত লাখ টাকার বেশি!
মালদ্বীপে চার দিন
১৪ নভেম্বর ঢাকা থেকে বিমানে উড়াল দিই। এর আগে বিমানবন্দরে বেশ ধকল পোহাতে হয়। কলম্বো বিমানবন্দরে নেমে সেই ধকল কেটে যায়। বিমানের টিকিট বুকিংয়ের সময় আমরা গন্তব্য ঠিক করে দিয়েছি। আগে মালদ্বীপ। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা।
তাই কলম্বোয় আড়াই ঘণ্টার ট্রানজিট নিতে হলো। ঢাকা থেকে এয়ারবাসে এসে কলম্বো থেকে উঠতে হলো অপেক্ষাকৃত ছোট উড়োজাহাজে। তারপরও আমাদের সবার মুখে স্বস্তি। কারণ, এয়ারবাসের পেছন দিকে বসায় প্রচুর শব্দ হচ্ছিল।
মালদ্বীপের মালেতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। মালদ্বীপে অন অ্যারাইভাল ভিসা, মানে বিমানবন্দরে পৌঁছে ভিসা নিতে হয়। ইমিগ্রেশন করার আগে দুটি পেপার দেখতে চায়। একটি রিটার্ন এয়ার টিকিট, অন্যটি হোটেলে বুকিংয়ের তথ্য। সহজেই এই পর্ব সম্পন্ন হলো।
রাতের অন্ধকারে পৌঁছানোয় দ্বীপে ভেসে থাকা জনপদ না দেখার আক্ষেপ ছিল, চার দিন ঘুরে বেড়িয়ে সেই আক্ষেপ ঘুচল। শুরুতে আমরা মালে শহরের গাঘেঁষা সাদা বালুর সৈকতপাড়ের হনুমালে ছিলাম। অপেক্ষাকৃত সুলভ মূল্যের হোটেল খুঁজেই উঠেছিলাম। থাকার জায়গা নিয়ে আক্ষেপ নেই। আরেক রাত কাটিয়েছি মাফুশি দ্বীপে। এই রাতটি জীবনের সেরা মুহূর্ত। স্বচ্ছ পানির নিচের জগৎ দেখে নেশায় পড়ে যাই।
মালদ্বীপে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। থাকা, খাওয়া, ঘোরা, রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বা শপিং—যেখানেই গেছি বাংলাদেশি পেয়েছি। তাই সেবা পেতে ও দরদাম করে কেনাকাটা করতে সমস্যা হয়নি। বাংলা খাবার খেতেও প্রবাসীদের সহযোগিতা নিয়েছিলাম।
এই ফাঁকে কিছু তথ্য দিয়ে রাখি। বাংলাদেশি খাবার ৩০০ টাকাতেও আপনি পাবেন। রেস্তোরাঁ ও খাবারের মান যত বাড়াবেন, খরচও তত বাড়বে। অনলাইনে হোটেল বুক না করে সরাসরি এসে হোটেল নিলে পাঁচ হাজার টাকাতেও রুম পেয়ে যাবেন। তবে এতে কিছু ঝুঁকি থেকে যায়। আর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে, এ সময় সবকিছুর দামও চড়া থাকে। ৩০ থেকে ১৫০ ডলারে ওয়াটার অ্যাকটিভিটি করতে পারবেন। প্রাইভেট আইল্যান্ডে থাকতে চাইলে খরচ ১২৫ থেকে ৭০ হাজার ডলার পর্যন্ত!
রাবণের দেশে ১২ দিন
মালদ্বীপ ভ্রমণ শেষে আমরা যাই শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার ভিসার ক্ষেত্রেও প্রায় একই নিয়ম। বিমানবন্দরে ইলেকট্রনিক ভিসা নিতে খরচ ২৫ ডলার।
রাজধানী কলম্বোতে হলেও বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিগম্বোয়। আমরা বিমানবন্দরের পাশে একটা হোটেলে গিয়ে প্রথম দিন উঠি। এই নিগম্বো থেকেই শুরু হয় শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ। নির্মল প্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে দেশটা সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব দেখে নিজেদের দেশের পর্যটনের দুরবস্থার কথা ভাবি। যাতায়াতব্যবস্থা ও পর্যটকবান্ধব সেবা শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
শ্রীলঙ্কায় আমরা ১২ দিন ছিলাম। ঘুরে দেখেছি ক্যান্ডি, নুয়ারা এলিয়া, এল্লা, মিরিসা, গল, কলম্বো, সিগিরিয়া, মান্নার ও জাফনা। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে মালদ্বীপের তুলনায় খরচ অনেক কম। ১২ দিনে জনপ্রতি মাত্র ২৮০ ডলার খরচ হয়েছে, যেখানে মালদ্বীপে ৪ দিনের খরচ হয়েছিল ২০০ ডলার।
এই দেশের সবকিছুই ভালো, খালি খাবার খেতে বিপত্তি। যেখানেই যাই, যা কিছুই খাই, সব নারিকেল তেলে রান্না। নারিকেল তেল ভালো হলেও অনভ্যস্ত হওয়ায় স্থানীয় খাবার খেতে কষ্ট হয়েছে। নিজেরাই প্রায় সময় রান্না করে খেয়েছি। যাতায়াতের জন্য রিজার্ভ গাড়ি নিয়েছিলাম। একা হলে গণপরিবহন ও ট্রেন ব্যবহার করে সারা শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করতে পারবেন।
এক টিকিটে দুই দেশ ভ্রমণের গুমর তো ফাঁস করেই দিলাম। এবার নিজেই করুন পরিকল্পনা।