রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। ভোরের আকাশও গোমড়া। রুম থেকে বেরিয়ে রিসোর্ট-লাগোয়া পাহাড়ের সামনে দাঁড়াই। পাহাড়ের নিচেই ঝিরি। ঝিরি ও পাহাড় দর্শনের জন্য বাঁশঝাড়ের পাশে ছোট একটা মাচাং। সেখানে দাঁড়াতেই মনে ভয় ধরে যায়। গত সন্ধ্যায় ঝিরিতে পানি বইছিল ঝিরিঝিরি। রাতারাতি যৌবনে পা দিয়েছে সেই জলধারা। মনে হচ্ছিল, এখনই বুঝি চারপাশ ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢল।
ঝিরির সামনেটা ঘুরে রিসোর্টের সামনের রাস্তায় নেমে পড়ি। শ্রীমঙ্গলের এই গ্রামের নাম রাধানগর। চারপাশে ছোট ছোট টিলা। উপজেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের রাধানগর একসময় ছিল অজপাড়া। পর্যটনের সুবাদে এখন সারা দেশে পরিচিত। এ গ্রামেই গড়ে উঠেছে পাঁচতারকা মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান। গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ে একাধিক রিসোর্ট, হোটেল, ইকো-কটেজ। এ নিয়ে দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন পড়েছিলাম, মোট ২৫টি হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে এই গ্রামে। শ্রীমঙ্গল ঘুরতে আসা পর্যটকদের একটা বড় অংশ থাকার জন্য রাধানগরকেই বেছে নেয়।
মৌলভীবাজারের আরেক উপজেলা কমলগঞ্জ থেকে আসা পিচঢালা রাস্তাটা গ্রামের ভেতর দিয়ে গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের সামনের মূল সড়কে মিশেছে। সাতসকালে আমরা সে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করি। কেবল ঘুম থেকে উঠতে শুরু করেছে মানুষ। তবে দৃষ্টি কাড়লেন ঠেলাওয়ালারা। হরেক পণ্য নিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরে যাচ্ছেন তাঁরা। কারও ঠেলায় কলা, কারও আনারস। কেউ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কাঁঠাল। রাধানগরে ছোটখাটো একটা বাজার আছে। ঠেলাওয়ালাদের কেউ কেউ সেখানেও থেমেছেন। তাঁদেরই একজন মো. ফরিদ। ভোরের আলো ফোটার আগেই কমলগঞ্জের এক গ্রাম থেকে শ্রীমঙ্গলের পথ ধরেছেন তিনি। সকালে পৌঁছেছেন রাধানগর। শহর তখনো চার কিলোমিটারের পথ। চা-বিড়ির বিরতি শেষে সে পথেই হাঁটা ধরেন ফরিদ। আমরাও তাঁদের পথ ধরে সামনে এগোই।
পথেই একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিই। বাংলাদেশের কয়েকটি সুন্দর রাস্তার মধ্যে আমার তালিকায় শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানঘেরা রাস্তাটাও আছে। বৃষ্টির পর চারপাশটা একেবারে সবুজ হয়ে আছে। লাউয়াছড়া অরণ্যের রাস্তা ধরে কমলগঞ্জের ভেতরের কয়েকটা চা-বাগানে চক্কর দিই। এরপর ফিরে আসি রিসোর্টে। রুমে ঢুকতেই আবারও বৃষ্টি শুরু।
নাশতা করে সকালের ট্রেনে ঢাকায় ফেরার কথা। কিন্তু ঝুম বৃষ্টিতে না ভিজে ঢাকায় ফেরাটা ঠিক মেনে নিতে পারলাম না! তাই দৌড় দিলাম রিসোর্টের সবুজ আঙিনায়।
‘চৌষট্টি চক্কর’ নামে দেশ ঘোরার যে ভ্রমণযাত্রা আমরা শুরু করেছি, তারই পঞ্চম চক্কর শ্রীমঙ্গল। বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দে যাত্রাটা পূর্ণতা পেল। নাশতা শেষে ভেজা কাপড় ব্যাগে ভরে চলে এলাম বাসস্ট্যান্ডে। বাসে উঠেই ঘুম। মাঝে ঘুম ভেঙেছে দু-একবার। শেষবার ঘুম ভাঙলে দেখি আবারও সেই ঢাকা!
জেনে নিন
ঢাকা থেকে ট্রেন ও বাসে যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল শহরে। সকাল, দুপুর ও রাতে ঢাকা থেকে চারটি আন্তনগর ট্রেন শ্রীমঙ্গল স্টেশন হয়ে সিলেটে যায়। দেশের বিভিন্ন রোডে ট্রেনের টিকিটের সংকট থাকলেও এ রোডে নিয়মিত টিকিট মেলে। বাসে যেতে চাইলে মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে সারা দিনই বিভিন্ন পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস পাওয়া যায়। হোটেল কিংবা রিসোর্টের রুম আগে থেকে নিশ্চিত করে যাওয়া ভালো।