বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন এই ৭টি জায়গা

বর্ষায় প্রতিটি জলপ্রপাত প্রাণ ফিরে পায়
ছবি: আসিফ নিনাদ

জলপ্রপাত

বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজারে আছে ছোট-বড় অনেক জলপ্রপাত। নাফাখুম, ধুপপানি, জাদিপাই, হামহাম—বাহারি নামের মতো রূপেও জলপ্রপাতগুলো অনন্য। গহিন পাহাড়ের এই জলপ্রপাতগুলো দেখতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পিছপা হচ্ছেন না রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা।

বর্ষায় প্রতিটি জলপ্রপাত প্রাণ ফিরে পায়, বিপুল জলপতনের আনন্দে হয়ে ওঠে উচ্ছল। এই বর্ষায় কোনো জলপ্রপাত দর্শনের পরিকল্পনা আপনিও করতে পারেন। শীতল হতে যেতে পারেন পাহাড়ের মাথা থেকে গড়িয়ে পড়া জলধারার নিচে। তবে একটা কথা মনে করিয়ে দিই, বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় নিরাপত্তাজনিত কারণে ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা এখনো জারি আছে। এই তিন উপজেলায় বেশ কিছু বুনো জলপ্রপাত থাকলেও আপাতত সেসব ভ্রমণতালিকা থেকে বাদ রাখতেই হবে।

আরও পড়ুন
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে ভিন্ন মাত্র যোগ করেছে বিলাসবহুল হাউসবোট
ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গুয়ার হাওর

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধরমপাশা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অনেক নদী, খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। জলের ওপর মাথা তুলে ভেসে থাকে শুধু হিজল-করচগাছ। তখন দেখা যায় পাখির ওড়াউড়ি, অনতিদূরে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়। হাওর ও মেঘ-পাহাড়ের এমন রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবছর বর্ষায় হাজারো পর্যটক ঘুরতে যান টাঙ্গুয়া। এবার বর্ষার ভ্রমণ পরিকল্পনায় আপনিও রাখতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর।

টাঙ্গুয়ার হাওরে কয়েকটি পথ দিয়ে প্রবেশ করা যায়। তবে সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি ঘাট ও তাহিরপুর উপজেলার নামাবাজার ঘাট পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই দুই ঘাটে বিলাসবহুল হাউসবোটসহ ঐতিহ্যবাহী নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। হাওর ভ্রমণ আরামদায়ক করতে সেখানে যাওয়ার আগেই নৌকা ভাড়ার কাজটি সেরে ফেলতে হবে। নৌকার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে আপনি পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন
বর্ষায় চা-বাগানের আশপাশে আবাসনের ব্যবস্থা করে কাটিয়ে দিতে পারেন দিন-দুই
ফাইল ছবি

শ্রীমঙ্গল

প্রকৃতির সান্নিধ্যে বর্ষা-যাপনের অন্যতম গন্তব্য হতে পারে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। এখানে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট যেমন আছে, তেমনি মোটামুটি বাজেটে পাবেন ইকো-রিসোর্টের আবাসন সুবিধাও।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত। বর্ষায় এই চা–বাগানগুলো হয়ে ওঠে সবুজ গালিচা। চা-বাগানের আশপাশে আবাসনের ব্যবস্থা করে কাটিয়ে দিতে পারেন দিন-দুই। রিসোর্টের রুমে মন না টিকলে ঘুরেও বেড়াতে পারেন। নিজস্ব বাহন বা সিএনজি অটোরিকশায় চক্কর দিতে পারেন কোনো চা-বাগানে, ঐতিহ্যের স্মারক চা জাদুঘরে, শ্রীমঙ্গলের পেটের মধ্যে থাকা প্রতিবেশী কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে।

সাজেকের মেঘ বর্ষায় ধরা দেয় সমুদ্রের রূপে
ছবি: আদনান জুবাইদ

সাজেক

বর্ষায় পাহাড়ি প্রকৃতি সবুজ হয়ে ওঠে। পাহাড়ের সবুজে ডানা মেলে সাদা-কালো মেঘ। সবুজের বেষ্টনীতে কেবলই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা! ভোরে বৃষ্টি হলে মেঘ ঢুকে পড়ে শোবার ঘর পর্যন্ত। সাজেকের মেঘ কখনো ধরা দেয় সমুদ্রের রূপে। সবুজ উপত্যকা, অপার্থিব সূর্যোদয়, জোছনায় ছড়িয়ে পড়া মেঘের দল, আকাশের মেঘের অনেক রং মিলিয়ে সাজেক যেন অন্য এক জনপদ। এক জাদুকরি প্রকৃতির রহস্যঘেরা উপত্যকা। সারা দেশে পর্যটকদের পছন্দের নামও সাজেক। পাহাড়ি এই উপত্যকা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায়। যাতায়াত করতে হয় খাগড়াছড়ি শহর হয়ে। বর্ষায় সাজেকের শোভা দেখার পরিকল্পনা আঁটতেই পারেন।

আরও পড়ুন
বর্ষার সময় ভাসমান পেয়ারা বাজারে পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে যায়
ছবি: মো. সাইয়ান

ভাসমান পেয়ারা বাজার

কোনোটা সরু, কোনোটা বেশ প্রশস্ত। এই খালগুলো দূরে সন্ধ্যা নদীতে গিয়ে মিশেছে। এসব খালের কোথাও বসতি, কোথাও বৃক্ষবাগান, কোথাও আবার বিঘার পর বিঘা পেয়ারাবাগান। জলমগ্ন এলাকাটা ভিন্ন রূপে ধরা দেয় বর্ষা মৌসুমে।

বর্ষার সময় পর্যটকের আনাগোনাও বেড়ে যায়। খাল বেয়ে ট্রলার আর ডিঙিনৌকায় পর্যটকেরা এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়ান। কখনো আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারাবাগান ঘুরে তাঁরা এগিয়ে যান ভীমরুলির ভাসমান বাজারে। অনেকে আবার বিপরীত পথেও আসেন। আশপাশের এলাকার বাগান থেকে তুলে আনা পেয়ারা বিক্রি হয় ভীমরুলি বাজারে।

পেয়ারাবাগান আর ভাসমান হাটের কারণেই পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির ভীমরুলি আর পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা। বর্ষায় এক দিনের ভ্রমণে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।

বর্ষার অবারিত জলে নৌকায় ভাসতে চলনবিল রাখতে পারেন ভ্রমণতালিকায়
ছবি: হাসান মাহমুদ

চলনবিল

ভরা বর্ষায় চলনবিল হয়ে ওঠে জল-থইথই। চলনবিল শুধু একটি বিল নয়, অনেক বিল, খাল ও নদী নিয়ে গড়ে ওঠা জলাভূমি। বিলটি বিস্তৃত নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ৬০০টি গ্রাম নিয়ে। বর্ষার অবারিত জলে নৌকায় ভাসতে চলনবিল রাখতে পারেন ভ্রমণতালিকায়।

চলনবিলে ঘুরতে সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের কাছিকাটা অথবা পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর। সবখানেই বাসযোগে যাওয়া যাবে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে চাটমোহর অথবা ভাঙ্গুড়ার বড়াল ব্রিজ স্টেশনে নেমে ভাড়ার নৌকায়ও চলনবিল ঘোরা যাবে।

সমুদ্রের ঘোলা জলের জোরালো ডাক যাদের আন্দোলিত করে, তাঁরা ভরা বর্ষায় ঠিকই ছুটে যান সৈকতের পাড়ে
ছবি: নুসরাত জাহানের সৌজন্যে

সমুদ্র

বর্ষা মৌসুমের আগমনী সুর বাজার আগে থেকেই কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের আনাগোনা কমতে থাকে। বৃষ্টিবাদলের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ সমুদ্রবিলাসে তেমন একটা আগ্রহী হয় না। তাই দুটি এলাকাতেই লোকসমাগম থাকে কম। পর্যটনের ভাষায় এই সময়টাকে বলা হয় ‘অফ সিজন’। সেই সময়টায় পর্যটক টানতে হোটেল-রিসোর্টগুলো ছাড়ও দিয়ে থাকে।

তবে বৃষ্টিবহুল বর্ষা যাদের প্রিয়, সমুদ্রের ঘোলা জলের জোরালো ডাক যাদের আন্দোলিত করে, তাঁরা ঠিকই ছুটে যান সৈকতের পাড়ে। যথেষ্ট ছাড়ে থাকা-খাওয়ার সুবিধার সঙ্গে তাঁরা পেয়ে যান কোলাহলহীন সৈকতের নির্জন রূপ।