কক্সবাজার থেকে হেঁটে ১২ দিনে ঢাকায়, ৯০ দিনে যেতে চান এভারেস্টচূড়ায়

কক্সবাজার থেকে হেঁটে হেঁটে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে ১২ দিন পর ঢাকায় পৌঁছেছেন ইকরামুল হাসান শাকিলছবি: সংগৃহীত

১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণের পরিকল্পনা করেন। তাঁর একক অভিযানটির নাম দেন ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’। অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হেঁটে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছানোর প্রয়াস। টিম করেছিলেনও তা–ই, ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে।

৩৫ বছর আগের ম্যাকার্টনির সেই কৃতিত্ব বেশ অনুপ্রাণিত করেছে বাংলাদেশের পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিলকে। এই তরুণও তাঁর অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘সি টু সামিট’। দেশের জনপ্রিয় পর্যটনস্থান কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে শাকিল হেঁটে জয় করতে চান এভারেস্ট শৃঙ্গ। সেই লক্ষ্য নিয়েই গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে হাঁটা শুরু করেছেন।

এভাবে হেঁটে হেঁটেই অভিযান সম্পন্ন করতে চান ইকরামুল হাসান শাকিল
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার থেকে হেঁটে হেঁটে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে ১২ দিন পর ঢাকায় পৌঁছেছেন শাকিল। এভাবে ৯০ দিনে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাঁর অভিযান সমাপ্ত করার পরিকল্পনা।

বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের এই ‘সি টু সামিট’ অভিযানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ‘প্রাণ’। সহযোগী হিসেবে আছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), মিস্টার নুডলস, মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল ও সিস্টেমা টুথব্রাশ। ইকরামুল হাসানের অভিযানের এসব খুঁটিনাটি সবিস্তার জানাতেই আজ ৯ মার্চ সকালে রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের (বিএমটিসি) প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, ‘শৃঙ্গজয়ে শাকিলের যে সামর্থ্য আছে, আমরা তাঁর গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল অভিযান দেখেই বুঝেছিলাম। তবে পাহাড়ের সাফল্য নিজের সক্ষমতা ছাড়া আরও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। ভালো আবহাওয়া তার মধ্যে অন্যতম। তাই শাকিল যত দক্ষই হোক না কেন, শিখর জয় নিশ্চিত নয়।’

পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে একজন তরুণ পর্বতারোহীর এই উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পেরে প্রাণ গর্বিত। আশা করি, শাকিল বাংলাদেশের পতাকা পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে ওড়াবেন।’

ইকরামুল হাসানের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেন অতিথিরা
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

ইকরামুল হাসানের সংকল্পের প্রশংসা করেন এভারেস্টজয়ী এম এ মুহিত। তিনি বলেন, ‘শাকিলের দক্ষতা ও সক্ষমতা আছে। আবহাওয়া ও শরীর সুস্থ থাকলে ওর সফলতায় বাধা দেখি না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইউএনডিপির হেড অব কমিউনিকেশনস মো. আব্দুল কাইয়ুম, লায়ন কল্লোল লিমিটেডের বিপণন পরিচালক তন্ময় দত্তগুপ্ত ও মিস্টার নুডলসের মহাব্যবস্থাপক তোষণ পাল। এরপর শাকিলের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেন অতিথিরা।

শাকিল সম্প্রতি প্লাস্টিক–দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় টেকসই সমাধান প্রচারের জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ইয়ুথ অ্যাডভোকেট হয়েছেন। এভারেস্টচূড়ায় আরোহণের এ অভিযানে পথে যেতে যেতে পরিবেশসচেতনতার বার্তাও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যে আছে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জন এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা। ৯০ দিনের অভিযানে শাকিল বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে নেপালের এভারেস্ট বেজক্যাম্পে পৌঁছাতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দেবেন। রোমাঞ্চকর অভিযানটি সম্পন্ন হলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হাতছানিও আছে।

হিমালয়ে ইকরামুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

শাকিল অভিযানের শুরুর ১২ দিনে হেঁটেছেন ৪৪০ কিলোমিটার পথ। এই যাত্রা সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে কোথায় থাকব, কী খাব, এসব আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। রাস্তায় চলার পথে যা পাচ্ছি, খেয়ে নিচ্ছি। সঙ্গে শুধু পানি, খেজুর আর কিছু চকলেট রেখেছি। রাতে থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে পরিচিত কারও বাসায় বা সরকারি কোনো ডাকবাংলোয়।’

বিশ্রাম ও আনুষঙ্গিক কিছু দরকারি কাজ শেষে ১২ মার্চ থেকে শাকিল আবার হাঁটা শুরু করবেন। এরপর টাঙ্গাইল, বগুড়া, পঞ্চগড় হয়ে ভারতে প্রবেশ করার পরিকল্পনা। তবে ভারতের ভিসা জটিলতা এখনো কাটেনি। অভিযানের সম্পূর্ণ খরচও জোগাড় করতে পারেননি। এ বিষয়ে শাকিল বলেন, ‘এটি ব্যয়বহুল অভিযান। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে যা সহযোগিতা পেয়েছি, তা পর্যাপ্ত নয়। আরও ২০ লাখ টাকা লাগবে। বিভিন্নভাবে বাকি টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছি।’

আরও পড়ুন