রাশিয়ার মসজিদে ইফতারে যা খেলাম

রাশিয়ার দাগেস্তানের কালচারাল ও এডুকেশন সেন্টারের মসজিদে ইফতারছবি: হাসান ইমাম

সারা দিন রাশিয়ার ‘কালচারাল সিটি’ হিসেবে পরিচিত সেন্ট পিটার্সবাগের নানা দর্শনীয় জায়গা ঘুরে বেড়ালাম। সন্ধ্যার আগে দুই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এলেন আমাকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে।

রাজশাহীর ছেলে আরাফাত রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিফাত হোটেলে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন ‘দাগেস্তান’ নামের এক এলাকায়। মেট্রোতে যেতে যেতেই তাঁরা জানালেন, যেহেতু ইফতারের বেশি দেরি নেই, তাই আমরা যাচ্ছি দাগেস্তানের কালচারাল ও এডুকেশন সেন্টারের মসজিদে।

পবিত্র রমজান উপলক্ষে আলোকসজ্জা
ছবি: হাসান ইমাম

শুনে ভালো লাগল; কারণ, সেখানে নানা দেশের মুসলিমরা আসেন ইফতারে। আর ভিনদেশের ইফতার নিয়েও আমার একটা কৌতূহল আছে।

মেট্রো থেকে নেমে দ্রুতপায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম নেভা নদীর একটা ছোট্ট শাখার পাড় ধরে। নদী বলছি বটে, তবে টলমল জল সেখানে নেই। শীতে নদীর পানি জমে বরফ হয়ে আছে। মসজিদের ভেতর যখন ঢুকলাম, ইফতারের বাকি মিনিট দুই। দ্রুত জুতা আর জ্যাকেট ঝুলিয়ে রেখে বসে গেলাম রোজাদারদের কাতারে। মুখোমুখি সারিতে বসা প্রায় ৩০০ জন বসে আছেন। প্রতি দুজন পরপর একটা বাটিতে করে দেওয়া হয়েছে শুকনা খেজুর ও পানির বোতল। দেখে ভাবলাম, শুধু এ-ই!

নানা দেশের মানুষ এসেছেন ইফতারে
ছবি: হাসান ইমাম

আস্বস্ত করলেন আরাফাত, ‘ভাই, এখানে শুরুতে খেজুর দিয়ে রোজা ভেঙে সবাই নামাজ পড়ে। তারপর ইফতারি খেতে বসে।’

শুনে একটু স্বস্তি পেলাম। খাচ্ছি আর চারপাশের মুখগুলো দেখছি। বোঝার চেষ্টা করছি, কে কোন দেশ থেকে এসেছেন।

শিশু–কিশোরদেরও দেখা গেল
ছবি: হাসান ইমাম

পাশে বসা এক তরুণ জানালেন, ভারতের কলকাতা থেকে এখানে পড়তে এসেছেন। রোজার সময় এই মসজিদে এসে ইফতার করেন নিয়মিত। সামনে বসা দুই মধ্যবয়সী লোক জানালেন, তাঁদের বাড়ি তাজিকিস্তান। এখানে ব্যবসা করেন। তুরস্কের সালমান পড়াশোনা শেষ করে এই শহরেই কিছু একটা করার চেষ্টায় আছেন।

রাশিয়া পড়তে আসা নানা দেশের তরুণেরাও শামিল হয়েছে ইফতারে
ছবি: হাসান ইমাম

নামাজ শেষে ইফতারের দ্বিতীয় পর্বের পরিবেশনা শুরু হলো এক প্লেট করে ফল দিয়ে। এর মধ্যে ছিল নাশপাতি, আপেল, মাল্টা, কমলা, কলা ইত্যাদি।

ইফতারের দ্বিতীয় পর্বের পরিবেশনা শুরু হলো এক প্লেট করে ফল দিয়ে
ছবি: হাসান ইমাম

এরপর বড় একটা কর (তিল ছড়ানো) ব্রেড আর এক প্লেট করে সালাদ এল সামনে।

তিল ছড়ানো ব্রেড
ছবি: হাসান ইমাম

শসা, টমেটো, বেলপেপার আর ধনেপাতা কুচি করে বানানো হয়েছে সালাদ। এরপর দিল জুস।

শসা, টমেটো, বেলপেপার আর ধনেপাতা কুচি করে বানানো হয়েছে সালাদ
ছবি: হাসান ইমাম

বোতলজাত কয়েকটি ফলের রস দিয়ে তৈরি এই জুস দিয়ে গলা ভেজাতে না ভেজাতেই সামনে এল প্লভ।

বোতলজাত ফলের রস
ছবি: হাসান ইমাম

তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুরস্কের ঘরে ঘরে এই প্লভের প্রচলন। মোটা চালের ভাতের সঙ্গে মেশানো নানা রকম বাদাম, কিশমিশ, বেলপেপার ছাড়াও যার মূল আকর্ষণ ভেড়ার মাংস। গরম–গরম এই প্লভ খেতে অনেকটা বিরিয়ানির মতো। তবে স্বাদ মিষ্টি মিষ্টি। অনেক তাজিকিস্তানিকে দেখলাম রুটি আর প্লভ একসঙ্গে খেতে। ভারী এই খাবারের পর এল মিষ্টিমুখের থালি।

তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুরস্কের ঘরে ঘরে এই প্লভের প্রচলন
ছবি: হাসান ইমাম
মোটা চালের ভাতের সঙ্গে মেশানো নানা রকম বাদাম, কিশমিশ, বেলপেপার ছাড়াও যার মূল আকর্ষণ ভেড়ার মাংস

কয়েক রকম চকলেট আর পুরভরা বেকিং আইটেম দিয়ে সাজানো সেসব প্লেট। এখানেই শেষ নয়, শেষ হলো চা পর্বের মাধ্যমে।

কয়েক রকম চকলেট আর পুরভরা বেকিং আইটেম দিয়ে সাজানো প্লে
ছবি: হাসান ইমাম

বড় বড় কেটলিতে এল মসলাদার লাল চা ও গ্রিন টি। চা পরিবেশন শুরু হলে আমরা উঠে পড়লাম পরের গন্তব্যের জন্য।

বড় বড় কেটলিতে এল মসলাদার লাল চা ও গ্রিন টি
ছবি: হাসান ইমাম
আরও পড়ুন