জেনে নিন ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কারের নিয়ম

সময় ও শ্রম বাঁচাতে ওয়াশিং মেশিনের মতো যন্ত্র অনেকেই ব্যবহার করছেন। মডেল : আফরোজা নাজনীন
ছবি: খালেদ সরকার

দিনের পর দিন আমাদের নোংরা পোশাক পরিষ্কার করে যে যন্ত্র, সেটিও পরিষ্কার করা প্রয়োজন। প্রতি মাসে একবার করে ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কার করুন। এতে মেশিনে দুর্গন্ধ হবে না। ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেডের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার জুলহক হোসাইন এবং অন্যান্য সূত্র থেকে পরিষ্কার করার নিয়মগুলো চলুন জেনে নিই।

ড্রাম

ওয়াশিং মেশিনের ভেতরের যে টাব বা ড্রাম থাকে, সেখানে কাপড়ের ময়লা বা সুতা জমে যায়। ড্রাম নিয়মিত পরিষ্কার না করলে জমে থাকা কাপড়ের ময়লা ধুতে দেওয়া কাপড়ে লেগে যায়। যেসব মেশিনে টুইন ওয়াশ সুবিধা আছে, সেসবে এ ময়লা পরিষ্কারের জন্য তেমন একটা বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যেসব মেশিনে এসব ফিচার থাকে না, সেখানে ড্রামের গায়ে ময়লা ও সুতা লেগে থাকে।

ফ্রন্ট লোডিং এবং টপ লোডিং ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কারের উপকরণগুলো এক, পদ্ধতি ভিন্ন। উপকরণগুলো হলো স্প্রে বোতল, সাদা ভিনেগার, বেকিং সোডা, মাইক্রোফাইবার পরিষ্কার করার একটি কাপড় এবং পুরোনো টুথব্রাশ। দুই ধরনের ওয়াশিং মেশিনেরই নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ড্রেন পরিষ্কার করার আগে ওয়াশিং মেশিন বন্ধ করে নিন। তারপর সাবধানে পাইপ থেকে ড্রেনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অতিরিক্ত পানি বের করার জন্য ড্রেনটি একটি খালি টবে বা বেসিনে রাখুন। এবার ড্রেনটি ভিনেগারে ভিজিয়ে রাখুন, এতে ছত্রাক থাকলে চলে যাবে। চাইলে কিছুটা বেকিং সোডা আর পুরোনো টুথব্রাশ দিয়েও ঘষতে পারেন। এরপর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।

এবার ড্রাম। স্প্রে বোতলে সাদা ভিনেগার নিয়ে ড্রামের ভেতরে ছিটান। মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে ওয়াশার ড্রামের চারপাশটি মুছে ফেলুন। এরপর দরজার চারপাশে সিল হিসেবে ব্যবহৃত রাবার গ্যাসকেটটি মুছে ফেলুন। ফ্রন্ট লোডার নিয়মিত পরিষ্কার করার জন্য সাদা মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করুন। ডিশ সাবানের সঙ্গে ব্লিচ মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণে কাপড়টি ভিজিয়ে নিয়ে রাবার সিলের চারপাশ পরিষ্কার করে ফেলুন। ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কার করতে মাঝেমধ্যে কাপড় পরিষ্কারের সর্বোচ্চ পানি আর তাপমাত্রার ফিচার সেট করুন। এক কাপ সাদা ভিনেগার আর পাঁচ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে দিন। এ সময় মেশিনের
ভেতরে কোনো কাপড় বা পোশাক দেবেন না।

তিন মাস পরপর ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিন একদম ভেতর থেকে পরিষ্কার করার জন্য বেছে নিন দুই কাপ ওয়াশিং সোডা এবং দুই কাপ বোরাক্স। ড্রামের ভেতর ছিটিয়ে দিন। এক ঘণ্টা পর সম্পূর্ণ কাপড় ধোয়ার মোড চালান। টপ লোডার ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কারে সর্বোচ্চ এবং উষ্ণতম পানির সেটিং বেছে নিন। চার কাপ সাদা ভিনেগার দিয়ে দিন। প্রথমবার ধোয়ার চক্র শেষ হলে এক কাপ বেকিং সোডা ঢেলে দিন। ধোয়া শেষে শুকানোর জন্য ওপরের অংশটি খোলা রেখে দিন।

 পাউডার ক্যাবিনেট

ডিটারজেন্ট ট্রে বের করে পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে ব্রাশ ব্যবহার করুন। পাউডার ক্যাবিনেট অনেক দিন পরিষ্কার না করলে আঠালো ভাব চলে আসে। ওয়াশিং মেশিনে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত পাউডার এবং তরল পরিষ্কারকই বেছে নিন
সব সময়। সব ডিটারজেন্ট বা পাউডার ওয়াশিং মেশিনে ব্যবহার করা যায় না।

নিয়মিত পরিষ্কার করুন

ওয়াশিং মেশিনে সাধারণভাবে হট ওয়াশ ফিচার থাকে। না থাকলে মাঝেমধ্যে গরম পানি ও লেবুর রস মিশিয়ে মেশিনের ভেতরটি পরিষ্কার করতে পারেন। ভেতরের ড্রামে গন্ধ এবং ছত্রাক থাকলে চলে যাবে।

বৈদ্যুতিক সংযোগে নজর দিন

ওয়াশিং মেশিনে ৮০০ ওয়াট থেকে ১ হাজার ২০০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ–সংযোগ প্রয়োজন হয়। বাড়ির সাধারণ মাল্টিপ্লাগ বা সকেটে ওয়াশিং মেশিন চালাবেন না। এতে শর্টসার্কিট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চেষ্টা করুন মূল লাইন থেকে আলাদা সংযোগ নিয়ে সকেট তৈরি করতে। ব্যবহার শেষে সকেটের বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে রাখবেন।

খেয়াল রাখুন

ওয়াশিং মেশিন একটু উঁচু জায়গাতে রাখতে পারেন। অনেক সময় নিচে পানি জমে যেতে পারে। উন্মুক্ত স্থানে রাখার চেষ্টা করুন। ধোয়া হয়ে গেলে কাপড় বের করে আনুন দ্রুত। যেকোনো সমস্যা বা ত্রুটি দেখলে দ্রুত সার্ভিস সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ওয়াশিং মেশিনের বিভিন্ন সংযোগ ও পাইপে কোনো ছিদ্র আছে কি না, খেয়াল রাখুন। কোনো ফাটল বা ছিদ্র থাকলে দ্রুত ঠিক করতে হবে। প্রতিবার ব্যবহার শেষে কিছুক্ষণ ড্রামের দরজা বা ঢাকনা খুলে রাখুন। এতে ভেতরে গুমোট ভাব তৈরি হবে না।