ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেও ব্যর্থ হওয়ার ৫ কারণ
সারা পৃথিবীতেই কাজের ধরন বদলাচ্ছে, বাড়ছে ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা। অনেক তরুণই এখন ফ্রিল্যান্সার হতে চান। কিন্তু সবাই কি সফল হন? কেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেও অনেকে এগোতে পারেন না? এসব বিষয়েই লিখেছেন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষক ও স্কিলআপারের প্রতিষ্ঠাতা শামীম হুসাইন
১. না বুঝে শুরু করা
‘ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ টাকা আয় করা যায়’—শুনেই অনেকে এই পথে পা বাড়ান। কোনো রকম দক্ষতা ছাড়াই কাজে নেমে পড়েন। একবারও ভাবেন না, যে কাজটা করতে যাচ্ছি, সে বিষয়ে আমার আগ্রহ বা ‘প্যাশন’ আছে কি না। এরপর যখন মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট করেও কাজ পান না, তখন হাল ছেড়ে দেন। বাস্তবতা হলো—একটা কাজে যদি আমার আগ্রহ না থাকে, তাতে যতই লাখ টাকার হাতছানি থাকুক না কেন, আমি খুব বেশি এগোতে পারব না। তাই হুজুগে ঝাঁপিয়ে না পড়ে আগে ভালোমতো খোঁজ নেওয়া দরকার।
২. দক্ষতার অভাব
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে আপনার নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ সব বিষয়েই দক্ষতা অর্জন করতে চান। এটাও ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ। সব বিষয়ে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং দু–একটি দক্ষতা আপনাকে ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে। ধরা যাক আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান; গুগল বা ফেসবুকের বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করতে চান—তাহলে এই চর্চাটাই ভালোভাবে করুন। এই খাতের বিশেষজ্ঞ (এক্সপার্ট) হয়ে উঠতে চেষ্টা করুন। পাশাপাশি কনটেন্ট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), ওয়েব অ্যানালিটিকস, ই–মেইল মার্কেটিং—এসব বিষয়ে জ্ঞান রাখুন। শুধু কাজ পাওয়ার জন্য দক্ষতা দেখাতে চাইলে ক্লায়েন্টের আস্থা হারাতে পারেন।
৩. যথেষ্ট সময় না দেওয়া
ফ্রিল্যান্সিংকে অনেকেই খণ্ডকালীন বা ‘পার্টটাইম’ কাজ মনে করেন। আদতে কিন্তু তা নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা। এখানে সফল হতে হলে আপনাকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। কাজ খোঁজা, ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ, কাজ সম্পন্ন করা—এই সবকিছুর জন্যই অনেক সময় প্রয়োজন। আপনি যদি মনে করেন অল্প সময় দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া সম্ভব, তাহলে ভুল করছেন। ফ্রিল্যান্সিং মানে মুক্ত পেশা খাত, সেটা ঠিক। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই সময়মতো ক্লায়েন্টের কাজ শেষ করতে হবে। সময় নিয়ে হেলাফেলা করলে কখনোই সফল হতে পারবেন না। কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন, প্রতিদিন ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন।
৪. সঠিক মার্কেটিং ও আত্মবিশ্বাসের অভাব
ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ পেতে হলে আপনাকে নিজের ‘মার্কেটিং’ করতে হবে, যাকে আমরা বলি ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কথা ক্লায়েন্টদের জানাতে হবে। নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকতে হবে, বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে (যেমন ফাইবার, আপওয়ার্ক, লেজিট ইত্যাদি) প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। আপনি যদি নিজের মার্কেটিং করতে না পারেন, তাহলে ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হবে। নিজের দক্ষতা ও কাজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলার সময় বা কাজ করার সময় যদি আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, তাহলে আপনি ভালো ফল পাবেন না। তাই নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করুন। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন। ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে বড় কাজে হাত দিন। প্রয়োজনে সফল ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিন।
৫. ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের অভাব
ফ্রিল্যান্সিংয়ে শুরুটা কঠিন হতে পারে। প্রথম কাজ পেতে বা ক্লায়েন্টের আস্থা অর্জন করতে সময় লাগতে পারে। এই সময় আপনাকে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি সহজে হাল ছেড়ে দেন, তাহলে সফল হওয়া কঠিন। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একদম হাল ছেড়ে দেওয়ার আগমুহূর্তে কাজ পেয়েছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অনেক সময় চটকদার বিজ্ঞাপন আমাদের ভুল ধারণা দেয়। আমরা ভাবি, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুললেই আয় করা যায়। আদতে তা নয়। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিন এবং উন্নতি করার চেষ্টা করুন।