তাঁরা কেন চার বছর পরপর বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপন করেন
২৯ ফেব্রুয়ারি যাঁদের জন্ম বা বিয়ে, চার বছর পরপর দিনটি উদ্যাপন করতে পারেন তাঁরা। অভিনয়শিল্পী সায়েদ জামান শাওন আর মুমতাহিনা চৌধুরী টয়ার বিয়েও হয়েছে ২৯ ফেব্রুয়ারি। চার বছর আগে বিয়ে করলেও এ বছরই প্রথম দিনটি উদ্যাপন করতে পারবেন এই জুটি।
২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। সাদা রঙের বিয়ের পোশাকে কনে। সাদা সারারা কাটের প্যান্ট, সাদা কামিজ আর ওড়না। বরের পরনে সাদা পাঞ্জাবি–পায়জামা। এখানেই শেষ নয়। আগত অতিথিদের সবাই পরেছিলেন সাদা।
আপনি যদি মনে করেন বাংলাদেশে সাদা পোশাকে বিয়ের যে ধারাটা সম্প্রতি চালু হয়েছে, সেটা বলিউড তারকা আলিয়া ভাট আর রণবীর কাপুরের বিয়ের পোশাক থেকে অনুপ্রাণিত; এক্ষুনি ভুল শুধরে নিন। একরাশ শুভ্রতার মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশায় কেবিন ক্রু ও নেশায় অভিনয়শিল্পী সায়েদ জামান শাওনের ‘পাইলট’ বনে যান অভিনয়শিল্পী মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া। চার বছর আগে বিয়ে করলেও আগামী বৃহস্পতিবার এই জুটির ‘প্রথম’ বিবাহবার্ষিকী!
কেমন কাটল চার বছর?
প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম টয়ার কাছে। তাঁকে দিয়ে প্রথমেই শপথ করিয়ে নিলাম, ‘যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না।’ তারপর বলেন, ‘সত্যটা হলো, দুটো মানুষ যতকাল ধরেই প্রেম করুক না কেন, যত গভীর জানাশোনা থাক না কেন, বিয়ের পর একসঙ্গে বসবাস—এটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমাদেরও তাই হয়েছে। যথেষ্ট ঝড়ঝাপটা গেছে। তবে ৪ বছর পর ভালোবাসাই জয়ী হয়ে টিকে আছে। আমাদের নিজেদের বোঝাপড়াও শক্ত হয়েছে। দিন শেষে আমরা ভালো আছি।’
বিয়ের আরেক নাম নাকি আপস। কে কতটা করেছে, জানতে চাইলে টয়া বলেন, ‘এই হিসাবটাই ভুল। এটা করা যাবে না। শুরুতে এটা আমি বুঝিনি। তুলনা করা আর আফসোস করা—এই দুটোকে সংসারজীবন থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। আমাদের সমস্ত ঝামেলা শুরুটা হতো, “আমি তোমার জন্য এইটা করেছি, আর তুমি” এই বাক্য দিয়ে। এটা হতেই দেওয়া যাবে না। নিজেদের ভুল থেকে আমরা শিখেছি। সব ভুলে একজন আরেকজনের কাছেই ফিরেছি। আরও গভীরভাবে।’
টয়া যত ভুলই করুন না কেন, সেগুলোকে সহজভাবে নেন শাওন। এদিকে শাওন বলেন, ‘আমি অনেক এলোমেলো। টয়া আমাকে গুছিয়ে রাখে। আমার আর
আমাদের সম্পর্কের প্রতি টয়ার যত্ন আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি।’
কফি বানাতে শাওন সেরা!
শাওন নাকি ভুনাখিচুড়ির ভক্ত। সঙ্গে গরুর মাংস। তাই বিয়ের পর টয়া মা আর শাশুড়ির কাছ থেকে রান্নাটা শিখে নিয়েছেন। এ ছাড়া শাওন বিভিন্ন মকটেল ড্রিংক খেতে পছন্দ করেন। তাই টয়াও ইউটিউব দেখে লেবু, পুদিনাপাতাসহ নানা কিছু মিশিয়ে বিভিন্ন মৌসুমি ফলের জুস বানিয়ে দেন শাওনকে। টয়া অবশ্য নিজে ভালোবাসেন থাই, কোরিয়ান, জাপানি, চায়নিজ আর রাঙামাটির স্থানীয় কিছু খাবার। বাঁশকোড়ল আর জুম চাল-কাঁঠাল দিয়ে কলাপাতায় মুড়িয়ে ভাপে বানানো পিঠা তাঁর বেশি প্রিয়।
‘কফি’ই একমাত্র পানীয়, দুজনেই যেটা চুমুক দিতে দিতে টুক টুক করে গল্প করতে পছন্দ করেন। কফিটা বানায় কে? টয়ার চটপট উত্তর, ‘শাওন সবচেয়ে ভালো কফি বানায়। ও যেহেতু এয়ারলাইনসে চাকরি করে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কফি সংগ্রহ করে।’ শুধু এ কারণেই নাকি শাওনের অনেক ‘অপরাধ’ ক্ষমা করে দেন টয়া। ‘প্রথম’ বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপনেও থাকবে শাওনের হাতের কফি!
কী পরবেন?
টয়ার দৈনন্দিন জীবনের পোশাকে প্রথমেই আসে টপ আর প্যান্ট। শাওনেরও জিনস, টি-শার্ট বা চলতি ধারার কিছু। তবে কোনো অনুষ্ঠান বা উদ্যাপনে তাঁদের পছন্দ পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানা পোশাক। টয়া ভালোবাসেন শাড়ি, তার মধ্যে কাতান শাড়ি আবার তাঁর কাছে একটু বেশিই বিশেষ। শাওন ভালোবাসেন পাঞ্জাবি। শাওন নাকি পাঞ্জাবি পরার উপলক্ষ খুঁজতে থাকেন। তাঁর নাকি কম করে হলেও অর্ধশত পাঞ্জাবি আছে! তাই চার বছর পর আসা বিয়ের দিনও ভাঁজ ভাঙবে শাড়ি আর পাঞ্জাবির।
কীভাবে উদ্যাপন করেন?
টয়া আর শাওন দুজনেই নিজেদের পেশাগত জীবন নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। তাই বিয়ের আগে একসঙ্গে গুণগত সময় কাটানোর যে সংকট দুজনের ছিল, বিয়ের পরেও পুরোপুরি সেটা যায়নি। এই দুজন তাই যখনই সময় পান একসঙ্গে উদ্যাপন করেন। যেমন প্রায়ই দুজনে সুন্দর কোনো ছাদ রেস্তোরাঁয় খেতে চলে যান। অথবা সকালে হাঁটতে বের হয়ে নাশতা সেরে আসেন। আরেকটু লম্বা সময় পেলে দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আসেন। বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপন করেন একেবারেই পারিবারিকভাবে। সেটাও দুই দিন। ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে চলে ১ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত। প্রথমবার দুই পরিবার আর বন্ধুবান্ধব মিলে বাইরে খেতে গিয়েছিলেন। একবার টয়ার শাশুড়ি রান্না করেছেন।
আর গতবার সবাই মিলে সুন্দর সময় কেটেছে রাঙামাটিতে, যেখানে টয়ার বড় হওয়া। টয়ার মা সবাইকে রেঁধে খাইয়েছেন। এ বছর এই দুজন শহরের কোলাহল ফেলে যাবেন নিরিবিলি কোনো একটা রিসোর্টে। আবারও ‘ছায়াছবি’কে বলবেন চার বছরের সংসারের গল্প। যেমনটা হয়েছিল বিয়ের পর। এ যেন বৃত্ত পূর্ণ করে পুরোনো বিন্দুর কাছে ফেরা! যেখান থেকে সবকিছুর শুরু হয়েছিল...