মিনিমাল মেকআপ, ২০২৩ সালে কনেসাজে চলবে এই ধারা
‘শাড়ি-গয়না কেনা শেষ। কোন পোশাকের সঙ্গে গায়ে উঠবে কোন গয়না, তাও ঠিক হয়ে গেছে। তবে বিশেষ দিনের পারফেক্ট লুকটা আনবে তো মেকআপ আর্টিস্ট। কনের মেকআপের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। বছর বছর বর-কনের পোশাকে যেমন নতুন কিছু যোগ হয় আর কিছু জিনিস বাদ পড়ে, সাজের ক্ষেত্রেও তা–ই। এবার যেমন নতুন কিছু বিষয় সাজে যুক্ত হচ্ছে, বাদও যাবে অনেক কিছু,’ বলছিলেন সাজের প্রতিষ্ঠান ‘স্প্লেন্ডর বাই আনিকা বুশরা’র প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা আনিকা বুশরা। জানালেন, বিয়ের আয়োজনে এখন অনেক অনুষ্ঠান থাকে। একেক অনুষ্ঠানে একেক ঘরানার লুক নিতে চান কনেরা।
কনের মেকআপে পরিবর্তন ও নতুনত্ব এসেছে। আনিকা বুশরা বলেন, ‘ইনার লাইন–আউটার লাইন তীক্ষ্ণ করে অনেকে ফক্স লাইন করতে পছন্দ করেন। এখন বিভিন্ন রঙের লাইনার ব্যবহৃত হচ্ছে। আগে যেমন ভাবা হতো, রঙিন চোখ করলে দেখতে খুব একটা ভালো লাগবে না। এখনকার কনেরা সেটা খুব সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছেন। যদি কনে মনে করেন যে জমকালো সাজবেন না, তখন রুচিশীল রঙের মধ্যে আই মেকআপ করে, চিকন করে গ্লিটার লাইনার বা কালার লাইনার লাগিয়ে দিই। আগে যেখানে শুধু কালো রঙের কাজল ব্যবহৃত হতো, এখন নিচের চোখেও নীল-বেগুনি-গোলাপি বা হলুদ রং ব্যবহার করা হচ্ছে।’
নতুন প্রজন্মের কনেদের খুব নিরীক্ষাধর্মী উল্লেখ করে এই রূপবিশেষজ্ঞ বলেন, আগে খুব ম্যাট লিপস্টিক চলত, এখন দেখা যাচ্ছে অমব্রে লিপস্টিকের চল। সেটার ওপর হয়তো গ্লস দেওয়া হচ্ছে। চোখের মেকআপের ক্ষেত্রেও আগে গ্লিটারে লাল-নীল রং ব্যবহার করা হতো। এখন লাইল্যাক, লাইটার গোল্ডেন, প্যাস্টেল ব্লু, প্যাস্টেল গ্রিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘আগে বউয়ের সাজে কখনো যা কল্পনাও করতে পারতাম না, এখন তা–ই করা হচ্ছে অনায়াসে,’ জানালেন একাধিক রূপবিশেষজ্ঞ। রূপবিশেষজ্ঞ সুলেখা বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, লাইনার করলাম, পরে চোখের নিচে তিনটি স্টোন বসিয়ে দিলাম। অনেক সময় চোখের পাতার পুরোটাজুড়ে ছোট ছোট স্টোন দিচ্ছি। আগে কনের সাজে যেটা ভাবাই যেত না।’
বিয়ের সাজের ক্ষেত্রে কনের চাওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত মনে করেন আনিকা, ‘ভ্রুর ক্ষেত্রেও এখন অনেক নতুনত্ব এসেছে। আগে ভ্রু শেপ করে আঁকতাম, এখন একটু ফেদারি ভ্রু পছন্দ করেন কনেরা। ওপরের দিকে ওঠানো আর হালকা হালকা স্ট্রোকস থাকবে, দেখলেই মনে হবে ন্যাচারাল। অনেকে বডি জুয়েলারি বানাচ্ছেন বা চুলের গয়না পরছেন নিজের মনমতো। তখন আমরা চেষ্টা করি মেকআপের সঙ্গে সেই অনুষঙ্গ মিলিয়ে দিতে।’
পারসোনার পরিচালক নুজহাত খানও শোনালেন পরিবর্তনের গল্প। আগে যেগুলোকে ফ্যান্টাসি টাইপের মেকআপ মনে হতো, এখন সেগুলোই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাজ এখন খুবই মিনিমালের দিকে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে হালকা বেজের চল রয়েছে। আগে যেখানে বলা হতো, বোঝা না গেলে আবার মেকআপ হলো নাকি? এখন প্রোডাক্টই বানানো হচ্ছে এমন করে, যেন আলাদা করা না যায়। প্রাইমার, ফিনিশিং স্প্রেও এমনভাবে বানানো হচ্ছে, যেন ত্বকে মিশে যায়। চোখের মেকআপে হাতখোলা ভাব থাকলেও বেজ হালকা রাখা হচ্ছে। লাইনারও ব্যবহৃত হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ঘরানায়।
হালকা আর ন্যাচারাল মেকআপের চল থাকলেও নুজহাতের মতে, ‘একেক দিনের জন্য একেক ধরনের সাজ বেছে নিতে পারেন কনেরা। খোলা আকাশের নিচের আয়োজনে সাজ যতটা সম্ভব মিনিমাল রাখাই ভালো। যেসব কনে বোহেমিয়ান, কড়িটড়ি দিয়ে বানানো লেহেঙ্গা পরেন, তাঁরা লাইট ও কালারফুল মেকআপ করতে পারেন। তবে রাতের আয়োজনে জমকালো মেকআপের চলই বেশি। সাজের পরিকল্পনা তাই দুটি ভাগে সাজিয়ে রাখতে পারেন। একটাতে হালকা সাজ নিলেন, অন্যটাতে না হয় ভারীই থাকল।’