চাকরি কীভাবে খুঁজতে হয়

একসময় চাকরি খোঁজার জন্য পত্রিকার বিজ্ঞাপনই ছিল ভরসা। এখন কিন্তু নানা রকম মাধ্যম আছে। আবার অজস্র চাকরির বিজ্ঞপ্তির ভিড়ে নিজের জন্য জুতসই সুযোগটা খুঁজে পাওয়াও কঠিন। কীভাবে আপনার চাকরি খোঁজার ‘মিশন’ হতে পারে আরও আধুনিক?

গুগল কাজে লাগিয়ে নানাভাবে চাকরির খোঁজ করা যায়ছবি: পেক্সেলস

গুগলের সঠিক ব্যবহার

গুগলে চাকরি খুঁজলে সার্চ ইঞ্জিনটি বিভিন্ন উৎস থেকে আপনাকে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখাবে। তবে আপনি চাইলে বিভিন্ন রকম ‘ফিল্টার’ ব্যবহার করে অনুসন্ধানের ব্যাপ্তিটা নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। ধরা যাক, আপনি ঢাকায় মার্কেটিং–সংক্রান্ত চাকরি খুঁজছেন, কিংবা আপনি ঘরে বসেই (রিমোট জব) সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতে চান। কাজের ধরন, স্থান, সবই নির্দিষ্ট করে দেওয়া সম্ভব। অভিজ্ঞতা, ডিগ্রি, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ, এসবও ফিল্টারে উল্লেখ করা যায়। তবে এর চেয়েও কার্যকর হতে পারে ‘গুগল অ্যালার্ট’। google.com/alerts-এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি কিছু নির্দিষ্ট কি–ওয়ার্ডের জন্য ‘অ্যালার্ট’ সেট করতে পারবেন। ধরা যাক, আপনি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করতে চান। গুগল অ্যালার্টসে যদি ‘HR Job Bangladesh’, ‘HR Recruitment Bangladesh’—এ ধরনের কিছু কি–ওয়ার্ড সেট করে রাখেন, তাহলে যেকোনো ওয়েবসাইটে এ ধরনের নতুন চাকরির খোঁজ এলেই গুগল আপনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই–মেইল পাঠিয়ে দেবে।

ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ

ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগকর্তা ফেসবুকের মাধ্যমেও চাকরির বিজ্ঞাপন দেন। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরি–সংক্রান্ত নিজস্ব পেজও থাকে (যেমন বাংলালিংক ক্যারিয়ারস)। আবার এমন অনেক ফেসবুক গ্রুপ আছে, যেখানে নিয়মিত চাকরি বা ইন্টার্নশিপের সুযোগের খবর পোস্ট করা হয়। গ্রুপ নোটিফিকেশন চালু রাখলে আপনি নতুন পোস্টের তথ্য নিয়মিত পেয়ে যাবেন। কয়েকটি গ্রুপ: ভ্যাকেনসি অ্যানাউন্সমেন্ট বিডি, জবস ফর উইমেন ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড বিয়ন্ড, জব ইনফরমেশন বাংলাদেশ, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস ও পেজ। আবার নির্দিষ্ট চাকরিভিত্তিক গ্রুপও আছে (যেমন গ্রাফিক ডিজাইন জবস বিডি)। ছাত্রজীবন থেকেই এ ধরনের গ্রুপগুলোতে যুক্ত হতে পারেন। তাহলে বাজারের চাহিদা সম্পর্কে ধারণা হবে।

আরও পড়ুন

লিংকডইন

চাকরি খোঁজার জন্য লিংকডইন এখন সবচেয়ে প্রচলিত মাধ্যম। এখানে শুধু আপনিই যে চাকরি খুঁজবেন তা নয়, চাকরিও আপনাকে খুঁজবে। তাই নিজের প্রোফাইল ঠিকঠাক সাজানো জরুরি। linkedin.com/jobs-এ গেলেই আপনি নানা চাকরির খোঁজ পাবেন। নির্দিষ্ট ফিল্টার (অবস্থান, অভিজ্ঞতা স্তর, কোম্পানি ইত্যাদি) ব্যবহার করে বিভিন্ন চাকরির তথ্য ও বর্ণনা দেখতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠান লিংকডইনের মাধ্যমে সরাসরি চাকরির আবেদনের সুযোগ দেয়। ‘ইজি অ্যাপ্লাই’ অপশনে ক্লিক করলেই আপনার প্রোফাইল থেকে চাকরির আবেদন চলে যাবে নিমেষে। আপনি যে খাতে চাকরি করতে চান, সেই খাতের নামী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রোফাইল ‘ফলো’ করতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগও থাকে লিংকডইনে।

চাকরির পোর্টাল

বাংলাদেশে বিভিন্ন চাকরির পোর্টাল (ওয়েবসাইট ও অ্যাপ) আছে। এসব পোর্টাল থেকে আপনি নিয়মিত বিভিন্ন পদের জন্য চাকরির খোঁজ নিতে পারেন। বিডিজবসের মতো সাইট নিয়মিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এসব সাইটে নিবন্ধন করে আপনার হালনাগাদ সিভি আপলোড করুন। চাকরির শিরোনাম, অবস্থান, অভিজ্ঞতা এবং বেতনের তথ্য ফিল্টার করে নিলে অনুসন্ধান করা সহজ হবে।

অফিশিয়াল ওয়েবসাইট

অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের অফিশিয়াল ক্যারিয়ার পেজে চাকরি ও ইন্টার্নশিপের তথ্য পোস্ট করে। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী, সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নজর রাখতে পারেন। যেমন ব্র্যাক: careers.brac.net, ইউএনডিপি: undp.org/careers, গ্রামীণফোন: grameenphone.com/about/career, আইসিডিডিআরবি: career.icddrb.org, ইত্যাদি। এসব পোর্টাল আপনাকে একটি প্রোফাইল তৈরি করে জীবনবৃত্তান্ত আপলোড করার সুযোগ দেবে। নিয়মিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ছাড়াও এসব ওয়েবসাইটে তথ্য আপলোড থাকলে প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ জরুরি নিয়োগের সময় আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

আরও পড়ুন

অভ্যন্তরীণ নিয়োগের খোঁজ নিন

অনেক প্রতিষ্ঠান ঘটা করে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে অভ্যন্তরীণভাবে খোঁজ নেয়। অর্থাৎ অফিসের ভেতরেই কর্মীদের কাছে জানতে চায়, যোগ্য কোনো প্রার্থী আছে কি না। নতুন চাকরির খোঁজ জানতে কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগে ই–মেইল করতে পারেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হলে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন, নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেন। সেটিও কাজে দেবে।

চাকরির মেলা

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের ‘চাকরির মেলা’ আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় ‘জব ফেয়ার’। কোনো কোনো মেলা অবশ্য শুধু আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আপনি সরাসরি সিভি জমা দেওয়ার, এমনকি কখনো কখনো সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগও পাবেন। সব সময় সিভি ও পোর্টফলিও তৈরি রাখুন।

আরও পড়ুন