২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

জীবন সহজ করতে ‘স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট’

কম জায়গার মধ্যে গোছানো ছোট্ট ফ্ল্যাটের ধারণাটি বিশ্বের অনেক দেশেই জনপ্রিয়। স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট নামে পরিচিত এ ধরনের ছোট্ট বাসা বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছে। জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নতুন এই ধারা। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সে রকম কিছু প্রকল্পের খোঁজ জানাচ্ছেন শুভংকর কর্মকার

খাট, সোফা, খাবার টেবিল থেকে রান্নাঘর—সবই সাজানো–গোছানো থাকে। কেনার পর আপনি কেবল দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে উঠে পড়বেন। ব্যস।
মডেল: মার্শিয়া, কৃতজ্ঞতা: র‍্যাংগস, ছবি: সুমন ইউসুফ

ব্যবসার প্রয়োজনে প্রায়ই রাজধানীতে আসতে হয় কিংবা চাকরি করছেন ঢাকায়, পরিবার থাকে মফস্‌সলে বা গ্রামে। একটু ভালো পরিবেশে থাকতে চান। হাতে জমানো টাকাও আছে ৪০ থেকে ৫০ লাখ। তাহলে আপনার জন্য ভালো সমাধান স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। খাট, সোফা, খাবার টেবিল থেকে রান্নাঘর—সবই সাজানো–গোছানো থাকে। কেনার পর আপনি কেবল দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে উঠে পড়বেন। ব্যস।

স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট সাধারণত ৫০০ থেকে ৬০০ বর্গফুটের হয়ে থাকে। তার মধ্যেই একটি শোবার ঘর, একসঙ্গে বসা ও খাবার ঘর, রান্নাঘর এবং ব্যালকনি। আর সব কটি কক্ষেই আসবাবসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিস বসবাসের উপযোগী করে দেয় আবাসন প্রতিষ্ঠান। ফলে ক্রেতাকে এসব সামগ্রী কেনাকাটার ঝামেলাও আর পোহাতে হয় না। এ ছাড়া এসব অ্যাপার্টমেন্টে গ্যাস–বিদ্যুতের বিল আসে কম। রক্ষণাবেক্ষণও খরচসহনীয়। 

সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, এমনকি পাশের দেশ ভারতেও স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট জনপ্রিয়। তবে বাংলাদেশে এখনো অতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প হয়েছে একেবারেই হাতে গোনা। লেকসিটি কনকর্ডের একটি ভবনে ৫৯০ বর্গফুটের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেছিল আবাসন খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান কনকর্ড রিয়েল এস্টেট কোম্পানি।

র‍্যাংগসের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে একটি শোবার ঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর ও ব্যালকনি আছে
মডেল: মার্শিয়া, ছবি: সুমন ইউসুফ

মাটি প্রোপার্টিজ নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকে ১২ কাঠা জমির ওপর স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেছে। সেখানে ২৫০ থেকে ৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ছয়টি আকারের ১৬৮টি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট আছে। প্রয়োজনীয় আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্যে সাজানো–গোছানো প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্ট। বাড়তি হিসেবে ভবনের বাসিন্দাদের জন্য সুইমিংপুল, মুভি থিয়েটার, ব্যায়ামাগার ইত্যাদি সুযোগ–সুবিধাও আছে।

স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দেশের আরেক শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান র৵াংগ্‌স প্রপার্টিজ। রাজধানীর বসুন্ধরা লিংক রোডে তাদের এ প্রকল্পের নাম র৵াংগ্‌স কোর্ট ইয়ার্ড। ২৫ কাঠা জমির ওপর এই আবাসিক প্রকল্পে পাশাপাশি দুটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করছে তারা। এখানে ৬২০ থেকে ৬৭০ বর্গফুটের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট এবং ১ হাজার ২৮৫ থেকে ১ হাজার ২৯১ বর্গফুটের মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটও রয়েছে। প্রকল্পটিতে শতাধিক অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে একটি শোবার ঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর ও ব্যালকনি আছে। থাকবে প্রয়োজনীয় সব আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্য। ফলে নতুন করে কিছুই কিনতে হবে না। তারপরও ক্রেতা যদি কিছু পরিবর্তন করতে চান, আলোচনা সাপেক্ষে সেটাও পূরণ করে দেবে কর্তৃপক্ষ।

স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট অনেক ক্ষেত্রে জীবন সহজ করে
মডেল: মার্শিয়া, ছবি: সুমন ইউসুফ

এই স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের জীবনযাপন সহজ করতে নানা রকম সুযোগ–সুবিধা রেখেছে র৵াংগ্‌স। অভ্যর্থনাকক্ষে থাকবে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা। দুই ভবনের মাঝখানে থাকবে সুইমিংপুল। স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য ব্যায়াগামারও থাকবে। এর বাইরে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, লন্ড্রি সার্ভিস, গৃহস্থালি কাজের জন্য সহায়ক কর্মীসহ বাড়তি সুযোগ–সুবিধা থাকবে। ছোটখাটো প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাতে যেতে না হয়, তার জন্য থাকবে ছোট মুদিদোকান। দুই ভবনের মাঝখানে ও ছাদে সবুজের সমারোহ থাকবে। ছাদে বসে আড্ডা কিংবা অবসর সময় কাটানোর সব রকমের ব্যবস্থাই থাকবে।

র৵াংগ্‌স প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশিদ রহমান বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে প্রতিবছরই অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য রাজধানীতে আসেন। তাঁদের একটি অংশের উন্নত মানের আবাসনের চাহিদা আছে। আবার ঢাকায় অনেক নারী চাকরিজীবী একা থাকেন। ব্যাচেলরদের জন্য বাসা পাওয়াটা খুবই কঠিন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের কাছ থেকে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের চাহিদা পাচ্ছিলাম। যখন আমরা প্রকল্পটি নিয়ে এলাম, তখন গ্রাহকদের কাছ থেকে খুব দ্রুতই সাড়া পেলাম। ব্যাচেলর থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও ছোট পরিবার স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে। আবার আগে থেকেই যাঁদের অ্যাপার্টমেন্ট আছে, তাঁরাও হাতে জমানো টাকা থাকলে এ ধরনের অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করছেন।

মাশিদ রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ধারণাটি নতুন। তবে আমরা দেখছি, দ্রুতই জনপ্রিয় হচ্ছে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য মাঝারি ও বড় আকারের ফ্ল্যাট কেনা কঠিন হয়ে পড়ছে। আবার চাকরির কারণে পরিবার ছাড়া যাঁরা ঢাকায় বসবাস করেন, তাঁরাও উন্নত মানের বাসা চান। তবে ব্যাচেলর হওয়ার কারণে ভালো বাসা পান না। সব মিলিয়ে আগামী দিনে আবাসন খাতে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।’