এক দোকানেই ৭১টি ব্র্যান্ড!

বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা ব্র্যান্ডকে একই ছাদের নিচে তুলে ধরার একটা ধারা আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে। ক্রেতাদের জন্যও বিষয়টি বেশ ইতিবাচক। পছন্দের ব্র্যান্ডগুলো তাঁরা যখন এক ছাদের নিচে পেয়ে যান, যানজটের নগরীতে তাঁদেরও আর নানা জায়গায় ছুটতে হয় না। মজার বিষয় হচ্ছে, আলাদা দোকান আছে, এমন অনেক ব্র্যান্ডকেও গুচ্ছব্র্যান্ডের এই বাড়িগুলোতে পাওয়া যায়। আবার শুধু অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন, এমন বিক্রেতাকেও এই দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশীদশ, যাত্রা, গো দেশি, খুঁতের বাড়ি, কোরাল ক্লসেট ইত্যাদি নামের দোকানগুলোর দরজা দিয়ে ঢুকলেই একই ছাদের নিচে খুঁজে পাওয়া যায় ভিন্নতা আর বৈচিত্র্যের আমেজ।

দেশীদশ

একটি বাড়ির ১০টি ঘর। কাছাকাছি রূপ তবে নাম ভিন্ন। অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা, নিপুণ, কে ক্র্যাফট ও সৃষ্টি—দেশীয় ফ্যাশনের ১০টি ভিন্ন আমেজ আর তাদের গড়ে ওঠার পেছনে ১০টি গল্প। এই নিয়েই ‘দেশীদশ’। একই ধারার অনেকগুলো ব্র্যান্ডকে যে পাশাপাশি রাখা যায়, দেশে এই ভাবনার পথিকৃৎ হিসেবে ২০০৯ সালে এক ছাদের তলায় যাত্রা শুরু করে দেশের ১০টি ফ্যাশন ব্র্যান্ড। এরপর পেরিয়ে গেছে দেড় যুগ। বদলে যাওয়া ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একে অপরের হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলেছে দেশীদশ।

দেশীয় ফ্যাশনের ১০টি ভিন্ন আমেজ খুঁজে পাওয়া যায় দেশী দশে
ছবি: দেশী দশ

রঙ বাংলাদেশের মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের সহকারী ম্যানেজার প্রিতম পল্লব বলেন, শুরু থেকেই অসাধারণ এক মঞ্চ দেশীদশ। একই ধারার অন্য ব্র্যান্ডগুলোকেও পাশে পাওয়া মানে, একধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যাওয়া। দেশালের মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পারশা রফিক বলেন, ফ্যাশনে ফিউশনে এ ধরনের দেশি ব্র্যান্ডগুলোর প্রচার হওয়া জরুরি। ঠিকঠাক মঞ্চ থাকা দরকার। অঞ্জন’সের ফারুক হেলাল বলেন, ঐতিহ্যবাহী দেশি ব্র্যান্ডগুলোকে অনুপ্রেরণা জোগায় দেশীদশ। বিভিন্ন উৎসবে, পার্বণে নতুন নতুন প্রতিযোগিতামূলক আয়োজন করে। দেশীদশের প্রতিটি ব্র্যান্ডই আলাদা, আবার কেমন যেন এক, বলছিলেন বাংলার মেলার প্রোডাকশন ইনচার্জ ইমদাদ বাদল। ব্যাপারটা এমন, যেন ১০ জনের ক্লাসে ১০ জনই চায় ভালো ফলাফল। প্রত্যেকের পোশাকের নকশায় আছে নিজস্বতা। সেটিকেই তুলে ধরার চেষ্টা।

প্রত্যেকের পোশাকের নকশায় আছে নিজস্বতা
ছবি: দেশী দশ

গো দেশি

গো দেশিতে আছে ৭১টি ব্র্যান্ড
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বনানীর ই ব্লকের ১৯/এ রাস্তার ২২ নাম্বার বাড়িটির দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেই মনে হবে, চারদিকে ছড়িয়ে আছে নতুনত্ব। খুব বেশি দিন হয়নি যাত্রা শুরু করেছে গো দেশি। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ ফেসবুকে দেশীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে চলা শুরু করে গো দেশি। প্রথম দিকে শুধু অনলাইনেই নিজেদের পণ্য তুলে ধরতেন বিক্রেতারা। নতুন নতুন ডিজাইনারদের উৎসাহ দিয়েছিলেন এ দেশের প্রতিষ্ঠিত ডিজাইনাররা। তাঁরাও পেজটিতে তাঁদের পোশাক বিক্রির জন্য পোস্ট দিতেন। ১ বছর পর ২০২২ সালের ১৫ মার্চ গো দেশি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেরা আনোয়ার জানালেন, প্রথম দিকে ৫৫টি ব্র্যান্ড ছিল, এখন বেড়ে হয়েছে ৭১।

গো দেশিতে আছে নানা ধরনের পোশাক
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
গো দেশির শাড়ির নকশায় আছে নতুনত্ব
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের পাশাপাশি একদম আনকোরা, নতুন ব্র্যান্ডও আছে। বিক্রি হচ্ছে পোশাক, গয়না, ব্যাগ, বাড়ি সাজানোর অনুষঙ্গ, জুতা ইত্যাদি পণ্য।

দেশি গোতে আছে গয়নাও
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

দেশি গো-এর ব্র্যান্ডগুলো হলো হরীতকী, রিং দা বেল, গজমতি, চৌধুরীস, সারল্য প্রোডাক্টস, মিনডালা, হাই টি, অন্দর শাড়ি, আর্ট জেনিক্স, মানাস, এ.এস হ্যান্ড বুটিকস, প্রিন্টস ফ্রেম, কুহু’স প্লামন্দন, জুতা-ফ্যাব-বিডি, ট্রাই ওয়ান্স, স্টোন অ্যান্ড স্টিচেস, পাতার গল্প, বটুয়া ব্যাগ, ঢাকা ইয়াহ!, অ্যাসিক্স, শিল্পলোক, স্টাইল ঘর, ক্র্যাফটারস হোম, কাপড় রাত্রি, তানিশা’স সেন্স অব ফ্যাশন, পিচ অ্যান্ড পেস্টেল, মেহনাজ ফ্যাশন, নরিশিং দ্য সোল, প্রতিভা, ফ্রেড হাদাদ, শৈল্পিক কাব্য, রুজ ব্র্যান্ড, লিপি খন্দকার, ফারাহ আনজুম বারি, কালিন্দি, সাবরিনা রহমান, ক্র্যাফট পান্ডা, আলিশা ডেকোর, টাইমলেস, ট্রেন্ডি কালেকশন, ক্র্যাফটস অ্যান্ড কালারস, তাঁত ঘর, কুমুদিনী বসন, ব্যাগিটিউড, চিত্রাঙ্গদা, রংধনু, সুতার কাব্য, বেলি’স কালেকশন, মুমু মারিয়া, কৃষ্টি, অনিকিনী, অরি, বাগডুম, বেনি বুনন, দিলারাস ড্রিম, মৃৎ, নকশা ক্র্যাফটস, প্রথা, সেভেন ডেজ, তাঁতি বয়ন, পুনশ্চ, আর রহমান, আনজুম সোলাইমান, লীলাবালি, বায়োস্কোপ হ্যান্ডি ক্র্যাফটস, মাই হেরিটেজ, রঙ্গন ক্র্যাফটস, মেকারস মার্কেট, সাবেরা আনোয়ার ও লরেন করপোরেশন।