দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে খরচ বাঁচানোর ২০ উপায়

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত একটা বিজ্ঞাপনচিত্র এখনো বেশ জনপ্রিয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘একটু চালাক না হইলে দুনিয়াতে টেকা খুব কঠিন!’ হ্যাঁ, কথাটায় সত্যতা আছে। আর বাংলাদেশের এই মুহূর্তের বাজার পরিস্থিতির বাস্তবতায় তা আরও বেশি করে সত্যি। খরচ কমানোর ব্যাপারে এই ‘চালাকি’ খুবই দরকারি। কীভাবে ব্যবহার্য জিনিসপত্র টেকসই করবেন, খরচ বাঁচাবেন, কী সেই ‘চালাকি’, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

খরচ বাঁচিয়ে চলা একটা বড় চ্যালেঞ্জ
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

১. একটু কম করে ব্যবহার করুন

গায়ে মাখা সাবান, পারফিউম, বডি স্প্রে, টুথপেস্ট কিংবা কাপড় কাচার ডিটারজেন্ট—নিত্যপ্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলো আপনি যতটুকু ব্যবহারে অভ্যস্ত, যদি তার চেয়ে একটু কম বা অর্ধেক পরিমাণ ব্যবহার করেন, তাহলে খুব বেশি পার্থক্য ধরা পড়বে না। এমন যদি হয়, তাহলে এসব একটু কম করে ব্যবহার করাই ভালো। খরচটা অন্তত বাঁচে। কম থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে কমই ভালো!

২. মৌসুমি ফল আর সবজি খান

মৌসুমি ফল আর সবজির দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। বাজারে যখন যেটার দাম কম, সেটা পুরে ফেলুন বাজারের প্যাকেটে।

৩. কলাকে ‘দলছাড়া’ করুন

কলা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। কলায় একধরনের গ্যাস তৈরি হয়। দাঁড়ান, এটাকে আবার ‘কলার গ্যাস্ট্রিক’ ভেবে ভুল করবেন না। কলায় তৈরি হয় ইথিলিন গ্যাস, যা কলাকে পাকতে সাহায্য করে। বোঁটা থেকে কলা খুলে দলছাড়া রাখলে ইথিলিন তৈরির প্রক্রিয়া ধীরে হয়। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে কলাও থাকে ‘হলুদ’, খাওয়া যায় বেশি দিন ধরে।

৪. রেজারকে ‘অ্যালকোহলে’ চুবান

না, না। ভুল শোনেননি। দাড়ি কামানোর কাজ শেষে রেজর থেকে অতিরিক্ত পানি ঝেড়ে ফেলুন৷ তারপর পারলে অ্যালকোহলে ডুবিয়ে নিন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পারফিউম—এগুলোতে অ্যালকোহল থাকে। এতে আপনার রেজারের ব্লেড পরিষ্কার থাকবে, মরিচা ধরবে না। টিকবেও বেশি দিন।

৫. ম্যাট্রেস উল্টে নিন

প্রতি তিন মাস অন্তর শোবার ম্যাট্রেসটি উল্টে নিন। এতে ম্যাট্রেসটা বেশ আরাম পাবে। সঙ্গে এর আয়ুও বাড়বে। সোফার কুশনের ক্ষেত্রে শুধু উল্টালেই হবে না, এদের বিন্যাসও পরিবর্তন করতে হবে। মাঝেমধ্যে কুশন, কাঁথা, কম্বল রোদে দিতে ভুলবেন না।

৬. দোকানে যাওয়ার আগে তালিকা করে নিন

কেনাকাটা প্রয়োজন। তাহলে আগে তালিকা করে নিন। তালিকায় সেগুলোই শুধু রাখুন, যা আপনার সত্যিই প্রয়োজন। তালিকা ধরেই দোকান থেকে প্রতিটি জিনিস কিনুন। এতে বাড়তি খরচ কমে যাবে অনেক।

৭. লিপস্টিক পুরোটাই ব্যবহার করুন

নিয়মিত ব্যবহারে আপনার শখের লিপস্টিকটি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারেই। নাগালের বাইরে গেলেও খোপের নিচে বেশ খানিকটা লিপস্টিকই থেকে যায়। লিপ ব্রাশ দিয়ে তলায় পড়ে থাকা লিপস্টিক টেনে ব্যবহার করুন। দেখবেন, লিপস্টিকের পেছনে ব্যয় করা খরচ অনেক কমে আসবে।

৮. চামড়ার জুতার যত্ন নিন

চামড়ার জুতা বিরতি দিয়ে ব্যবহার করুন। আর্দ্রতা চামড়ার জুতার চরম শত্রু। তাই যাতে আর্দ্রতা আপনার জুতার ক্ষতি না করতে পারে, তাই এক দিন পরপর বিরতি দিয়ে জুতা পরুন। এ ছাড়া এক জোড়া জুতা বা স্যান্ডেল নষ্ট হলেই আরেক জোড়া কিনুন। অনেকগুলো জুতা কিনে র‍্যাকভর্তি করে রেখে কী লাভ!  

৯. সাবান শুকিয়ে ব্যবহার করুন

ব্যবহারের আগে সাবানটি শুকিয়ে নিন। এতে সাবান শক্ত থাকে, টেকেও বেশি দিন। হ্যান্ডওয়াশে খানিকটা পানি ভরে ব্যবহার করুন।

১০. ‘পার্টটাইম’ ভেজিটেরিয়ান হয়ে যান

মৌসুমি শাকসবজি খাওয়া বাড়িয়ে দিন। শুরুতে সপ্তাহে এক দিনের জন্য ‘ভেজিটেরিয়ান’ হয়ে যান। এভাবে বাড়ান। শাকসবজিতে আপনার পাকস্থলীও খুশি থাকবে। আবার মানিব্যাগেও টান পড়বে না।

১১. ‘দিবসে মনের হরষে’ বাতি জ্বালাবেন না

দিনের বেলা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর দরকার নেই। যতটা পারুন প্রাকৃতিক আলোয় থাকুন। রাতেই শুধু বাতি জ্বালান। এতে বিদ্যুৎ আর টাকা—দুটিই বাঁচবে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ফ্যান, লাইট, এসি বন্ধ করুন। যতটা সম্ভব বিদ্যুৎ সাশ্রয় করুন।

১২. গাড়ির আরেকটু যত্ন নিন

গাড়ির এয়ার ফিল্টারটি কয়েক মাস অন্তর হয় পরিষ্কার করুন, নয়তো পরিবর্তন করুন। পরিষ্কার এয়ার ফিল্টার আপনার গাড়ির গ্যাস মাইলেজ ৭ শতাংশের মতো বাড়িয়ে দিতে পারে!

১৩. ভালো করে হাত ধোবেন

টয়লেট ব্যবহার কিংবা কাঁচা ফলমূলে হাত দেওয়ার পর ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। টয়লেটে আর কাঁচা ফলমূলে থাকে শত রকমের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাস। আপনার শখের হাতটা এসব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার ঘরবসতি হয়ে উঠুক, তা নিশ্চয় চাইবেন না। এসব ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমেই ঠান্ডা-কাশি-অ্যালার্জি থেকে শুরু করে নানা ধরনের জটিলতা হয়।

১৪. উইন্ডো শপিং, ‘ইমপালসিভ’ কেনাকাটা একদমই নয়, টাকা ক্যাশে দিন

অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি করে ফেললে তা থেকে বের হওয়া বেশ কঠিন। খরচ বাঁচাতে অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দেওয়া থেকে দূরে থাকুন। টাকা ক্যাশে দিন। কার্ডে পরিশোধ করলে খরচের প্রবণতাও বেড়ে যায়। হুট করে কিছু কেনার আগে ভাবুন, জিনিসটি আপনার কতটা প্রয়োজন। ছাড়ে জিনিস কিনুন।

১৫. মুঠোফোন সেবায় ছাড় খুঁজুন

সবচেয়ে ‘কম রেটে’ কথা বলুন, ইন্টারনেট চালান। ছাড়ের সুযোগ নিন।

১৬. উৎপাদন করুন

কাঁচামরিচ, লেবু, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, টমেটো থেকে শুরু করে নানাকিছু আপনি আপনার ছাদবাগান বা বারান্দার বাগানে চাষ করুন। বিভিন্ন শাক–সবজির চারা আর বীজও লাগাতে পারেন।

১৭. ধূমপান ছেড়ে দিন

দিন–রাত সুখটান দেওয়া ছাড়লে আপনার ফুসফুস আর মানিব্যাগ—দুটিই ভালো থাকবে।

১৮. হেঁটে, পাবলিক বাসে অফিসে যান

যেখানেই যান না কেন, দূরত্ব কাছে হলে হাঁটুন। নতুবা পাবলিক বাসে উঠে পড়ুন।

১৯. অ্যাপের সেবা বাদ দিন

যে অ্যাপগুলোর সেবা নেওয়া বা পণ্য কেনা আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, সেগুলো এখনই মুছে ফেলুন। যা কিছু খেতে ইচ্ছে করে ঘরে বানিয়ে খান। সস্তা বাজার থেকে ক্যাশে কেনাকাটা করুন।

২০. কার্ড থেকে কম করে টাকা তুলুন

হাতে টাকা থাকলে অনেকেরই কেনাকাটা করতে মনটা উশখুশ করে। যেন টাকাগুলো খরচ করে পারলেই শান্তি! তাই অল্প অল্প করে টাকা তুলুন।

এ রকম হাজারটা উপায়ে বাড়তি খরচ বাঁচানো যায়। নিজের মতো করে খচর বাঁচান। মিনিমালিস্ট হোন। কেউ কেউ আপনাকে ‘কিপটে’ বলতেও কার্পণ্য করবে না। যে যা বলে বলুক, কারোর কথায় কান দেবেন না। আপনি অভাবে পড়লে সে এসে আপনার অভাব পূরণ করবে না। অপচয় বন্ধ করাটাই বড় কথা। আজকের সঞ্চয় আগামী দিনের নিশ্চয়তা—এটা ভুলবেন না।


সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Photo by cottonbro studio from pexels

আরও পড়ুন