ব্যবহৃত বা পুরোনো পণ্য কেনাবেচার আগে যা জানা জরুরি
খুব শখ করে কেনা কোনো পোশাক হয়তো আর পরা হবে না। আবার সেটা ফেলে দিতেও মন মানছে না। অপ্রয়োজনীয় সেই পোশাক ডিক্লাটার করে দিতে পারেন। তুলনামূলক কম দামে এমন কেউ সেটা কিনে নিতে পারেন, যেটা তাঁর দরকার।
বন্ধু হয়তো বিদেশ থেকে অনেকগুলো দামি ব্র্যান্ডের লিপস্টিক উপহার পাঠাল; যার প্রায় অর্ধেকের রংই আপনাকে মানাচ্ছে না। এত দামি লিপস্টিক ফেলে রেখে নষ্ট করতে চাইছেন না।
ফেসবুকের একটি ডিক্লাটার গ্রুপে ছবি আর দামসহ পোস্ট করুন। দেখবেন সেখানকার সদস্যরা নিজের পছন্দ অনুযায়ী কিনে নেবেন।
ডিক্লাটার বলতে বোঝায়, যে জিনিস আপনার জীবনে বাড়তি বা আর প্রয়োজন নেই, সেটা সরিয়ে ফেলা। অর্থাৎ জীবনে অতিরিক্ত জিনিসপত্র বা বাহুল্য কমিয়ে ফেলা।
জেনে হয়তো অবাক হবেন, ডিক্লাটার করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়েব এমডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আপনি যদি সহজ উপায়ে স্ট্রেস কমাতে চান, তাহলে ডিক্লাটার করুন। অতিরিক্ত জিনিসপত্র কমিয়ে ফেলার এই প্রক্রিয়া আপনাকে শান্ত করবে, আনন্দ দেবে। ডিক্লাটারের মাধ্যমে আপনি কাজে মনোযোগী হতে পারবেন, জানতে পারবেন ঠিক কতটুকু আপনার দরকার। সেই সঙ্গে অগোছালো জীবন থেকে বেরিয়ে গোছানো জীবনের পথে হাঁটতেও এটা সাহায্য করবে।
কোথায় করবেন ডিক্লাটার
ফেসবুকে পণ্য ডিক্লাটারের জন্য বিভিন্ন গ্রুপ আছে। ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেও অবশ্য পুরোনো জিনিস বিক্রি করা যায়। রিসাইকেল বিন নামের একটি গ্রুপ ফেসবুকে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছিল। তবে ফেসবুকের কিছু নিয়মের কারণে গত বছর গ্রুপটি ডিজেবল হয়ে যায়। পরে অবশ্য নতুন গ্রুপ খুলেছেন রিসাইকেল বিনের অ্যাডমিন ফ্লোরিডা শারমিন।
ফেসবুকে কিছু গ্রুপ আছে যারা কেবল ফার্নিচার বিক্রি করে, কিছু বিশেষায়িত শিশুদের পণ্য, কোথাও কোথাও ডিক্লাটার হয় কেবল শাড়ি। আবার কোনো কোনো গ্রুপে চলে কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্যের অদলবদল। ইদানীং আবার এলাকাভিত্তিক ডিক্লাটার গ্রুপও হচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কাছাকাছি থাকেন বলে সহজেই পণ্য দেখে আনতে পারেন।
যেভাবে ডিক্লাটারের কেনাবেচায় প্রতারণা এড়াবেন
ফেসবুকের হাজার হাজার গ্রুপের মধ্যে কোনটিতে পোস্ট করলে পণ্য সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবেন বা পুরোনো পণ্য কিনে ঠকবেন না, তা নির্ধারণ করা বেশ মুশকিল। এ ক্ষেত্রে আপনি ক্রেতা-বিক্রেতা যা–ই হন না কেন, কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। কারণ, বেশির ভাগ ডিক্লাটার গ্রুপগুলো চলে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে, তাই ঠকে গেলে গ্রুপ অ্যাডমিনকে দোষারোপ করেও লাভ হয় না।
চৌরঙ্গীর প্রতিষ্ঠাতা ও অ্যাডমিন ঈশিতা পায়েল বলেন, ডিক্লাটারের ক্ষেত্রে যেকোনো পণ্য হাতে পেয়ে ডেলিভারিম্যানের সামনে চেক করে, তবেই লেনদেন করা ভালো। আবার ফেইক আইডি বা লকড আইডি দেখে সন্দেহ হলে তার সঙ্গে লেনদেন না করাই ভালো।
প্রতারণা ঠেকাতে কিছু গ্রুপ সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে। পোস্ট অ্যাপ্রুভের ক্ষেত্রে গ্রুপগুলোর রয়েছে আলাদা নিয়ম। কেনা দাম, কেনার রিসিট দেখানো ও কেনা দামের অন্তত ২০ শতাংশ কমিয়ে পণ্য বিক্রি করার মতো নিয়মও মানতে হয় অনেক গ্রুপে।
রিসাইকেল বিনের ফ্লোরিডা বলেন, ‘কারও বাসায় গিয়ে কোনো পণ্য দেখে নেওয়ার কথা হলে যাওয়ার সময় অবশ্যই কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। তা ছাড়া যেখানে যাচ্ছেন, ওই জায়গার লোকেশন পরিচিত পুলিশ সদস্য বা পরিবারের কারও সঙ্গে শেয়ার করে যান।’
ফ্লোরিডা জানান, ফেসবুকের যে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস ও কপিরাইট ইস্যু আছে, সেটিই মূলত ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রিতে বাধা দেয়। তিনি বলেন, ‘ধরুন, কেউ অ্যাপলের ব্যবহৃত পণ্য বিক্রি করবে। এখন ফেসবুকের বট যখন তা দেখে, সে ভাবে অ্যাপল পণ্য তো অ্যাপল স্টোরে থাকার কথা। এটি এই গ্রুপে কেন? তাহলে নিশ্চয়ই কপিরাইট ভায়োলেশন হচ্ছে। তখন ওই বট এটাকে নেগেটিভ হিসেবে নেয়, গ্রুপ ডিজেবল করে দেয়। যেহেতু এটা বট, তাই তাকে বোঝানো সম্ভবও না যে এটা পুরোনো জিনিস বিক্রির গ্রুপ। এখানে এসব আসতেই পারে।’