চমকে দিন বিয়ের উপহারে
চরিত্র চারটা। বিয়ের কনে তানি, বর আবির, তানির বান্ধবী উল্কা আর আবিরের বন্ধু জীবন। তানির বিয়েতে চমকে দিতে জার্মানি থেকে উপস্থিত ছোটবেলার বান্ধবী উল্কা। দুই দিন আগেই এসেছিলেন ঢাকায়। তারপর অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি মগবাজার কাজি অফিসে! তানি তো অবাক। উল্কার উপস্থিতিই তানির বিয়ের সবচেয়ে বড় উপহার। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে গেলেন বুফে খেতে। সন্ধ্যায় একটা রুফটপ রেস্টুরেন্টে হলো ফটোশুট। আবিরের বন্ধু জীবন ছবি তুলে দিয়েছেন। এই ফটোশুট জীবনের পক্ষ থেকে তানি-আবিরের বিয়ের উপহার। কয়েক দিন পর তানিদের ঠিকানায় এল একটা পার্সেল। র্যাপিং পেপার আলগা করতেই বেরিয়ে এল ফটোফ্রেমে আটকানো ছবি। তানি আর আবিরের বিয়ের ছবি, স্কেচ। উল্কাই এঁকেছেন। বিয়েতে তোলা হয়েছিল, সেটাই ফিরে যাওয়ার আগে এঁকে, বাঁধাই করে দিয়েছেন ড্রয়িংরুমে টাঙিয়ে রাখার জন্য।
বিয়ের পোশাক, সাজ
খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে বিয়েতে কী উপহার দেবেন, সেটাও একটা ভাবনা। উপহার নির্ভর করে যাঁর বিয়ে, তাঁর সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা, তাঁর কী প্রয়োজন আর আপনার সাধ্য—এই তিন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরের ওপর।
এক. বিয়েতে এমন কিছু উপহার দিন, যা বিয়ের দিনকে করে রাখবে বিশেষ, স্মৃতিময়। যেমন লেখক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর কন্যা শীলার বিয়েতে সস্ত্রীক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে হাজির করেছিলেন। সুনীল ছিলেন শীলার সবচেয়ে প্রিয় লেখক। বিয়ের দিন যখন মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক এসে হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেমন আছ মা?’ শীলা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। খুশিতে অঝোরে কাঁদছিলেন। আর সেটাই দূর থেকে তাকিয়ে দেখছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। আপনি আপনার প্রিয়জনের বিয়েতে তাঁর কোনো প্রিয়জন, প্রিয় শিক্ষক বা প্রিয় সংগীত তারকাকে হাজির করাতে পারেন। কেননা, কিছু মুহূর্ত টাকা দিয়ে কেনা যায় না, সেগুলো হয় অমূল্য।
দুই. আপনি কাস্টমাইজড কিছু উপহার দিতে পারেন। নানা শৌখিন জিনিস, ডোরম্যাট, কনের নাম লেখা জামদানি ওড়না, ছবি প্রিন্ট করা কফি সেট, কাস্টমাইজড শাড়ি-পাঞ্জাবি তো আছেই। এ ছাড়া আপনি যদি আঁকতে পারেন, তাহলে নিজেই একটা কিছু এঁকে দিতে পারেন। বিয়ের আসরে উপস্থিত হতে পারেন বড়সড় একটা কেক হাতে। ফুলের তোড়া বা ড্রয়িংরুমে রাখার জন্য দিতে পারেন চমৎকার একটা বনসাই। দিতে পারেন শতরঞ্জি, পাটের তৈরি নানা কিছু, রিকশা প্রিন্ট, মাটি বা কাঁসার ডিনার সেট।
এই তালিকায় যোগ করতে পারেন সুগন্ধি মোমবাতি, যেকোনো জুয়েলারি, রুপার গয়না, গয়নার বাক্স, সিরামিক জুয়েলারি ট্রে, বিয়ের থিমের সঙ্গে যায়, এ রকম ব্রাইডাল সাবস্ক্রিপশন বক্স, ঘড়ি, শার্ট, স্যুটের কাপড়। দিতে পারেন পারফিউম, ফটোফ্রেম, ঝাড়বাতি, কার্পেট, সংসারের জিনিস ইত্যাদি। দুজনকে একই থিম বা একই রকম নকশা করা ঘড়ি, চাদর বা ব্যাগও কিনে দিতে পারেন। হয়তো বর বা কনে বা দুজনেরই ছবি তোলার শখ। বিয়েতে বন্ধুরা মিলে তাঁকে ডিএসএলআর ক্যামেরা বা ফোনও উপহার দিতে পারেন।
তিন. উপহার দিতে পারেন বিশেষ কোনো প্যাকেজ। বিয়েতে ছবি তোলার আয়োজন, গানের আয়োজন, মেহেদি বা গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের শাড়ি, সানগ্লাস, হানিমুনের প্যাকেজ, পুরোটা না পারলে হোটেল খরচ, এয়ার টিকিট বা কাছেপিঠে একটা ট্রিপ। দিতে পারেন বই, গাছ, কুকুর, বিড়াল, পাখি, অ্যাকুয়ারিয়াম বা নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রিপশন। কয়েকজন মিলে সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় বড় কিছুও দিতে পারেন। এই যেমন এলইডি টেলিভিশন, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, আলমারি, শোকেস, বুকশেলফ, সোনার গয়না, হেলমেট—এমনকি বাইকও দিতে পারেন। ওয়ালটন হোম অ্যান্ড কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সের চিফ বিজনেস অফিসার মোস্তফা কামাল জানান, তাঁদের ১১ হাজার ৮৫০ থেকে শুরু করে ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের ওয়াশিং মেশিন আছে। বিয়ের উপহার পাওয়া ওয়ালটনের ওয়াশিং মেশিনের একটা সুবিধা হলো, ব্যবহারের সময় যদি কোনো সমস্যা হয়েও থাকে, সেটা সারিয়ে নেওয়া যাবে দেশের ৮০টি সার্ভিস সেন্টারের যেকোনো জায়গা থেকে, দ্রুততম সময়ে, কোনো খরচ ছাড়াই।
বাজারে নানা দোকান ঘুরেও যদি পছন্দসই জিনিসটি বাছাইয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তাহলে গিফট কার্ড বা ভাউচার দিতে পারেন। এমনকি টাকা, চেক বা প্রাইজবন্ডও হতে পারে বিয়ের উপহার!
মনে রাখবেন
১. কাছের মানুষ হলে হবু বর বা বউকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন, কী উপহার পেলে সুবিধা।
২. টাকা দিলে চকচকে নোট দেওয়ার চেষ্টা করবেন, সুন্দর খামে ভরে।
৩. বর বা কনের উপহারের সঙ্গে একটা চিঠিও জুড়ে দিতে পারেন। ছোট চিরকুটে কোনো সুন্দর স্মৃতির সঙ্গে শুভেচ্ছাবার্তা কিছুও লিখে দিতে পারেন। সেটা উপহারটাকে দেবে ভিন্নমাত্রা।
৪. বিয়েতে যে উপহারই দেন না কেন, সুন্দর করে র্যাপিং পেপারে মুড়িয়ে, ওপরে একটা ফুল দিয়ে চমৎকার একটা প্যাকেটে
করে দিন।