পলিটেকনিকে পড়েছেন, পেয়েছেন জাপানের মেক্সট স্কলারশিপ
বৃত্তি নিয়ে যাঁরা ভিনদেশে পড়তে যান, তাঁদের অনেকেরই একটা নিজস্ব সংগ্রামের গল্প থাকে, যে গল্প হয়তো অন্যের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। এমনই একজনের কথা শুনেছেন ফুয়াদ পাবলো
ছেলেবেলাতেই রাশেদুল ইসলাম বুঝে গিয়েছিলেন, জীবনে কোনো অর্জনই সহজে আসে না। নড়াইলে জন্ম। তবে বাবার চাকরির সুবাদে বেশ কয়েকবার ঠিকানা আর স্কুল বদলাতে হয়েছে। এসএসসির পর ভর্তি হন লোহাগড়া আদর্শ কলেজে। তবে প্রযুক্তির প্রতি একটা আগ্রহ ছিল সব সময়।
একদিন হুট করে খোঁজ পান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। প্রস্তুতি না থাকলেও পরীক্ষা দিলেন। গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খাদ্য প্রকৌশল বিষয়ে সুযোগও পেয়ে গেলেন। তখনো আদতে এই বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেন, এটি কেবল খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণই নয়, বরং বিজ্ঞানের এক বিস্তৃত ক্ষেত্র, যেখানে পুষ্টি, খাদ্যনিরাপত্তা ও গবেষণার বিশাল সুযোগ রয়েছে।
চার বছরের ডিপ্লোমা প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন রাশেদুল ইসলাম। স্কিলস অ্যান্ড ট্রেইনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের অধীন বিভিন্ন সনদ অর্জন করেন। মাছের আঁশ থেকে কোলাজেন সংগ্রহ করে বিশেষ ধরনের আঠা তৈরির একটি প্রকল্পে যুক্ত হয়ে তাঁর গবেষণার আগ্রহ বাড়তে থাকে।
ডিপ্লোমা শেষ হওয়ার পর রূঢ় এক বাস্তবতার মুখোমুখি হন। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত। খাদ্য প্রকৌশল বিষয়ে সুযোগ আরও কম। পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের পছন্দের গন্তব্য ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) খাদ্য প্রকৌশল না থাকায় একরকম হতাশ হয়ে পড়েন রাশেদ। এই সময়ে পাশে পান প্রিয় শিক্ষক আশরাফুজ্জামানকে। তিনি পরামর্শ দেন পুরকৌশলে পড়তে। ছাত্রকে বোঝান, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি গুরুত্বপূর্ণ ও কাজের সুযোগও বেশি।
শিক্ষকের কথা শুনে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পুরকৌশল বিভাগে ভর্তি হন রাশেদুল ইসলাম। সেখানে ভালো ফল করতে থাকেন। ক্লাসের বাইরেও যুক্ত হন নানা কাজে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা, দেশি-বিদেশি জার্নালে গবেষণা প্রকাশ রাশেদকে আরও সাহসী করে।
এরপর ট্রিপল আলফা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছাটা তত দিনে আরও জোরালো হয়েছে। জাপানের নাগাওকা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পুরকৌশলে স্নাতকোত্তরের ভালো সুযোগ আছে, খবরটা তখনই পান রাশেদ। আবেদন করে সুযোগ পেয়ে যান। যাত্রাটা আরও সহজ করেছে জাপানের সরকারি মেক্সট বৃত্তি।
রাশেদ বলেন, ‘প্রথমে উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজতে হয়েছে, গবেষণার আগ্রহ অনুযায়ী অধ্যাপক বাছাই করে যোগাযোগ করতে হয়েছে। অধ্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন, তারপর গবেষণা প্রস্তাব সাজিয়েছি। মৌখিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধাপের মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। চাকরির ব্যস্ততার মধ্যে এই পুরো প্রক্রিয়া সামলানো সহজ ছিল না।’
ভাষাগত চ্যালেঞ্জও ছিল। ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা আগেই ছিল। জাপানি ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা যখন সামনে এল, রাশেদুল ইসলাম পিছপা হননি। নিয়মিত ভাষা চর্চা করে গেছেন।