নকশা মেনে ভবন নির্মাণ কেন জরুরি
ভবন নির্মাণের আগে অবশ্যই নকশার ছাড়পত্র নিতে হবে। থাকতে হবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি। অনেক সময় ব্যক্তিমালিকানায় ভবন নির্মাণ করতে এসব আইন পাশ কাটিয়ে যেতে চান অনেকে। অনুমোদন না থাকলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বাড়ির কাজ, হতে পারে লাখ লাখ টাকা জরিমানা। তাই ভবন তৈরির আগে নকশার অনুমোদন জরুরি
রাজধানীর জোয়ারসাহারা এলাকায় নকশা অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছিল একটি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ক্রেতাদের কাছে ফ্ল্যাটও বিক্রি করেছিল তারা। অভিযোগ পেয়ে চলতি বছরের এপ্রিলে সেখানে যান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাঁরা।
আল-মুসলিম অ্যাপারেলস লিমিটেড সাভারে দুটি বেজমেন্টসহ চারতলা একটি ভবন নির্মাণ করছিল। ভবনটি নির্মাণে রাজউক থেকে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। গত বছরের মে মাসে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণের দায়ে মালিকপক্ষকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
২০২৩ সালের মার্চে সাভারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের নির্মাণাধীন ভবনের ১০ তলার ছাদ ধসে অন্তত ১৬ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের সবাই নির্মাণশ্রমিক। এই ভবন নির্মাণে রাজউক বা স্থাপত্য অধিদপ্তর—কারও কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। পরমাণু শক্তি কমিশন নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে নকশা তৈরি করে ভবনটি নির্মাণ করছিল।
অনুমোদনহীন ভবনের নিরাপত্তাঝুঁকি কতটা, বোঝার জন্য শেষের উদাহরণটাই যথেষ্ট। আর অনুমোদন ছাড়া ভবন করলে কেমন শাস্তি হতে পারে, তার জন্য প্রথম দুই ঘটনা শিক্ষণীয় হতে পারে। মাঝেমধ্যেই ভবনের অনুমোদনহীন অংশ ভেঙে দেয় রাজউক। যদিও অনুমোদন না নেওয়া ভবনের অনুমোদন পরে নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে তার জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সময়ও লাগে বেশি। সোজা কথা, আগের কাজ পরে করতে গেলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
১৯৯৬ সালে দেশে প্রথম ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৮ সালে এটি হালনাগাদ করা হয়। এটি ‘ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা’ নামে পরিচিত। ভবন নির্মাণের অনুমোদন না নেওয়াটা ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইন ও ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালার লঙ্ঘন। অনুমোদনহীন ভবন করলে ১৯৫২ সালের ইমরাত নির্মাণ আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তির সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অন্যূন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
বিধিমালা অনুযায়ী, ভবনের নকশা অনুমোদন ও বসবাস উপযোগিতার অনুমোদন সর্বনিম্ন দুটি থেকে সর্বোচ্চ চারটি পর্যায়ে হবে। সেগুলো হচ্ছে—ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র, বিশেষ ধরনের প্রকল্পের জন্য বিশেষ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন এবং বসবাস ও ব্যবহার সনদ।
নির্মাণ অনুমোদন বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, ভবন নির্মাণ করতে বা বিদ্যমান অবকাঠামো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংযোজন করতে হলে আইন অনুযায়ী নির্মাণ অনুমোদনপত্র গ্রহণ করতে হবে। নকশায় যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন কারিগরি ব্যক্তিদের স্বাক্ষর এবং তাঁদের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নকশা ও দলিলের নির্ধারিত স্থানে উল্লেখ করতে হবে।
নির্মাণ অনুমোদনের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের অনুলিপি, মাশুল পরিশোধের রসিদ, আবেদনকারীর বৈধ মালিকানার প্রমাণস্বরূপ দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি, মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদন, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ক্ষেত্রে ফ্লোর অনুযায়ী আবাস-ইউনিটের সর্বমোট সংখ্যা, প্লটের ক্ষেত্রফল, ভূমি আচ্ছাদন, সেটব্যাক স্থানের পরিমাপ এবং মোট তলার সংখ্যা ইত্যাদি জমা দিতে হয়।
জানতে চাইলে ঐশী প্রপার্টিজের স্বত্বাধিকারী আইয়ূব আলী বলেন, আইন অনুযায়ী ভবনে নির্মাণে নকশা অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন নির্মাণে অনেক সময় নকশার অনুমোদন নেওয়া হয় না। আর অনুমোদন নিলেও নকশায় ব্যত্যয় ঘটানো হয়। ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদন না নেওয়া কিংবা অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় করায় আবাসন কোম্পানির মালিকদের জেল–জরিমানাও হয়েছে।
আইয়ূব আলী বলেন, নকশার অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণ করা উচিত নয়। কারণ, প্রকৌশলীরা ভবনের নকশা প্রণয়ন করেন। সেই নকশা আবার আইনকানুন অনুযায়ী যাচাই–বাছাই করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে সেটি দূর হয়।