ধোয়ার পর কাপড়ের ক্ষতি হবে না, যদি মেনে চলেন এসব উপায়

জামাকাপড় কেনার সময় আমরা কত সচেতনই না থাকি! দশটা দোকান ঘুরে একটা জামা হয়তো পছন্দ হয়। কাপড়টা ঠিকঠাক গায়ে লাগছে কি না, পরলে মানাচ্ছে কি না, কত কিছু ভেবে তারপরই না কেনা। কিন্তু কেমন লাগে যখন শখের পোশাকটা ব্যবহার করে কয়েকবার ধোয়ার পর খাটো হয়ে যায়? ধরা যাক, আপনি একটা ফুলহাতা কামিজ কিনেছেন। কয়েকবার ধোয়ার পর দেখা গেল সেই কামিজের হাতা উঠে যাচ্ছে কবজির প্রায় দুই ইঞ্চি ওপরে। কখনো দেখা যাচ্ছে, ট্রায়াল দিয়ে কেনা পোশাক ধোয়ার পর এত আঁটসাঁট হয়ে গেছে যে পরতেই কষ্ট হচ্ছে। এমন কেন হয়? কী করেই–বা কাপড়ের এমন ছোট হয়ে যাওয়া ঠেকানো যায়? আজ থাকছে কাপড় ছোট হয়ে যাওয়া বা সংকোচন রোধ করার কিছু উপায়।

তাপ লাগলেই কাপড় সংকুচিত হয় বা কুঁচকে যায়ছবি: প্রথম আলো

কাপড় সঠিক নিয়মে ধোয়া

ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করেন? তাহলে কাপড় ধোয়ার সময় ওয়াশিং মেশিনের তাপমাত্রা ‘কোল্ড’–এ সেট করুন। কিছু ডিটারজেন্ট পাউডার শুধু ঠান্ডা পানিতে কাজ করার জন্যই বিশেষভাবে তৈরি। তাই ঠান্ডা পানিতেই আপনার কাপড় ভালোভাবে পরিষ্কার হবে। বোনাস হিসেবে পানি গরম করার কষ্টটুকু থেকেও মুক্তি মিলবে, পানি গরম করতে যে গ্যাস বা বিদ্যুৎ প্রয়োজন হতো, সেটিও আর লাগবে না। ফলে কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে।

কাপড় ঠান্ডা পানি দিয়ে ধোয়া

কাপড়ের আকার–আকৃতি ঠিক রাখতে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার সময় ‘ডেলিকেট’ সাইকেল সিলেক্ট করুন। এই সেটিংটি নির্বাচন করলে কাপড়গুলো কম আলোড়িত হয়। পানিনিষ্কাশনের জন্য মেশিনটি ধীরগতিতে চলে এবং অল্প সময়ের জন্য ঘোরে। ফলে কাপড়গুলোর প্রকৃত আকার ও আকৃতি থাকে অক্ষুণ্ন। কোনো কোনো ওয়াশিং মেশিন বাই ডিফল্ট ‘ওয়ার্ম ওয়াশ’ মোডে সেট হয়ে থাকে। এটি বদলে ‘কোল্ড ওয়াশ’ অপশনে সেট করে নিতে হবে।

সুতি, লিনেন ও সিল্ক মেশিনে ধোবেন না

সুতি, সিল্ক, লিনেন ইত্যাদি কাপড় ধুতে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করবেন না। এ ধরনের কাপড় হাতে ধোয়া উত্তম। পরিমাণমতো ডিটারজেন্ট পাউডার ও পানি নিয়ে কাপড়গুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এতে সময় একটু বেশি লাগবে, কষ্টও হবে বটে। কিন্তু এভাবে ধুলে কাপড়ের আকার–আকৃতি ঠিক থাকবে।

পশম ও কাশ্মীরি কাপড় ড্রাই ক্লিন করুন

সাধারণত পোশাকে সংযুক্ত ট্যাগেই লেখা থাকে সেটি কী ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি। আপনার পোশাক যদি কাশ্মীরি বা পশম–জাতীয় উপাদানে তৈরি হয়, তাহলে সঠিকভাবে ধোয়ার জন্য অবশ্যই ড্রাই ক্লিন করান। প্রাণিজ তন্তু থেকে তৈরি কাপড় টানাহেঁচড়া করলে সংকুচিত হয়ে যায়। তাই এ ধরনের কাপড় ধোয়ার জন্য কিছু টাকাপয়সা খরচ করে বাইরে ড্রাই ক্লিন করানোই ভালো।

আরও পড়ুন

কাপড় ভালোভাবে শুকান

ওয়াশিং মেশিনের ড্রায়ারে তাপমাত্রা রাখুন সর্বনিম্ন অবস্থায়। কম তাপ মানেই কম সংকোচন। সেটিংটি বদলাতে ভুলে গেলে কিংবা তাপমাত্রা মাঝারি বা খুব বেশিতে সেট করলে জামাকাপড় কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিছু ওয়াশিং মেশিনে ‘এয়ার ড্রায়ার’ বলে একটা সুবিধা থাকে। এই সেটিংয়ে তাপ ছাড়াই কাপড় শুকায়। এতে সময় একটু বেশি লাগতে পারে, তাই শুধু অল্প কাপড়ের বেলায় এয়ার ড্রায়ার বেছে নিতে পারেন।

ধোয়ার পর শুকানোর জন্য কাপড়গুলো বাইরে নেড়ে দিন, কাপড় কুঁচকে যাওয়া রোধে এর থেকে ভালো উপায় কমই আছে।
মডেল : তন্বী। ছবি: প্রথম আলো

স্যাঁতসেঁতে থাকতে থাকতে ড্রায়ার থেকে কাপড় বের করে ফেলুন

ওয়াশিং মেশিনের ড্রায়ারে ১৫-২০ মিনিট রাখলে কাপড় দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। তাই কাপড়গুলো ভেজা থাকতে থাকতেই বের করে ফেলতে হবে। এতে কাপড় অতিরিক্ত শুকিয়ে যাবে না। আর এতে কাপড় কুঁচকেও যাবে না। ওয়াশিং মেশিন থেকে বের করার পর কাপড়গুলো ড্রায়িং র‍্যাক কিংবা সমতলে রেখে শুকাতে হবে।

কাপড় বাতাসে শুকান

ধোয়ার পর শুকানোর জন্য কাপড়গুলো বাইরে নেড়ে দিন। কাপড় কুঁচকে যাওয়া রোধে এর থেকে ভালো উপায় কমই আছে।

পোশাকের ট্যাগের নির্দেশনা অনুসরণ করুন

কাপড়ের ধরন অনুযায়ী পোশাকের গায়ে ট্যাগ লাগানো থাকে। ট্যাগে থাকে পোশাকটি ধোয়া এবং ইস্তিরি করার কিছু নিয়ম। এসব নিয়ম মেনে চললে কাপড় সহজে নষ্ট হয় না।

আরও পড়ুন

ধোয়ার সময় ধরনভেদে কাপড় আলাদা করে রাখুন

কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলে সুতি, লিনেন, সিল্ক ইত্যাদি ধরনভেদে কাপড় আলাদা করুন। রঙের ওপর ভিত্তি করেও কাপড়গুলো আলাদা ভাগে ভাগ করে রাখতে পারেন। তারপর একেক ভাগ একেকবারে মেশিনে ধুতে দিন।

শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে ড্রায়ার থেকে বের করে ফেলুন

এতে কাপড় কুঁচকে যাবে না। ড্রায়ারে কাপড়গুলো আয়রন কিংবা পারমানেন্ট প্রেস করার প্রয়োজনও হবে না। আর এতে কাপড় আরও কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে যাবে। সব সময় কাপড় শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে মেশিন থেকে বের করা সম্ভব না-ও হতে পারে। এমন অবস্থায় ড্রায়ারে একটি ভেজা ন্যাকড়া রাখুন। ন্যাকড়াটি ভেজা থাকার কারণে ড্রায়ারে বাষ্পের সৃষ্টি হবে। এই বাষ্পের কারণে কাপড়ের কুঞ্চন সহজে দূর হবে।

কাপড় কেন সংকুচিত হয়?

তাপ লাগলেই কাপড় সংকুচিত হয় বা কুঁচকে যায়। গরম পানি এবং গরম বাতাসে কাপড়ের তন্তুগুলো সংকুচিত হয়। ধোয়া ও শুকানোর সময় টানাহেঁচড়ার ফলেও কাপড়ের সংকোচন ঘটে।

কিছু নিয়ম মানলে কুঁচকে যাওয়া কাপড় আবার আগের মতো স্বাভাবিক করা সম্ভব
ছবি: প্রথম আলো

কাপড় বাতাসে শুকালে কি কুঁচকে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়?

হ্যাঁ, রক্ষা পায়। কারণ, এই পদ্ধতিতে কাপড় শুকাতে তাপ প্রয়োগ করা হয় না। হ্যাঁ, সূর্যের তাপ তো থাকেই, তবে তা কাপড়ের জন্য সহনীয়। তাই ড্রায়ারে শুকাতে চাইলে ‘এয়ার ড্রাইং’ অপশন বেছে নিন অথবা প্রচলিত নিয়মে বারান্দায় বা ছাদে শুকানোর জন্য কাপড় নেড়ে দিন।

কুঁচকে যাওয়া কাপড় কি আবার আগের মতো স্বাভাবিক করা সম্ভব?

কাপড়ের সংকোচন সব সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সুতি ও সিনথেটিক কাপড়ের সংকোচন দূর করতে কুসুম গরম পানিতে পূর্ণ একটি সিংকে এক টেবিল চামচ বেবি শ্যাম্পু অথবা হেয়ার কন্ডিশনার মেশান। কাপড়টি ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর টেনে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন।

সূত্র: উইকিহাউ

আরও পড়ুন