৫ মাস ধরে আগের ছেলেটি আমাকে ভয় দেখাচ্ছে
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: পাঁচ বছর আগে একটি ছেলের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। তাকে তখন আমি বিয়েও করতে চেয়েছিলাম। বাড়ির লোকেরা পরে জানায়, ছেলেটি নেশা করে। নানাভাবে বোঝানোর পর ছেলেটির কাছ থেকে আমি দূরে সরে আসি। দুই বছর পর ছেলেটি বিয়ে করে, আর আমারও বিয়ে হয় পরিবারের পছন্দের ছেলের সঙ্গে। এত দিন ভালোই চলছিল। তবে এখন একটা নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছেলেটি রাজনীতি করে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৭ আগস্ট হঠাৎ সে আমাকে ফোন করে। আমাকে আবার তার কাছে ফিরে যেতে বলে। তার বউ নাকি ভালো নয়, এমন নানা কথা বলে। আমার বিয়ের পর থেকে আমি তার সঙ্গে কখনো কথা বলি না। এত দিন পর আমার স্বামীকে পুরোনো কথা বলে দেবে বলেও সে ভয় দেখাচ্ছে। আমার কি একটা জিডি করা উচিত? ঠিক বুঝতে পারছি না। কারও কাছে বলতেও পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনার ও আপনার প্রাক্তন প্রেমিক দুজনেরই অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু প্রাক্তন প্রেমিক পুরোনো সম্পর্কটি আবার চালু করার জন্য আপনাকে বাধ্য করতে চাচ্ছে। সেই সঙ্গে সে আপনাকে হুমকি প্রদর্শন করছে এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
আপনি যেহেতু হুমকির শিকার হচ্ছেন, তাই অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। যদি তদন্ত করে দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়। ১০৭ ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড সম্পাদনের জন্য বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করতে পারেন। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। ১০৭ ধারায় আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এ মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।