আপনাকে কেউ পছন্দ করে না?

সময় এখন নিজেকে ভালোবাসার। ব্যস্ততা, নগরায়ণ আর ছুটে চলার এ যুগে এখন আমাদের প্রিয় গানের লাইন—‘একা বেঁচে থাকতে শেখো প্রিয়’। কিন্তু চাইলেই কি মানুষ একা হতে পারে? পারে না। পারে না বলেই এখনো আমরা বিকেলের আড্ডায় মানুষ খুঁজি, এখনো আমরা সুযোগ পেলেই আড্ডায় মানুষের সঙ্গ খুঁজি, স্মার্টফোনে হুট করে আসা মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দ এখনো আমাদের কাছে মধুর।

তবে সবার আবার এই ভাগ্য হয় না। আমি বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁরা একা। ভয়ংকর রকমের একা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে তাঁদের কোনো বন্ধু নেই, কেউ তাঁদের পছন্দও করে না। মানুষ অনেক কারণেই পছন্দ না করতে পারে। কারণগুলো সব সময়ই যে যৌক্তিক, তা–ও নয়। যেমন অনেক সময়ই আত্মবিশ্বাসী থাকা বা সফল হতে থাকাটাও আপনাকে মানুষের কাছে অপ্রিয় পাত্রে পরিণত করতে পারে। আবার অনেক সময় সত্য কথা বলা বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণেও আপনার কাছের লোকজন আপনার ওপর বিরক্ত হতে পারে।

এসব ক্ষেত্রে আপনার কিছু করার নেই, কিছু করার প্রয়োজনও নেই। আপনার সফলতা, আপনার ন্যায়পরায়ণতা যাঁদের কাছে আপনাকে অপ্রিয় করে তোলে, তাঁদের কাছে নিজেকে প্রিয় করে তোলার কোনো প্রয়োজনও নেই।

আপনাকে পছন্দ না করার কারণগুলো আপনার ভেতরেই নেই তো?
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

কিন্তু আশপাশের সব মানুষই যদি আপনাকে অপছন্দ করে বা আপনার সঙ্গ এড়িয়ে চলতে চায়, তখন মানুষের থেকে চোখটা নিজের দিকে ফেরাতে হবে। খেয়াল করে দেখতে হবে, যে কারণগুলো থাকলে মানুষ মানুষকে পছন্দ করে না, সেই কারণগুলো আপনার মধ্যেই আছে কি না।

গোমড়া মুখে থাকেন?


গোমড়ামুখোদের কেউ পছন্দ করে না। আপনি যদি সব সময়ই মানুষের সঙ্গে গম্ভীরভাবে কথা বলেন, তবে বেশির ভাগ মানুষই আপনার সঙ্গে সহজ হতে পারবে না। হাসিমুখ যেমন আপনাকে আরেকজনের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে, গোমড়া মুখ তেমনি মানুষের কাছে আপনাকে ভীতিকর, নেতিবাচক আর জটিল একটা চরিত্র হিসেবে তুলে ধরে। সব সময় সবকিছু সিরিয়াসভাবে নিতেই হবে? জীবনকে একটু সহজভাবে দেখুন না। তাই বলে সব সময়ই আপনাকে দাঁত বের করে রাখতে হবে, তা কিন্তু নয়। তবে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় একটু মুচকি হাসি তো দেওয়াই যায়, নাকি? আপনার একটা হাসি হতে পারে আরেকজনের সুন্দর দিনের কারণ।

জীবনকে একটু সহজভাবে দেখুন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

নিজেকে বড় মনে করা


সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগা মানুষের সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী, অহংকারী মানুষদের অন্যরা এড়িয়ে চলতে চায়। নিজেকে অন্যের চোখে বড় করে দেখাতে চাওয়াটাও মানুষের কাছে আপনাকে বিরক্তিকর করে তুলতে পারে। নিজের সাফল্য আর অর্জনের কথা সুন্দরভাবে সবাইকে জানানো যেতেই পারে, কিন্তু নিজের অর্জনকে বড় করার জন্য অন্যকে খোঁচা মারা বা নেতিবাচক মন্তব্য করার অভ্যাস আপনাকে সবার থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

ভিন্নমতে ভ্রু কুঁচকে যায়?


আরেকজনকে ছোট করে কথা বলা, সামনের মানুষটার পছন্দ নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করা আরও একটা লাল পতাকা (রেড ফ্ল্যাগ)। আপনার মুখের কথায় যদি সামনে মানুষটা আহত হয়, তাহলে নাহয় না-ই বললেন। একটা জিনিস আপনি পছন্দ করেন না বলে আর কেউ ওটা পছন্দ করতে পারবে না, এমন মানসিকতা দিন শেষে আপনাকেই সবার কাছে অপ্রিয় করে তুলতে পারে। নিজের ভেতরে বৈচিত্র্য আর ভিন্নতাকে আমন্ত্রণ জানান, ভিন্নমতকে সম্মান দিন। নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ান।

সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আগে নিজের কাঠগড়ায় নিজেই দাঁড়ান, প্রশ্ন করুন, আপনি নিজে কি নিজেকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতেন?
ছবি: প্রথম আলো

আপনি কি কেবল বলেই যান, শুনতে চান না?


সব সময়ই শুধু নিজের কথা বলে যাওয়া এবং আরেকজনের কথা না শোনার অভ্যাসও আপনাকে ধীরে ধীরে একা করে ফেলতে পারে। কথা বলতে পারা খুব ভালো একটা গুণ। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, ভালো বক্তার পাশাপাশি ভালো শ্রোতা হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। মাঝেমধ্যে ভালো বক্তা হওয়ার চেয়ে ভালো শ্রোতা হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেমন আপনার কথা অন্যকে বলতে পারলে খুশি হন, অন্যদেরও কি আপনাকে গল্প শোনানোর ইচ্ছা করতে পারে না? অন্যরাও চায় জীবনের নানা মুহূর্ত, মতামত আপনার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে। কাজেই বলার পাশাপাশি শোনার অভ্যাসটাও গড়ুন। দেখবেন, আপনাকে অনেকেই পছন্দ করতে শুরু করেছে।

হিউমার হলো লবণের মতো


হাসি–ঠাট্টার সময় সীমানা অতিক্রম করার দিকেও আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। হিউমার জিনিসটা আসলে লবণের মতো, ঠিকঠাক দিতে পারলে যেমন জমে ক্ষীর হয়ে যাবে, আপনাকে আড্ডার মধ্যমণিতে পরিণত করবে, কিন্তু বেশি হয়ে গেলে সেটাই আবার আপনাকে সবার কাছে অপ্রিয় করে তুলতে যথেষ্ট। কাজেই মজা করার সময় অবশ্যই একটা সীমানা নির্ধারণ করে নেবেন। মানুষের অতি ব্যক্তিগত তথ্য ও সংবেদনশীলতাকে মাথায় রেখে তারপর মজা করতে যাবেন। আবার যে ব্যক্তিকে নিয়ে মজা করছেন, তাঁর হিউমার গ্রহণ করার মানসিকতা কেমন, সেটাও বিবেচ্য।
অপছন্দ করার হাজারো কারণের ভেতর এগুলো খুবই সাধারণ, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

এগুলো শুধু আপনাকে মানুষের ঘৃণার হাত থেকেই বাঁচাবে না, বরং আপনার ব্যক্তিত্বকেও আরও শোভনীয় করে তুলে ধরবে সবার কাছে। কাজেই আয়নার সামনে একবার সাহস করে দাঁড়িয়েই পড়ুন। সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আগে নিজের কাঠগড়ায় নিজেই দাঁড়ান, প্রশ্ন করুন, আপনি নিজে কি নিজেকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতেন?

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন