ভাইবোনের সম্পর্কে ভাঙন ধরলে ঠিক করবেন যেভাবে
পথের পাঁচালীর অপু-দুর্গার সম্পর্ক আমাদের হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। একই পরিবারের একাধিক শিশু একই সঙ্গে হেসেখেলে বেড়ে ওঠার চিত্র আমরা রোজকার জীবনেও দেখি। টুকটাক ঝগড়া কিংবা মান-অভিমান কিন্তু এই ভালোবাসায় খাদ সৃষ্টি করতে পারে না। তবে বড় হওয়ার পর নানা কারণে এই পবিত্র সম্পর্কে ধরতে পারে ফাটল। সম্পর্কচ্ছেদের মতো পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয় কখনো কখনো।
সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টির কারণ যেটিই হোক, দুই তরফ থেকেই তাকে সতেজ করে তোলার প্রয়াস নেওয়া উচিত। তবে সব ক্ষেত্রে যে একই সঙ্গে সবার মধ্যে একই অনুভূতি জন্মাবে, তা কিন্তু নয়। তাই একজন যখন এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সমাধানে হাসিমুখে কথা বলতে এগিয়ে যাবেন, তখন অপরজন যে মুখ ঝামটা দেবেন না, তার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। তা পথেঘাটে, কর্মক্ষেত্রে নানা মানুষের দুর্ব্যবহার তো এমনিতেই সইতে হয়। নিজের ভাই কিংবা বোনের কাছ থেকে অমন এক-আধটু খারাপ ব্যবহার পাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেই না হয় আপনি এগোন। হাজার হোক, একই রক্ত বইছে আপনাদের শরীরে। অতীতের কোনো ঘটনার জের কেন বয়ে নিতে হবে আজীবন?
‘কেন’র উত্তর খুঁজুন
কেন আপনি আপনার ভাই কিংবা বোনের সঙ্গে সম্পর্কটাকে পুনরুদ্ধার করতে চান, প্রথমে নিজের কাছে এ প্রশ্ন করুন। ইতিবাচক নানা উত্তর আপনি নিজের মনের মধ্যেই পাবেন। সব থেকে বড় বিষয় হলো, আপনার মনের কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই তাঁর জন্য ভালোবাসার খানিকটা হলেও রয়ে গেছে। তা ছাড়া ভাইবোনের সম্পর্ক খারাপ হলে বাবা-মায়ের জন্যও সেটা পীড়াদায়ক। মা-বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও নিশ্চয়ই আপনি এমন কাজ করতে চাইবেন না, যা তাঁদের সামনে ঘটলে তাঁরা কষ্ট পেতেন। তাহলেই দেখুন, কেন আপনি ভাইবোনের ঝগড়া মিটিয়ে নিতে চান, তার যুক্তিসংগত কারণ আপনিই খুঁজে পাবেন। এই কারণগুলোকে মনের মধ্যে গুছিয়ে রাখুন। তা ছাড়া আপনার ভাই কিংবা বোনের মনে কেন আপনার প্রতি বিদ্বেষ জন্মেছে, সেটিও ভাবুন। মনে মনে তাঁর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখুন, তাঁর জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন বা কী ভাবতেন। তাঁর কষ্টটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন এবং অবশ্যই এখন থেকে তাঁর প্রতি ভালো আচরণ করুন।
অতীত ভুলে যান
ভাই বা বোনের কাছ থেকে অনেক কারণেই আপনি কষ্ট পেতে পারেন। দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকতে পারে, হতে পারে মতের অমিল, আর্থিক ব্যবধানও থাকতে পারে, সম্পত্তিও হতে পারে বিরোধের কারণ। সংবেদনশীল কোনো বিষয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল? তাঁর কথায় আপনি আঘাত পেয়েছিলেন? তিনি আপনাকে অপমান করেছিলেন? সব ভুলে যান। কেবল মনে রাখুন, তিনি আপনার আপনজন, ভাই বা বোন। তাঁকে আপনি ভালোবাসেন। মন থেকে ক্ষমা করে দিন। বয়সে ছোট হয়ে থাকলেও তাঁর দোষত্রুটি ক্ষমা করে দিন। এতেই কিন্তু আপনি ‘বড়’ হলেন। আর তিনি আপনার বড় হয়ে থাকলে না হয় তাঁকে গুরুজন মেনেই মন থেকে ক্ষমা করে দিন।
কথা বলুন
নিজের মনকে স্থির করার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। সম্ভব হলে একান্তে কথা বলুন। কোনো অবস্থাতেই উত্তেজিত হবেন না। কেন আপনি সম্পর্কের উন্নয়ন চান, কথা বলার সময় তা ভুলে যাবেন না। সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য আপনি যা ভাবছেন, খুলে বলুন। অতীতে আপনার কোনো কথায়, কাজে বা আচরণে তিনি কষ্ট পেয়ে থাকতে পারেন। তাই ক্ষমা চেয়ে নিন, এমনকি আপনি বয়সে বড় হলেও নিজের ‘ইগো’ ধরে রাখবেন না।
শুনুন এবং ভাগ করে নিন মনের আনন্দ
অপরজনের নানা অভিযোগ থাকতে পারে। তাঁর কথা অবশ্যই মন দিয়ে শুনুন। সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করুন সবাই মিলে। বাস্তববাদী হোন। অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বেন না। তবে অতীতের সুন্দর সময়ের কথা স্মরণ করুন। একসঙ্গে জীবনযুদ্ধে শামিল হওয়ার মতো ঘটনা থাকলে সেটিও মনে করুন। আপনার ভাই কিংবা বোনকেও মনে করিয়ে দিন সেসব দিনের কথা। তাঁকে আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যতের আনন্দের সঙ্গী করে নিন। তাঁর কোনো ধরনের সমর্থনের প্রয়োজন হলে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে যান। মনে রাখবেন, রক্তের কাছে সবকিছুর প্রতিদান আশা করতে নেই।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট ও ফোর্বস