আপনিও কি ‘গোস্টিং’-এর শিকার? নাকি আপনি নিজেই ‘গোস্টিং’ করছেন?
‘গোস্টিং’ কী
ধরুন, একজন বন্ধু হুট করেই আপনার জীবন থেকে হাওয়া হয়ে গেলেন। কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। তিনি আপনার ফোন ধরছেন না, খুদে বার্তার উত্তর দিচ্ছেন না বা বার্তা দেখছেনই না, কিংবা আপনি তাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আর খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনটা কিন্তু নয় যে তিনি অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তিনি আদতে কোনো কারণে আর আপনার সঙ্গে যোগাযোগটা রাখতেই চাইছেন না। এমনটা ঘটলে আপনার মন খারাপ হবে, এটাই স্বাভাবিক। দুশ্চিন্তা আর হতাশাও পেয়ে বসতে পারে। আপনি হয়তো পাগলের মতো খুঁজেও বেড়াবেন তাঁকে। এভাবে হুট করে হারিয়ে যাওয়াটাই হলো ‘গোস্টিং’।
অর্থাৎ যে কারও সঙ্গে হঠাৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার নামই ‘গোস্টিং’। কেবল বন্ধুত্ব নয়, যেকোনো সম্পর্কেই ঘটতে পারে এমনটা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেসের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রামানি দুরভাসুলা বলেন, ‘নীরবে, ভূতের মতো করে কারও কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়ার নামই গোস্টিং। যিনি গোস্টিং করেন, তিনি কেন এমনটা করছেন, এর কোনো পূর্বাভাস দেন না, নিজের আচরণের কোনো ব্যাখ্যাও দেন না।’
কেন করা হয় গোস্টিং
অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটা সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হলে কথোপকথন একটা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। কথার এই কঠিন যুদ্ধের চেয়ে নীরবে সরে যাওয়া কারও কারও জন্য সহজ। কেউ আবার মনে করেন, সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার কথা বলতে গেলে আবেগের কারণে তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকতে সক্ষম না-ও হতে পারেন। এর চেয়ে কিছু না বলে সব শেষ করে দেওয়াই ভালো।
আসলেই কি ভালো
একজন সুবিবেচক মানুষ কারও সঙ্গে গোস্টিং করেন না। যাঁর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটছে, তাঁর মনের ওপর ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সারাটা জীবনই এই আঘাতের চিহ্ন থেকে যেতে পারে তাঁর মনে। তাই কোনো সম্পর্ক নিয়ে আপনি অশান্তিতে ভুগতে থাকলে অপর পক্ষের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করুন। ঠান্ডা মাথার আলোচনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ হয়, সম্পর্কের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। সম্পর্ক ভাঙার চেয়ে তা জুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, আর ভাঙলেও তা হয় ভদ্রোচিত উপায়ে। কেবল অল্প কিছু ক্ষেত্রে গোস্টিং একটা ভালো সমাধান। ধরা যাক, কেউ আপনাকে অশ্লীল বার্তা পাঠাচ্ছে, কিংবা অশ্লীল আচরণ করার চেষ্টা করছে, এ ক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? চাইলে তাকে দুকথা শুনিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু তাতে হয়তো আপনি তাকে বদলাতে পারবেন না। বরং কিছু বলতে গেলে আপনাকে আরও কুরুচিপূর্ণ কথা শুনতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি গোস্টিং করতেই পারেন; অর্থাৎ তাকে কিছুই না বলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে পারেন। কিংবা ধরুন, আপনি এমন কোনো বিষাক্ত সম্পর্কের মধ্যে আছেন, যেখান থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে অপর পক্ষ হিংস্র আচরণ করবে, তখনো কিন্তু তার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়াটাই নিজেকে নিরাপদ রাখার ভালো উপায় হতে পারে।
আপনার সঙ্গে কি কেউ গোস্টিং করছে
এই অল্প কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সব সম্পর্কেই গোস্টিং ভীষণ খারাপ আচরণ। তবে তারপরও কেউ যদি আপনার জীবন থেকে ইচ্ছা করে হারিয়ে যায়, আপনি আর কী করতে পারেন, বলুন? কেন তিনি এমন করলেন, কেন আপনার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটল, কী ছিল আপনার অপরাধ—এসব প্রশ্ন হয়তো আপনাকে কুরে কুরে খাবে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, জেনে নিন এখানে—
তিনবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে না পারলে আর চেষ্টা করবেন না।
চেনাজানা অন্য কারও মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবেন না।
নিজের পরিবার বা কাছের বন্ধুদের কারও সঙ্গে নিজের কষ্টটা ভাগ করে নিতে পারেন, যিনি আপনাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেন, কিন্তু যিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
আপনার জীবনের অন্যান্য সম্পর্কের দিকে মনোযোগী হোন। পরিবারকে সময় দিন। নিজের যত্ন নিন। নতুন বন্ধুও খুঁজতে পারেন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট